দলবেঁধে শিবের মাথায় জল ঢালতে যাচ্ছিলেন ভক্তরা। সেই কানওয়ার যাত্রায় লাঠিচার্জের নির্দেশ দিয়েছিলেন এক অফিসার। ঘটনার মাত্র চার ঘন্টায় মধ্যে তাঁর বদলির নির্দেশ আসে। হাসিমুখে সেই নির্দেশ মেনেও নেন তিনি। কারণ এই ঘটনাই প্রথম নয়, এর আগে অন্তত ৩০বার এমনটা হয়েছে তাঁর সঙ্গে। কিন্তু কেন? কী এমন করেন তিনি যার জন্য বারবার এমন ‘শাস্তি’-র মুখে পড়তে হয়? আসুন শুনে নেওয়া যাক।
হিন্দু হোক বা মুসলিম, কারও অপরাধ বরদাস্ত করেন না। সব সময় সত্যের পথে হাঁটার চেষ্টা করেন। আইন অনুযায়ী একজন পুলিশ অফিসারের দায়িত্ব বা কর্তব্য যেমনটা হওয়া উচিত, তা অক্ষরে অক্ষরে মেনে চলেন তিনি। যার ফল ভুগতে হয় বারবার। ১৩ বছরের চাকরি জীবনে বহু শাস্তি মাথা পেতে নিতে হয়েছে। স্রেফ বদলিই হয়েছেন বার তিরিশেক। তবু কাজের পদ্ধতিতে এতটুকু বদল আনেননি আইপিএস প্রভাকর চৌধুরি।
আরও শুনুন: মন্দিরের দখল নিতে তৈরি মুসলমানরা, কঠোর হাতে কট্টরপন্থীদের দমন খোদ নবাবের
কিছুদিন আগেই ধর্মীয় দলের উপর লাঠিচার্যের নির্দেশ দিয়ে খবরের শিরোনামে উঠে এসেছিল তাঁর নাম। উত্তরপ্রদেশের বরেলির সেই ঘটনায় অবাক হয়েছিলেন গোটা দেশের মানুষ। সাধারণত ‘কানওয়ার যাত্রা’ বা হিন্দু ধর্মের কোনও উৎসবে পুলিশের লাঠিচার্য করার মতো ঘটনা শোনা যায় না। তাও আবার হিন্দুদের উপরই। কিন্তু আইপিএস প্রভাকর ঠিক তেমনটাই করেছিলেন। শ্রাবণমাসে দেশের বিভিন্ন শিবক্ষেত্রে কানওয়ারিদের ভিড় থাকে চোখে পড়ার মতো। এমনি এক কানওয়ার যাত্রাকে কেন্দ্র করে উত্তরপ্রদেশের বরেলিতে হিন্দু-মুসলিম গোল বাধে। পুলিশ সূত্রে জানা যায়, সেদিন বারবার নিষেধ করা সত্ত্বেও মুসলিম অধ্যুষিত এলাকা দিয়ে দল বেঁধে যাওয়ার চেষ্টা করেন হিন্দু ভক্তরা। পুলিশ নিষেধ করায় উলটে তাঁদের উপরই চোটপাট শুরু করেন ভক্তরা। ঘটনাস্থলে ছিলেন আইপিএস প্রভাকর। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে তক্ষনি লাঠিচার্জের নির্দেশ দেন তিনি। কিছুক্ষণের মধ্যে শান্ত হয় এলাকা, কিন্তু এর জেরে বেজায় সমস্যায় পড়েন ওই আইপিএস। মাত্র চার ঘণ্টার মধ্যে অন্যত্র বদলির নির্দেশ আসে তাঁর কাছে।
আরও শুনুন: মোবাইলে চার্জ নেই! লেবু দিয়েই হতে পারে মুশকিল আসান, কীভাবে?
তবে এ কোনও নতুন ঘটনা নয় আইপিএস প্রভাকরের জীবনে। ২০১০ সালে পুলিশের চাকরিতে যোগ দেন তিনি। এর মধ্যেই ৩০বার বদলির নির্দেশ পেয়েছেন। এছাড়া বহুবার বিভাগীয় শাস্তির মুখেও পড়েছেন। কিন্তু তাতে কি! নিজের কাজের ধরণ এতটুকু বদলাতে নারাজ প্রভাকর। আসলে, বরাবরই নিজের কাজে প্রতি এমনই সৎ থাকার চেষ্টা করেন তিনি। মাত্র একবারের চেষ্টাতেই উর্ত্তীর্ণ হয়েছিলেন্সিভিল সার্ভিস পরীক্ষায়। স্কুল-কলেজেও যে রীতিমতো ভাল ছাত্র ছিলেন তা বলাই বাহুল্য। কিন্তু কর্মজীবনে সেই ধারা বজায় রাখতে গিয়ে বহুবার বিপদের মুখে পরেছেন আইপিএস প্রভাকর। উত্তরপ্রেদেশের একাধিক জেলায় বদলি হতে হয়েছে তাঁকে। তবে যেখানেই গিয়েছেন, অপরাধীদের ত্রাস হয়ে উঠেছেন। তাঁর কর্মজীবনের কাহিনি সিনেমার পুলিশ হিরোদের তুলনায় কিছুমাত্র কম নয়। একইসঙ্গে সহ্য করেননি কোনও রাজনৈতিক নেতার দুর্নীতিও। তবে সৎপথে থাকলে তার স্বীকৃতি ঠিক মেলে। সেকথা আইপিএস প্রভাকরের ক্ষেত্রেও সত্যি হয়েছিল। গতবছর সেরা পুলিশ হিসেবে তাঁকে সম্মানিত করেছিলেন খোদ উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী। তাই যতই সমস্যা আসুক, আগামী দিনেও নিজের কাজের প্রতি একইভাবে নিষ্ঠাবান থাকবেন বলেই মনে করেন আইপিএস প্রভাকর।