দুর্গাপুজোর মরশুম। বাজারে আগুন লাগুক, করোনা আসুক, আফগানিস্তানে যুদ্ধ লাগুক, বাঙালিকে এই উৎসবের উল্লাস থেকে দূরে রাখেন, এমন সাধ্য স্বয়ং মা দুর্গারও নেই। মাথার উপরে ঝুলে থাকা ব্যানার বলছে, ‘ধর্ম যার যার, উৎসব সবার’। আর সেই কথাকে শিরোধার্য করে উৎসবের মজা লুটেপুটে নিতে মাঠে নামছি আমরা। কিন্তু সত্যিই কি উৎসব সবার? সত্যিই কি সবাই একইভাবে শামিল এই উৎসবে? লিখলেন অর্পণ গুপ্ত।
পুজোমণ্ডপ হয়ে গেল ক্লোজড ডোর। তা তা থৈ থৈ বাঙালির কাছে আপাতত অল্টারনেটিভ হল হাউজ পার্টি। রেস্তরাঁও আছে। আর মিমারদের হাতে নেতা-মন্ত্রী আর তাঁদের বিচিত্র খেয়াল। একডালিয়ার ভিড়ে ঘামের প্যাচপ্যাচ পেরিয়ে ওই একটা পেডেস্টাল ফ্যানের সামনে পাঞ্জাবি শুকোনোর মজা আপাতত হাইকোর্টের কাগজে মুলতুবি হয়ে গেল। এসবের মাঝে উঁকিঝুঁকি দেওয়ার চেষ্টা করছে লখিমপুর। উত্তরপ্রদেশের এই খেরিতে নাকি প্রতিবাদী কৃষকদের ওপর গাড়ি চালিয়ে দিয়েছে মন্ত্রীর ছেলে। উপমুখ্যমন্ত্রী কেশব মৌর্য আর কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী অজয় মিশ্রের সফরের প্রতিবাদে বিক্ষোভ দেখাচ্ছিলেন কৃষকরা। মোদী সরকারের দ্বিতীয় ইনিংসে এহেন কৃষক আন্দোলন তো নতুন নয়। তবে জ্যান্ত মানুষের ওপর এসইউভি গাড়ি তুলে দেওয়াটা নতুন।
আরও শুনুন: Durga Puja 2021: পুজোর দিন ঘুম ভাঙে বাবার বাজানো ঢাকের আওয়াজে: দিতিপ্রিয়া
যদিও ব্যাপারটা হজম হয়ে যেতে দিন কয়েকই লাগবে। তারপর ওই সপ্তাহ দুয়েক আগে আসামের দারাঙ্গে যেমন দখলদার উচ্ছেদ নিয়ে পুলিশের সঙ্গে ঝামেলা, আর তাতে বারো বছরের ছেলে গুলি খেয়ে মরলে আমরা ভেবে নিয়েছিলাম- গুলিই তো, পরমাণু বোমা-টোমা না হলে ব্যাপারটা তেমন পাত্তা দেওয়ার দরকার নেই- সেরকমই কিছু একটা ভেবে নেব। গাড়ির তলায় তো কত লোকই চলে যায়। আমাদের হোম ডেলিভারি চার্জ বেড়ে যাবার চেয়ে তো বেশি কিছু না। ধর্ম যার যার না হয় বুঝলাম, কিন্তু পরের লাইনটা কেমন বেমানান ঠেকছে। ‘উৎসব সবার’? সত্যি? বাজারের পরেশদার বাড়ি ভেসে গেল জলে। আচমকা দেখলাম একতলার ফ্ল্যাটে জল ঢুকে যাচ্ছে অল্প বৃষ্টিতেই। যে নতুন ভাড়াটে এসেছে, একটা দুধের শিশু কোলে নিয়ে চৌকিতে বসে আছে। অজয় নদের জল ফুলছে, এখনও জল নামছে না দক্ষিণবঙ্গের বহু জায়গায়। ডিভিসি জল ছাড়া নিয়ে আত্মপক্ষ সমর্থনে বিবৃতি দিতে বাধ্য হচ্ছে। অশনি সংকেত নিয়ে ভাবার আগেই পুজো এসে গেল। পঞ্জিকা বলছে মা আসছেন ঘোটকে। ঘোড়ায় চেপে আসা মানে নাকি যুদ্ধ-টুদ্ধ হতে পারে।
বাকি অংশ শুনে নিন।