মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়েরর ভাষণের অধিকাংশ জুড়েই ছিল দেশের নানা প্রসঙ্গ। সর্বভারতীয় পরিসরকে লক্ষ্য করেই এদিনের বক্তব্য সাজিয়েছিলেন তৃণমূল সুপ্রিমো। শুরু থেকেই কেন্দ্রের বিরুদ্ধে তাই আক্রমণাত্মক ছিলেন তিনি।
একুশে ডাক চব্বিশের। এই সুরেই বাঁধা ছিল এবারের ২১ জুলাইয়ের মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তৃতা। তৃতীয়বার বাংলার সরকারে আসার পর সারা দেশেই বিজেপি বিরোধী মুখ হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছেন তৃণমূল নেত্রী। সেইমতো এবারের শহিদের মঞ্চ থেকে তাঁর বক্তব্য রাজ্যে রাজ্যে ছড়িয়ে দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছিল তৃণমূল নেতৃত্ব। সেই সূত্রেই এদিন রাজধানীতে যেন মিলল মহাজোটের আভাস। দিল্লিতে তাঁর বক্তব্য বসে শুনলেন একাধিক বিরোধী দলের নেতা-নেত্রী। ভাষণের শুরুতেই তাঁদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন মমতা।
লক্ষ্যণীয় ভাবে, এদিন মমতার ভাষণের অধিকাংশ জুড়েই ছিল দেশের নানা প্রসঙ্গ। সর্বভারতীয় পরিসরকে লক্ষ্য করেই এদিনের বক্তব্য সাজিয়েছিলেন তৃণমূল সুপ্রিমো। শুরু থেকেই কেন্দ্রের বিরুদ্ধে তাই আক্রমণাত্মক ছিলেন তিনি। বক্তব্যের শুরুতেই উঠে আসে পেগাসাস প্রসঙ্গ। ক্ষুব্ধ মমতা বলেন, ‘আমি কোনও রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গেই কথা বলতে পারি না। আমার ফোন ট্যাপ করে রাখা হয়েছে। কেন এরকমটা করা হবে? গণতন্ত্রের বদলে গোয়েন্দাগিরি চলছে।’ দেশের ফেডারেল স্ট্রাকচার ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে বলে উদ্বেগ প্রকাশ করে মমতা বলেন, গণতন্ত্রের তিনটি মূল স্তম্ভ হল ভোট, সংবাদমাধ্যম এবং বিচারব্যবস্থা। তিনটিই কেন্দ্রের হাতে বিপর্যস্ত বলে জানান তিনি। পাশাপাশি উঠে আসে গ্যাসের দাম বাড়ার প্রসঙ্গ। মমতা বলেন, পেট্রোপণ্যের মূল্যবৃদ্ধির দরুন যথেষ্ট মুনাফা অর্জন করেছে কেন্দ্র। সেই টাকা কোথায় গেল? কেন দেশের মানুষ পর্যাপ্ত ভ্যাকসিন পাচ্ছেন না? কোথায় গেল পিএম কেয়ার ফান্ডের টাকা? একের পর এক প্রশ্নবাণে মমতা বিদ্ধ করতে থাকেন কেন্দ্রকে।
আরও শুনুন: Mamata Banerjee: ২১ জুলাইয়ের সমাবেশ একটা রেকর্ড, কেন জানেন?
সারা দেশের উদ্দেশে তাঁর বার্তা, তাঁর একমাত্র লক্ষ্য দেশকে বাঁচানো। দেশের মানুষকে বাঁচানো। ভোট পরবর্তী হিংসা নিয়ে একাধিক প্রশ্ন আগে তুলেছিল বিজেপি। এদিনের মঞ্চ থেকে তার উত্তর দিয়ে মমতা বলেন, কোথাও কোনও হিংসা হয়নি। পুরোটাই বিজেপির পরিকল্পিত। বরং বিজেপি-ই দেশের সমস্ত প্রতিষ্ঠাঙ্গুলিকে ধ্বংস করছে বলে অভিযোগ করেন তিনি। বিজেপিকে তিনি ‘হাই লোডেড ভাইরাস পার্টি’ হিসেবেও এদিন অভিহিত করেন। তাঁর সাফ কথা, এইভাবে দেশ চলতে পারে না। দেশের শীর্ষ আদালতের দৃষ্টি আকর্ষণ করে তিনি পেগাসাস ইস্যুতে স্বতঃপ্রণোদিত মামলার আবেদন জানান। অন্যথায় কার কার ফোনে আড়ি পাতা চলছে তা খতিয়ে দেখতে একজন প্রতিনিধি নিযুক্ত করারও দাবি জানান। তাঁর বক্তব্য, আজ গণতন্ত্রকে যদি কেউ বাঁচাতে পারে তো, তা সাধারণ মানুষ এবং বিচারব্যবস্থা। দেশের সমস্ত আঞ্চলিক দলগুলোকে এই লক্ষ্যে এককাট্টা হওয়ারও ডাক দেন মমতা। এদিন মমতার বক্তব্যে উঠে আসে কৃষক আন্দোলনের প্রসঙ্গও। তাৎপর্যপূর্ণভাবে এদিন তিনি প্রধানমন্ত্রীকে প্রশ্ন করেন যে, দেশে যা যা হচ্ছে তা কি তিনি জানেন? নাকি সব সিদ্ধান্ত স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহই নিচ্ছেন? মোদির উদ্দেশে তিনি বলেন, রাজনীতিতে সৌজন্য থাকা উচিত। কেন্দ্রের সরকারকে বার্তা দিয়ে মমতা বলেন, দেশ যায় সু-প্রশাসন এবং একতা। পাশাপাশি রাজ্যের প্রকল্প এবং সাধারণ মানুষের স্বার্থে নেওয়া জনপ্রকল্প গুলির গুরুত্ব তুলে ধরেন তিনি। তাঁর আমলে পশ্চিমবঙ্গের উন্নয়নের খতিয়ান তুলে ধরে মমতা বলেন, আজ দেশে যেরকম অনুন্নয়ন এবং হিংসা চলছে তা দূর করে নতুন আলো আনতে চান তিনি।
আর কী বললেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, প্লে-বাটন ক্লিক করে শুনে নিন।