এই দেশই একদিন তুলে দিয়েছিল সেরা সুন্দরীর মুকুট। আর সেই দেশ ছেড়েই প্রাণভয়ে পালাতে বাধ্য করল যুদ্ধ। একরত্তি ছেলেকে নিয়ে আপাতত এদেশ-ওদেশ শরণার্থী হিসেবে ঘুরছেন ইউক্রেনের প্রাক্তন সুন্দরী। শুধু তিনিই নন, এটাই এখন ইউক্রেনের অধিকাংশ মহিলা ও শিশুর ভবিতব্য। যুদ্ধবিধ্বস্ত ইউক্রেনে সবচেয়ে অসহায় বোধহয় তাঁরাই। দেশ ছেড়ে পালাচ্ছেন অসংখ্য মানুষ। আর প্রাণভয়ে দেশ ছাড়ার পরের অভিজ্ঞতাটাই ভাগ করে নিয়েছেন ইউক্রেন সুন্দরী। শুনে নিন সেই গল্প।
শহরের পর শহর জুড়ে এখন শুধুই বারুদগন্ধ। আগে যেখানে ঘুম ভাঙাত পাখির ডাক, এখন সেখানে ঘুম ভাঙে গুলি, বোমা, বন্দুকের শব্দে। মাথার উপর বোমারু বিমানের চক্কর, কানে যুদ্ধের সাইরেন। সব মিলিয়ে দেশটা যেন বদলে গিয়েছে এক লহমায়। অথচ এই দেশটাই কয়েকটা দিন আগেও ছিল ছিমছাম শান্তির জায়গা।
কিন্তু গত কয়েক দিনের যুদ্ধ যেন ক্ষতবিক্ষত হয়ে করে দিয়েছে ইউক্রেনকে। ইতিমধ্যেই সেখানকার বহু শহর দখল করে নিয়েছে রুশ বাহিনী। কিয়েভ দখল করতে না পারলেও প্রতিদিন বাড়ছে ভয়। প্রেসিডেন্টের বাড়ি লক্ষ্য করে আছড়ে পড়ছে মিসাইল। তৃতীয়বারের জন্য আলোচনা টেবিলে বসেছিল দু-দেশই। তবে তাতেও সমাধানের রাস্তা মেলেনি। শান্তির ইঙ্গিত এখনও সেই তিমিরেই। ইতিমধ্যেই দেশ ছেড়ে প্রতিবেশী দেশগুলিতে গিয়ে আশ্রয় খুঁজছেন বহু ইউক্রেনবাসী। যাঁরা এখনও শহর ছাড়তে পারেননি তাঁরাও রয়েছেন সুযোগের অপেক্ষায়। কেউ বা প্রত্যক্ষ ভাবে যুদ্ধের ময়দানে নেমে পড়েছেন দেশ বাঁচাতে। সাধারণ আম আদমি থেকে শুরু করে শিল্পী, গায়ক অভিনেতা, মডেল- কে নেই তাঁদের মধ্যে। দেশ বাঁচাতে তাঁরাও হাতে তুলে নিয়েছেন অস্ত্র।
আরও শুনুন: রুশ কবল থেকে বাঁচাতে হবে শহর! ব্যস্ত হাতে ব্যারিকেড গড়ছে একদল খুদে
আর কেউ কেউ শুধুই পালাচ্ছেন। প্রাণভয়ে দৌড়োচ্ছেন অন্য দেশে। ঘরবাড়ি ছেড়ে শরণার্থী হয়ে ঘুরছেন রাস্তায় রাস্তায়। যেমন একরত্তি ছেলেকে নিয়ে বাড়ি ছেড়েছেন এই মহিলা। তিনি ইউক্রেনের প্রাক্তন সুন্দরী। এ দেশই তাঁর হাতে তুলে দিয়েছিল সেরা সুন্দরীর সম্মান। আর প্রাণ বাঁচাতে সেই দেশই ছাড়তে বাধ্য হলেন তিনি।
২০১৮ সালে মিস ইউক্রেন শিরোপা জিতে নেন ভেরোনিকা দিদুসেঙ্কোই। ইউক্রেনের বিরুদ্ধে রাশিয়া যেদিন সামরিক অভিযান ঘোষণা সেদিন সারারাত আতঙ্কে দু-চোখের পাতা এক করতে পারেননি ভেরোনিকা ও তাঁর সাত বছরের ছেলে। মুহুর্মুহু বোমা আর যুদ্ধের সাইরেন কেড়ে নিয়েছিল ঘুম। পরদিনই একরত্তি ছেলের হাত ধরে রাস্তায় বেরিয়ে পড়েছিলেন ভেরোনিকা। বুঝেছিলেন, এ যুদ্ধের উপত্যকা তার দেশ নয়। বাঁচতে হলে ছাড়তেই হবে ভিটেমাটি। হাজার হাজার লোকের ভিড়ে মিশে গেলেন মিস ইউক্রেন। ততদিনে বোধহয় ইউক্রেনে এমন একটাও অলিগলি চৌহদ্দি নেই, যেখানে যুদ্ধের শব্দ পৌঁছয়নি। রুশ বোমা আছড়ে পড়েনি যেখানে।
হাজার হাজার মানুষের সঙ্গে ইউক্রেনের সীমান্ত পেরোন তিনি। সেখান থেকে কোনওমতে মালডোভা পৌঁছে একটু স্বস্তি ফেরে। তবে সেখানেও বাসস্থান জোটেনি। ফের ঠাঁইনাড়া হয়ে পৌঁছন ইউরোপ। জেনেভা, সুইৎজারল্যান্ডের মতো ইউরোপের একাধিক দেশে ঘুরে ঘুরে বেড়িয়েছেন ছেলেকে নিয়ে। সম্প্রতি আমেরিকা এসেছেন এই প্রাক্তন সুন্দরী। সেখানেই নারীদিবসের একটি অনুষ্ঠানে নিজের গল্প শোনান ভেরোনিকা।একটা গোটা দেশ, নিজের বাড়ি থাকা সত্ত্বেও কীভাবে শরণার্থীর জীবন কাটাতে হচ্ছে ইউক্রেনের অসংখ্য মানুষকে, শোনান সেই খতিয়ান।
আরও শুনুন: যুদ্ধে তছনছ আশ্রয়, রোমানিয়ার বিয়েবাড়িই এখন মাথা গোঁজার ঠাঁই বহু ভারতীয় পড়ুয়ার
তবে আমেরিকাতেও থাকা হবে না তাঁর। ভেরোনিকাকে ছেলের ভিসা দেয়নি আমেরিকা। তাই ছোট্ট ছেলেটাকে রেখে একাই এসেছিলেন তিনি। সপ্তাহান্তে তাঁর কাছে জেনেভায় ফিরে যাওয়ার কথা তাঁর।
ভেরোনিকা একা নন। এখন এটাই পরিস্থিতি ইউক্রেনের। আর যুদ্ধে সব চেয়ে বেশি অসহায় হয়ে পড়েছেন সেখানকার মহিলা ও শিশুরা। নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য দিনের পর দিন বাঙ্কারে, সাবওয়ে স্টেশনে রাত কাটাচ্ছেন অসংখ্য মানুষ। বিপদগ্রস্ত মানুষদের সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য রাশিয়ার তরফে কয়েক বার সাময়িক যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করা হলেও তাতে লাভের লাভ কিছু হয়নি। অনেক ক্ষেত্রেই যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করে সেই সময়েও হামলা চালিয়েছে রুশ সেনা।
কবে থামবে এই মারণ যুদ্ধ! কবে ফিরবে শান্তি ছোট্ট দেশটায়। এর উত্তর বোধহয় কেউই জানেন না।