মালিক মারা গিয়েছেন, তবুও তাঁর গলা শুনতে পাবে বলে গ্রামোফোনের সামনে কান খাড়া করে বসে আছে তাঁর প্রিয় কুকুরটি। ‘হিজ মাস্টার্স ভয়েস’-এর এই বিখ্যাত ছবি কে না দেখেছি! মানুষ আর পশুর এই অদ্ভুত বন্ধুত্বের দৃশ্যই যেন দেখা গেল ফের। আসুন, শুনে নেওয়া যাক।
গৃহপালিত পশুদের মধ্যে কুকুরের প্রভুভক্তি আর বিশ্বস্ততা প্রায় প্রবাদের পর্যায়ে পৌঁছে গিয়েছে। মালিকের ঘোর বিপদেও কুকুরের পাশে থাকার কথা শোনা গিয়েছে বারবার। সম্প্রতি তেমনই এক ঘটনার ছবি ছড়িয়ে পড়ল সোশ্যাল মিডিয়ায়। যা দেখে আবেগে বিহ্বল নেটিজেনেরা।
আরও শুনুন: স্রেফ একটি কুকুরের কারণেই দুই দেশের মধ্যে হল রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ, জানেন এই ঘটনা?
কী ঘটেছে ঠিক?
ছবিতে দেখা গিয়েছে, রাস্তার পাশে ফুটপাথের উপরে পড়ে রয়েছে এক ব্যক্তির মৃতদেহ। পড়ে আছে তাঁর সাইকেলটিও। আর মৃতদেহের পাশেই রাস্তার ধারে বসে রয়েছে একটি কুকুর। যা দেখে নেটিজেনদের অনুমান, কুকুরটি আসলে ওই ব্যক্তির পোষা। মৃত্যুর পরেও মালিককে ছেড়ে যায়নি সে। কুকুরটির এহেন আচরণের সঙ্গে ‘হাচিকো’র তুলনা টেনেছেন তাঁরা। মনে করিয়ে দিয়েছেন, টোকিয়ো বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক হিদেসাবুরে উয়েনোর পোষা সেই কুকুরটির কথা। হাচিকো নামের সেই কুকুরটি প্রতিদিন অধ্যাপকের ফেরার সময়ে পৌঁছে যেত রেলস্টেশনে। অপেক্ষা করত তাঁর জন্য। একদিন মারা যান ওই অধ্যাপক। কিন্তু তারপরেও নিয়মমাফিক প্রতিদিন স্টেশনে যেত হাচিকো। ন-বছর ধরে এই অভ্যাস জারি রেখেছিল সে। অবশেষে মৃত্যু এসে তার অপেক্ষার অবসান ঘটায়। সেই মর্মস্পর্শী ঘটনার সূত্র ধরেই সকলকে নাড়িয়ে দিয়েছে এই সাম্প্রতিক ছবিটি।
আরও শুনুন: অপুষ্টির জেরে ১৩,০০০ নবজাতকের মৃত্যু আফগানিস্তানে, উদ্বিগ্ন বিশ্ব
জানা গিয়েছে, ছবিটি আসলে ইউক্রেনের। রুশ আক্রমণেই অতর্কিতে মৃত্যু হয়েছে ওই ব্যক্তির। ইউক্রেনে রুশ হামলার প্রথমদিকে, দেশ ছাড়ার সময় পোষ্যদের ছেড়ে আসতে অস্বীকার করেছিলেন একাধিক মানুষ। তাদের সঙ্গে নিয়েই সীমান্ত পেরিয়েছেন অনেকে, এমনকি পোষ্যকে সঙ্গে নেওয়ার জন্য ছেড়ে এসেছেন নিজেদের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রও। এবার সেই ভালবাসারই যেন প্রত্যুত্তর দিল এই পোষ্য কুকুরটি।
এমনিতেই গত ২৪ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হওয়া যুদ্ধ এখনও জারি রেখেছে রাশিয়া। যুদ্ধ থামানোর জন্য সারা পৃথিবীর আবেদন, এমনকি রাষ্ট্রসংঘের কথাতেও কর্ণপাত করেননি রুশ প্রধান ভ্লাদিমির পুতিন। এদিকে রুশ বাহিনীর আক্রমণে মৃত্যু ঘটেছে ইউক্রেনের অসংখ্য সাধারণ মানুষের। ছন্নছাড়া হয়ে গিয়েছে শিশু, বৃদ্ধ, পড়ুয়া-সহ সকলের জীবন। এই ছবিটি ফের যুদ্ধবাজদের প্রতি ঘৃণাই উসকে দিল সকলের মনে।