গ্রামের উচ্চবর্ণের হাতে নিগ্রহের শিকার ঝাড়খণ্ডের ৫০টি দলিত পরিবার। ঘরবাড়ি ভেঙেচুরে তাঁদের বিতাড়িত করা হল গ্রাম থেকে। রাজনৈতিক ডামাডোলের মধ্যেই অস্বস্তি বাড়িয়েছে দুমকায় নাবালিকা মৃত্যুর ঘটনা। দলিত নিগ্রহের এই সাম্প্রতিক অভিযোগে কি আরও বাড়ল মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত সোরেনের সংকট? কী বলছে ওয়াকিবহাল মহল? শুনে নিন।
ঝাড়খণ্ডের একটি গ্রাম থেকে ৫০টি দলিত পরিবারকে তাড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠল ওই গ্রামেরই উচ্চবর্গের একটি সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে। ভেঙে দেওয়া হয়েছে তাঁদের বাড়িঘর। একে খনি-দুর্নীতি মামলায় গদি হারাতে বসেছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত সোরেন। তার উপর গোদের উপর বিষফোঁড়া নাবালিকা মৃত্যু। সব মিলিয়ে প্রবল অস্বস্তিতে ঝাড়খণ্ডের জেএমএম-কংগ্রেস জোট। মহারাষ্ট্রের ধাঁচেই ঝাড়খণ্ডেও গদির দখল নিতে পারে বিজেপি। বিধায়ক বাঁচাতে ইতিমধ্যেই রাজ্য ছেড়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। আশ্রয় নিয়েছেন প্রতিবেশী রাজ্য ছত্তীসগড়ে। এত সব সংকটের মধ্যেই তার সঙ্গে এবার যোগ হল, দলিত নিগ্রহের অভিযোগ। গ্রাম থেকে বিতাড়িত দলিত বাসিন্দারা দ্বারস্থ হয়েছেন প্রশাসনের। সেই মামলায় তদন্ত রিপোর্ট চাইলেন খোদ রাজ্যপাল। সব মিলিয়ে সরকার সামলাতে বড়সড় চাপের মুখে পড়ার সম্ভাবনা জেএমএম-কংগ্রেস জোটের।
আরও শুনুন: গণেশ চতুর্থী উপলক্ষে বেঙ্গালুরুতে বন্ধ মাংসের দোকান, নয়া নির্দেশিকা জারি প্রশাসনের
এ দেশে দলিত নিগ্রহ কোনও নতুন বিষয় নয়। কখনও দলিত হওয়ার ‘অপরাধে’ শিক্ষক পিটিয়ে মারছেন একরত্তি পড়ুয়াকে, তো কখনও দলিতের হাতের রান্না খেতে আপত্তি জানাচ্ছে স্কুলের পড়ুয়ারা। দলিত হওয়ার ‘অপরাধে’ আজও বিভিন্ন সুবিধা ও অধিকার থেকে বঞ্চিত হতে হয় বহু মানুষকে। ঝাড়খণ্ডের পালামৌ জেলার একটি গ্রামে এবার ৫০টি দলিত পরিবারকে গ্রাম থেকে উৎখাত করার অভিযোগ উঠল ওই গ্রামে বসবাসকারী অন্য সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে।
মুরুমাতি গ্রাম এক কিলোমিটার দূরে টোংরি পাহাড়ি এলাকা। অন্তত চার দশক ধরে সেখানেই বাস মুশার সম্প্রদায়ের ওই মানুষগুলোর। গত সোমবার তাঁদের গ্রামছাড়া করে ওই গ্রামেরই অন্য একটি সম্প্রদায়। জ্বালিয়ে দেওয়া হয় বাড়িঘর। তারপর একটি গাড়িতে করে মালপত্তর সমেত তাঁদের নামিয়ে আসা হয় একটি জঙ্গলের মাঝখানে। পুলিশে অভিযোগ জানাতে চাইলে বাধা দেওয়ারও অভিযোগ উঠেছে দুষ্কৃতীদের বিরুদ্ধে। তা সত্ত্বেও স্থানীয় থানায় এ ব্যাপারে এফআইআর দায়ের করেন গ্রামছাড়া ওই ৫০টি পরিবার। অভিযোগ তোলা হয়েছে, যে এলাকায় ঘরবাড়ি গড়ে বসবাস করছিল দলিত পরিবারগুলি, সে জমি আদতে একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের। তা জবরদখল করে বাসস্থান বানিয়েছে ওই পঞ্চাশটি পরিবার। আর সেই অভিযোগেই ওই পরিবারগুলিকে গ্রাম থেকে বিতাড়িত করেছে উচ্চবর্গের ওই সম্প্রদায়।
আর এ ঘটনা জানার পরেই নড়েচড়ে বসেছে প্রশাসন। অভিযোগ পেয়েই ঘটনাস্থল পরিদর্শনে ছুটে যান মেদিনীনগরের এসডিও রাজেশ কুমার শাহ ও এসডিপিও সুরজিৎ কুমার। শান্তিশৃঙ্খলা পরিস্থিতি বজায় রাখতে মোতায়েন করা হয় কড়া নিরাপত্তাও। ১৫০ জন অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তি ছাড়াও ১২ জনের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলাও দায়ের করা হয়েছে পুলিশের পক্ষ থেকে। বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন রাজ্যপাল রমেশ বাইসও। পালমৌ-এর ডেপুটি কমিশনারের কাছ থেকে এ নিয়ে পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট তলব করেছেন তিনি। দু’দিনের মধ্যে রাজভবনে সেই রিপোর্ট রাজভবনে জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। যত শীঘ্র সম্ভব, দোষীদের গ্রেপ্তারির নির্দেশ দেওয়া হয়েছে প্রশাসনের তরফে। গ্রাম থেকে বিতাড়িত ওই ৫০টি পরিবারকে ওই গ্রামেই পুনর্বাসন দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন ডেপুটি কমিশনার। এগিয়ে এসেছে বেশ কয়েকটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনও। অভিযুক্তদের তাঁদের দাবির যথাযথ প্রমাণ এবং দলিল-কাগজপত্র দাখিল করারও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। গ্রাম থেকে বিতাড়িত মানুষগুলিকে যথাযথ নিরাপত্তা দিয়ে ঘরে ফেরানোর প্রতিশ্রুতিও মিলেছে স্থানীয় প্রশাসনের তরফে।
আরও শুনুন: সাভারকর ও জিন্না ‘নাস্তিক’, বিতর্ক উসকে মন্তব্য কর্ণাটকের কংগ্রেস নেতার
সম্প্রতি দুমকায় একটি দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রীর গায়ে আগুন দিয়ে খুন করার অভিযোগ উঠেছে শাহরুখ নামে এক তরুণের বিরুদ্ধে। সেই ঘটনায় উত্তাল ঝাড়খণ্ড। এদিকে খনি দুর্নীতি মামলার জেরে যথেষ্ট চাপে সে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী। আর সেই সুযোগ হাতছাড়া করেনি বিরোধী দল বিজেপিও। রাজ্যে নারীদের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন তুলে সরব হয়েছেন একাধিক বিরোধী নেতা। নিহত ছাত্রীর পরিবারের জন্য ১০ লক্ষ টাকা আর্থিক সাহায্য ঘোষণা করেও পার পায়নি রাজ্যসরকার। ছাত্রীর পরিবারের দাবি, এই আর্থিক ঘোষণার কথা আগে জানলে হয়তো তাঁদের মেয়েকে বাঁচানো সম্ভব হত। স্বাভাবিক ভাবেই এ নিয়ে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক তরজা। এই পরিস্থিতিতে বিধায়কদের নিয়ে রাজ্য ছেড়েছেন মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত সোরেন। এই সংকটের মধ্যেই প্রকাশ্যে এল রাজ্যে দলিত নিগ্রহের ঘটনা। যা স্বাভাবিক ভাবেই মুখ্যমন্ত্রীর অস্বস্তি আরও খানিকটা বাড়াবে বলেই মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল।