রামপুরহাটে স্বজনহারাদের পাশে মুখ্যমন্ত্রী। ক্ষতিগ্রস্তদের বাড়ি মেরামতির জন্য ২ লক্ষ টাকা। মৃতদের পরিবারকে আর্থিক সাহায্য ৫ লক্ষ টাকা। ঘোষণা চাকরির দেওয়ারও। গ্রেপ্তার তৃণমূল নেতা আনারুল। বেআইনি অস্ত্র উদ্ধারে রাজ্যজুড়ে অভিযানের নির্দেশ মমতার। বগটুই গেল বিজেপির কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দল। গেলেন অধীর চৌধুরীও। ঘটনায় রিপোর্ট তলব মানবাধিকার কমিশনের। রামপুরহাটের ঘটনার প্রেক্ষিতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দ্বারস্থ তৃণমূল।
হেডলাইন:
আরও শুনুন: 22 মার্চ 2022: বিশেষ বিশেষ খবর- রামপুরহাটে অগ্নিদগ্ধ হয়ে মৃত ৮, রিপোর্ট তলব স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের
বিস্তারিত খবর:
1. প্রতিশ্রুতিমতো বৃহস্পতিবারই রামপুরহাটের বগটুই গ্রামে গেলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শুধু প্রশাসনিক প্রধান হিসাবেই নয়, সহমর্মী একজন মানুষ হয়েই পাশে দাঁড়ালেন স্বজনহীন মানুষদের। একই সঙ্গে পালন করলেন রাজধর্মও। তাঁকে কাছে পেয়েই কান্নায় ভেঙে পড়েন বগটুই গ্রামের বাসিন্দারা। সেদিন রাতে ঠিক কী হয়েছিল তার বিবরণ দেন। মমতা শোনেরন সকলের কথা। বেশ কিছুক্ষণ গ্রামবাসীদের সঙ্গে কথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী। তারপর গ্রামে দাঁড়িয়েই গোটা ঘটনায় তদন্তকারীদের কড়া পদক্ষেপের নির্দেশ দেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, “জীবনের বিকল্প টাকা কিংবা চাকরি নয়। তবে সংসার চালাতে টাকার প্রয়োজন। নিহতদের পরিবারের পাশে দাঁড়ানো মানবিক দায়িত্ব।” এরপরপই ক্ষতিগ্রস্তদের বাড়ি মেরামতির জন্য ২ লক্ষ টাকা আর্থিক সাহায্য ঘোষণা করেন তিনি। পাশাপাশি মৃতদের পরিবারকে আরও ৫ লক্ষ টাকা আর্থিক সাহায্য করা হবে বলেও জানান। এছাড়া নিহতদের পরিবার পিছু একটি করে চাকরির কথা ঘোষণা করা হয়। তবে এভাবে কাউকে স্থায়ী চাকরি দেওয়া সম্ভব নয়। তাই তাঁদের আপাতত মুখ্যমন্ত্রীর কোটা থেকে চাকরি দেওয়া হবে। গ্রুপ ডি অ্যাটেনডেন্ট হিসাবে কাজ করতে হবে তাঁদের। প্রথম এক বছর তাঁরা ১০ হাজার টাকা করে বেতন পাবেন। পরের বছর স্থায়ী চাকরি পাবেন। ইতিমধ্যেই স্বজনহারাদের হাতে চেকও তুলে দেওয়া হয়েছে। এরপর রামপুরহাট হাসপাতালেও যান মুখ্যমন্ত্রী। হাসপাতাল সুপারের সঙ্গে দেখা করেন। প্রত্যেকের চিকিৎসার ভার নিয়েছে রাজ্য সরকার। এই মুহূর্তে ওই হাসপাতালে ভরতি থাকা মহিলার শরীরের প্রায় ৬০ শতাংশ পুড়ে গিয়েছে। তাঁর শারীরিক অবস্থা এতটাই সংকটজনক যে বর্তমানে কলকাতার হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা সম্ভব নয়। তাঁর চিকিৎসার জন্য বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা কলকাতা থেকে রামপুরহাট হাসপাতালে আসছেন। ওই মহিলাকে ১ লক্ষ টাকা এবং বাকি দুই শিশুর পরিবারকে ৫০ হাজার টাকা অর্থসাহায্য করে রাজ্য সরকার।
2. রামপুরহাটের ঘটনায় কঠোর পদক্ষেপ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। আগেই বলেছিলেন, দোষীরা রেহাই পাবে না। বৃহস্পতিবার বগটুই পৌঁছেই অভিযুক্ত তৃণমূল নেতা আনারুলকে গ্রেপ্তারের নির্দেশ দেন মুখ্যমন্ত্রী। একই সঙ্গে পুরো ঘটনায় পুলিশের ভূমিকাতেও যে তিনি ক্ষুব্ধ, তা স্পষ্ট করে দেন। পুলিশ প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে গোড়া থেকেই প্রশ্ন উঠছিল। স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্বের বিরুদ্ধেও সরব হয়েছিলেন গ্রামবাসীদের একাংশ। কড়া পদক্ষেপেই সেই ক্ষোভ প্রশমিত করলেন মুখ্যমন্ত্রী। বৃহস্পতিবার দুপুরে বগটুই গ্রামে নিহতদের পরিবারের পাশে দাঁড়িয়ে দোষীদের কড়া শাস্তি দিতে হবে বলে পুলিশকে কড়া নির্দেশ দেন মুখ্যমন্ত্রী। স্পষ্ট জানান, এস়ডিপিও, আইসি, ডিআইজি – পুলিশকে ঠিকমতো কাজে লাগায়নি যারা, তাদের কঠোর শাস্তি দিতে হবে। তৃণমূলের ব্লক প্রেসিডেন্ট আনারুল হোসেনের নাম করে বলেন – ”আনারুলকে গ্রেপ্তার করতে হবে। যেখানেই যে পালাক, ধরে আনতে হবে।” তাঁর নির্দেশ পাওয়া মাত্রই ঘণ্টাখানেকের মধ্যেই গ্রেপ্তার করা হয় আনারুলকে। কর্তব্যের গাফিলতির অভিযোগে সাসপেন্ড করা হয় বগটুইয়ের আইসি ত্রিদিব প্রামাণিককে। এছাড়া এলাকার পরিস্থিতি শান্ত রাখতে এখন বগটুই গ্রামে পুলিশ প্রহরা থাকবে বলেও জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।
পাশপাশি রাজ্যে শান্তি ফেরাতেও কড়া সিদ্ধান্ত নিলেন মুখ্যমন্ত্রী। সম্প্রতি রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে অশান্তির খবর মিলছিল। এদিন মুখ্যমন্ত্রী সাফ, জানান আর কোনও অশান্তি বরদাস্ত করা হবে না। আগামী ১০ দিন রাজ্যজুড়ে বিশেষ অভিযান চালানোর নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। বোমা, বন্দুক-সহ বেআইনি অস্ত্র উদ্ধারের লক্ষ্যেই চলবে অভিযান। এই অভিযানে জেলা পুলিশ আধিকারিকদের সঙ্গে থাকবেন রাজ্য পুলিশের আধিকারিকরাও। ইতিমধ্যে জেলা পুলিশ সুপারদের অভিযানের নির্দেশও দিয়েছেন ডিজিপি।
শুনে নিন বিশেষ বিশেষ খবর।