সম্প্রতি অযোধ্যায় সরযূ নদীতে স্নান করতে নেমে, চুমু খাওয়ার অপরাধে চরম হেনস্তার শিকার হলেন এক দম্পতি। তা নিয়ে যথেষ্ট বিতর্ক ঘনিয়েছে! দম্পতি কি সত্যি কি কোনও অপরাধ করেছেন? অনেকেই তুলেছেন এ-প্রশ্ন। এ-প্রশ্ন আগেও উঠেছে, কেননা এমন ঘটনা আমাদের দেশে নতুন নয়। এর আগেও প্রকাশ্যে আলিঙ্গন করা কিংবা সামান্য ঘনিষ্ঠতা দেখানোর জন্য হেনস্তার শিকার হতে হয়েছে অন্যান্য যুগলকেই। আসুন শুনে নেওয়া যাক সেইসব ঘটনার কথা।
ডিজিটাল হওয়ার দৌড়ে নেমেছে আমাদের গোটা দেশ। তৃতীয় বিশ্বের দেশ হয়েও টেকনলজিতে পাল্লা দিচ্ছে বিশ্বর প্রথম সারির দেশগুলির সঙ্গে। এত অগ্রগতির ভিতর, তবু স্বীকার করতে হয় যে, কোথাও যেন লুকিয়ে আছে পিছন দিকে এগিয়ে যাওয়া গল্পগুলোও। ২০২২ সালে দাঁড়িয়েও আলিঙ্গন বা ঘনিষ্ঠতা এখানে অপরাধ বলেই সাব্যস্ত হয়, আর তাই হেনস্তার শিকার হতে হয় যুগলকে। কিন্তু সত্যিই কি তা অপরাধ! অতিসম্প্রতি এই বিতর্ক উসকে দিয়েছেন অযোধ্যার এক দম্পতি। সরযূ নদীতে স্নান করতে নেমে টাল সামলাতে পারছিলেন না যুবতী। স্বামীকেই তাই জড়িয়ে ধরেন তিনি। তখন থেকে গুঞ্জন শুরু করে দেয় আশেপাশের সবাই। এরপর যুবতীর স্বামী চুম্বন করেন স্ত্রীকে। ব্যস, তারপরেই উত্তেজিত জনতা শুরু করে দেয় হেনস্তা।
আরও শুনুন: ঘরের ছাদ, দেওয়াল নেই… তবু হোটেল ভাড়া ২৬ হাজার টাকা, কেন জানেন?
এই ঘটনা মনে করিয়ে দিচ্ছে এই দেশে ঘটে যাওয়া একইরকম আরও অনেক ঘটনাকেই। বলা যায়, এমন ঘটনা ছড়িয়ে ছিটিয়ে ঘটেছে দেশের প্রায় সর্বত্রই। ব্যতিক্রম নয় আমাদের সাধের তিলোত্তমা… কলকাতাও। ২০১৮ সালে জনাকয় মাঝবয়সি লোক মেট্রো স্টেশনেই মারধর করেন এক যুগলকে। তাঁদের তথাকথিত অপরাধ ছিল এই যে, মেট্রোর মধ্যে ঘনিষ্ঠভাবে দাঁড়িয়ে ছিলেন তাঁরা। বারবার মানা করা সত্ত্বেও নাকি তাঁরা সরে দাঁড়াননি। এমনই অভিযোগ করেছিলেন জনতার একাংশ। আর সেই ঘটনায় উত্তাল হয়েছিল কলকাতা। পক্ষে আর বিপক্ষে প্রায় আড়াআড়ি ভাবে ভেঙে গিয়েছিল শহরের সুধীজনরা।
আরও শুনুন: একাই একশো! ঘাঁটিতে ঢুকে ৪০ জন রুশ সেনাকে ঘায়েল করল ইউক্রেনের ছাগল
তবে শুধু কলকাতা কেন, দেশের দক্ষিণ প্রান্তও সাক্ষী আছে এমন ঘটনার। তামিলনাড়ুর কথাই ধরা যাক। সেখানে অটো রিক্সা করে ফেরার পথে এক যুগল নিজেদের মধ্যে খানিক ঘনিষ্ঠভাবে বসেছিলেন। এই দৃশ্য একেবারেই পছন্দ হয়নি খোদ অটোচালকের। গাড়ি থামিয়ে সরাসরি মারধর শুরু করেন যুগলকে। বাধা দেওয়ায় মেয়েটির গালেও কষিয়ে দেন এক থাপ্পড়-ও। হেনস্তার গল্প ছড়িয়ে উত্তরপ্রদেশেও। ২০১৮ সালেই একটি ঘটনায় বেশ শোরগোল পড়েছিল। চরম হেনস্তার শিকার হন এক দম্পতি। একসঙ্গে কোনও এক হোটেলে যাওয়ার পথে তাদের ঘিরে ধরে একদল যুবক। আর তারপরেই শুরু হয় হেনস্তা। প্রতি ক্ষেত্রেই কী যে যুগলদের অপরাধ তা স্পষ্ট হয়নি, কিন্তু হেনস্তার ঘটনা ছড়িয়েছে এক রাজ্য থেকে অন্য রাজ্যে। চণ্ডীগড়ে স্রেফ গুরুদ্বারে ঘুরতে গিয়েই ঘোর বেগতিকে পড়েছিলেন এক যুগল। সেখানে তাঁদের প্রশ্ন করা হয়েছিল, তাঁরা কীভাবে একে অপরকে চেনেন? অর্থাৎ তাঁদের সম্পর্ক ঠিক কী! অভিযোগ ছিল যে, সঙ্গতিপূর্ণ উত্তর দিতে পারেননি তাঁরা। ফলে ছুটে আসে আরও প্রশ্নবাণ। শুরু হয় হেনস্তা। এমনকী খবরে প্রকাশ যে, মেয়েটির জামাকাপড়ও সেদিন ছিঁড়ে দিয়েছিল উত্তেজিত জনতা।
আরও শুনুন: প্রতি কেজির দাম ২.৫ লক্ষ টাকা, বিরল আম বাঁচাতে ব্যবস্থা নজিরবিহীন পাহারার
এমন ঘটনার সংখ্যা বহু। কোনও নির্দিষ্ট রাজ্য নয়, উত্তর থেকে দক্ষিণ, পূর্ব থেকে পশ্চিম- সর্বত্রই একই ছবি। ভাবতেই অবাক লাগে, যে দেশে খাজুরাহের মন্দির জুড়ে খোদাই করা আছে ভালোবাসার চিহ্ন, সে দেশেই প্রকাশ্যে আলিঙ্গন কিংবা ভালবাসার পরিচয় দিতে গেলে কপালে অবধারিত হেনস্তা। এই সব ঘটনা যেন প্রতিবার একটাই প্রশ্ন উসকে দেয় – আমরা কি সত্যিই এগোচ্ছি? সে উত্তর খোঁজার দায় অবশ্য একান্ত ভাবে আমাদেরই।