দেশ জুড়েই সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষের হাওয়া। মসজিদ, দরগার মতো একাধিক ধর্মস্থানে হিন্দুত্বের অনুষঙ্গ খুঁজতে উঠেপড়ে লেগেছে দেশের বেশ কয়েকটি হিন্দুত্ববাদী সংগঠন। ধর্মস্থানে লাউডস্পিকার বাজানো নিয়েও কিছুদিন আগেই ঘনিয়েছিল বিতর্ক। এত সবের মধ্যে আবার গোদের উপর বিষফোঁড়া বিদ্বেষমূলক মন্তব্য। প্রায়শই আলটপকা মন্তব্য করে বিপাক বাড়ান বহু নেতা-মন্ত্রীরাই। এ কোনও নতুন কথা নয়। নূপুর শর্মার পরে ফের বিদ্বেষমূলক বক্তব্য পেশ করে বিপাকে উত্তরপ্রদেশের এক নেত্রী। ইতিমধ্যেই তার বিরুদ্ধে দায়ের হয়েছে মামলাও। আসল ঘটনাটি কী? শুনে নিন।
দিন কয়েক আগেই মহম্মদকে নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করে বিপাকে পড়েছিলেন বিজেপির মুখপাত্র নূপুর শর্মা এবং নবীন জিন্দল। যার জেরে কার্যত আগুন জ্বলে গিয়েছিল উত্তরপ্রদেশের কানপুরে। এমনকী ব্যাপারটি নিয়ে প্রাচ্যের দেশগুলির রোষের মুখেও পড়তে হয় ভারতকে। খোলা বাজার থেকে ভারতীয় পণ্য তুলে নেওয়ার হুমকিও দেয় বেশ কয়েকটি মুসলিম অধ্যুষিত দেশ। এ নিয়ে বেশ চাপের মুখে পড়ে কেন্দ্রীয় সরকারও। ওই দুই বিজেপি নেতাকে দল থেকে বহিষ্কার পর্যন্ত করে বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব।
আরও শুনুন: ঘৃণার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছে বিজেপি, সিদ্ধান্তে খুশি দলের সংখ্যালঘু মোর্চা
তবে তার রেশ কাটতে না কাটতেই ফের বিদ্বেষমূলক বক্তব্য় করে বসলেন উত্তরপ্রদেশের আলিগড়ের এক নেত্রী। বিশেষ একটি সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে আপত্তিজনক কথাবার্তা বলার অভিযোগ উঠেছে সাধ্বী অন্নপূর্ণা নামে ওই নেত্রীর বিরুদ্ধে। নিজেকে অখিল ভারত হিন্দু মহাসভার জাতীয় সচিব বলে দাবি করা সাধ্বী অন্নপূর্ণা তথা পূজা শকুন পান্ডে নাকি সম্প্রতি বিভিন্ন গোষ্ঠীর মধ্যে অশান্তি বাঁধানোর চেষ্টা করছিলেন।
না, এই প্রথম নয়। এর আগেও একাধিক বার এই ধরনের কাজ করেছে সাধ্বী অন্নপূর্ণা। দু-দু’বার গ্রেপ্তারও হন আগে। কিন্তু দুবারই জামিনে ছাড়া পেয়ে গিয়েছিলেন বিতর্কিত এই নেত্রী। এবার ফের ঘৃণা ছড়ানোর অভিযোগে তাঁর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে। আলিগড়ের গান্ধী পার্ক থানায় তাঁর বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির বেশ কয়েকটি ধারায় অভিযোগ দায়ের করেছেন পুলিশ। গত বছর হরিদ্বারের একটি ধর্মীয় সভায় বিদ্বেষমূলক বক্তব্য ছড়ানোর অভিযোগে সাধ্বী অন্নপূর্ণা ও বেশ কয়েকজন হিন্দুত্ববাদী নেতার বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেছিল উত্তরাখণ্ড পুলিশ। হয়েছিলেন গ্রেপ্তারও।
আরও শুনুন: তাজমহল চত্বরে নমাজ পড়ার অভিযোগ, গ্রেপ্তার চার পর্যটক
গত মাসে দিল্লিতে একই রকম একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠানে মুসলিমদের বিরুদ্ধে বিদ্বেষমূলক বক্তব্য রাখেন সাধ্বী অন্নপূর্ণা। এমনকি মুক্তসভা থেকে তাদের বিরুদ্ধে হিংসার ডাকও দেন তিনি। আর তার পরেই নড়েচড়ে বসে প্রশাসন। এখানেই শেষ নয়। সাধ্বী অন্নপূর্ণার বিরুদ্ধে আরও অভিযোগ রয়েছে। ২০১৯ সালে একটি গান্ধীমূর্তি গুলি করে ভেঙে দেন তিনি। এমনকী নাথুরাম গডসের প্রশংসায় তাঁকে স্লোগান দিতেও দেখা গিয়েছিল আলিগড়ের এক অনুষ্ঠানে।
এ বার ফের একবার সেই পথেই হাঁটলেন নেত্রী। এমনিতেই জ্ঞানবাপী মসজিদের ওজুখানায় শিবলিঙ্গ পাওয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে তেঁতে রয়েছে উত্তরপ্রদেশ। সেই লাইনে রয়েছে শাহি ইদগাহের মতো একাধিক মসজিদ। সেসব নিয়ে মামলার জল গড়িয়েছে সুপ্রিম কোর্টেও। এই পরিস্থিতিতে বিজেপি নেত্রী নূপুর শর্মার বক্তব্য যথেষ্টই চাপে ফেলেছিল ভারতকে। সাধ্বী অন্নপূর্ণার এই বিদ্বেষ-বক্তৃতা সেই আগুনেই ঘৃতাহূতি দিল বলে মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল।