সময় বদলায়। বিজ্ঞাপনও বদলায়। পুরুষের ভূমিকায় আসে নারী, আর নারীর ভূমিকায় পুরুষ। অসংখ্য মানুষের কুর্নিশ আদায় করে নেয় এই ভূমিকা পরিবর্তনের বার্তা। কিন্তু সমাজ! তার মন কি আদৌ বদলেছে? আসুন, উত্তর খুঁজে নেওয়া যাক।
স্মৃতি মন্ধানা কোন হাতে ব্যাট করেন? এই প্রশ্নের মুখে পড়লে উত্তর দিতে আজও অনেকে হোঁচট খান। অথচ অফ সাইডে তাঁর শটের পারফেকশন মনে করিয়ে দেয় সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়কে। ঠিক তার পাশাপাশি যদি প্রশ্ন করা হয়, ঋষভ পান্থ কোন হাতে ব্যাট করেন। উত্তর দিতে হয়তো এক সেকেন্ডও অপেক্ষা করবেন না কেউ। না, ভারতীয় মহিলা ক্রিকেটের কাব্যে উপেক্ষিতা হয়ে থাকা নিয়ে নতুন কোনও কথা বলার উদ্দেশে এই প্রসঙ্গের অবতারণা নয়। এই প্রসঙ্গ উঠে এল সমাজের মন বদলের ইতিবৃত্তের খানিক ধারণা পেতে।
আরও শুনুন: নতুন বউয়ের পা ছুঁলেন স্বামী, নিয়মের বদল দেখে মুগ্ধ দর্শকেরাও
সম্প্রতি ক্যাডবেরি-র একটি বিজ্ঞাপন জনমানসে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। সেই নব্বইয়ের দিনকালে জনপ্রিয় এই সংস্থা একটি বিজ্ঞাপন তৈরি করেছিল। যেখানে দেখা গিয়েছিল, ৯৯-এ ব্যাট করছেন এক যুবক। গ্যালারিতে তখন দেখানো হয় এক নারীকে, যিনি কিনা ব্যাটসম্যানের মনের মানুষ। বল করা হল। তুলে মারলেন যুবক। প্রায় ক্যাচ হয় হয়। তারপর দেখা গেল বল চলে গিয়েছে বাউন্ডারির ওপারে। এরপরেই সেই মেয়ের বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাস। পুলিশের নাগাল এড়িয়ে তাঁর নেচে ওঠা খুশিতে। সেই বিজ্ঞাপন আজও সবার মনের কোণে যত্নে তুলে রাখা ছিল এতদিন।
আরও শুনুন: অসমে শর্টস পরে পরীক্ষাকেন্দ্রে তরুণী, কী নিদান দিলেন পরীক্ষক?
তারপর গড়িয়ে গিয়েছে দু-দশকের বেশি সময়। গঙ্গা-যমুনা দিয়ে কম জল গড়ায়নি এতদিনে! দেশের মন, মেজাজ, মর্জিতে এসেছে ব্যাপক রদবদল। সেই পরিবর্তনটিকে চিহ্নিত করে সংস্থা আর-একটি বিজ্ঞাপন তৈরি করেছে। যেখানে ভূমিকার বদল হয়েছে। অর্থাৎ, এবারও সেই একই পরিস্থিতি। স্কোরবোর্ড আটকে আছে নিরানব্বইতে। তবে ব্যাট হাতে এবার একজন মহিলা। আর গ্যালারিতে বসে তাঁর পছন্দের পুরুষটি। বাকি কাহিনি একই। এই বিজ্ঞাপন সামনে আসা মাত্রই ব্যাপক সাড়া পড়েছে। অনেকেই বলছেন, সমাজের বদলে যাওয়া মানচিত্র যেন ফুটে উঠেছে বিজ্ঞাপনের আদলে।
কিন্তু সত্যি কি এটাই সমাজের মুখ? নাকি সত্যিকার মুখ ঢেকে গেল বিজ্ঞাপনে?
এই বিজ্ঞাপন যখন কুর্নিশ আদায় করছে, তখনকারই কয়েকটি ঘটনার দিকে চোখ রাখা যাক। মুম্বইয়ে সাকিনাকায় ঘটে গিয়েছে ভয়াবহ ধর্ষণের ঘটনা। যে-ঘটনা নিয়ে আলোড়ন পড়তে পারত, কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হলেও, সেভাবে যেন অভিঘাত দেখা যায়নি। কিছুদিন খবরের শিরোনামে আনাগোনা করে ঘটনা সরে গিয়েছে ভিতরের দিকে। অসমে একটি ১৯ বছরের মেয়ে পরীক্ষা দিয়ে গিয়েছিল শর্টিস পরে। তাতে এমন অবস্থার মুখে তাকে পড়তে হল যে, শেষে পর্দা দিয়ে পা ঢেকে পরীক্ষা দিতে হয়েছে বলে খবরে প্রকাশ। আর একটু পিছিয়ে যাওয়া যাক। এক বলিউড তারকার আত্মহত্যাকে কেন্দ্র করে এক অভিনেত্রীকে যে হেনস্তার মুখে পড়তে হয়েছে, তা যেন অতীতের সেই ডাইনি চিহ্নিত করার প্রথাকে মনে করিয়ে দিয়েছে। অন্য এক ইন্ডাস্ট্রির আর-এক অভিনেত্রী যখন সন্তানসম্ভবা হলেন, আর তাঁর সন্তানের পিতা কে তা সাময়িক না-বলার সিদ্ধান্ত নিলেন, তখন সমাজের প্রায় অশ্লীল কৌতূহল মাথাচাড়া দিল। সন্তানের বাবা কে? এই নিয়ে চাপা ফিসফাসে ভরে গেল অলিগলি। প্রায় একই সময়ে ভিনদেশের এক নায়িকার ব্যক্তিগত যাপন নিয়ে যেরকম শোরগোল পড়ল, তা প্রায় নজিরবিহীন। সমসময়েই, বলিপাড়ার দুই নায়িকা, পুরুষ সহকর্মীর সমান পারিশ্রমিক চেয়ে কাজ থেকে বাদ পড়েছেন।
বাকিটা শুনে নিন প্লে-বাটন ক্লিক করে।