মৃত্যদণ্ড! চরম অপরাধের শাস্তি। সিনেমা-সিরিজের আদালত দৃশ্যে এই রায় ঘোষণা হতে অনেকেই দেখেছেন। সেক্ষেত্রে বিশেষ ভাবে দেখানো হয় একটা নিয়ম, রায়দানের পর কলমের নিব ভেঙে দিচ্ছেন বিচারপতি। প্রশ্ন হচ্ছে এমনটা কেন হয়? আসুন শুনে নেওয়া যাক।
মৃত্যুদণ্ডের সাজা শুনিয়ে কলমের নিব ভেঙে দেন বিচারপতি। দীর্ঘদিনের পুরনো এই নিয়ম ভারতেও মানা হয়। প্রশ্ন হচ্ছে, এমন নিয়মের নেপথ্যে কারণ কী?
আসলে, কোনও একটা কারণ নয়। একাধিক ব্যাখ্যা মেলে এই নিয়মের নেপথ্যে। জনপ্রিয় আইনজীবী সুভাষ আলায়াতের কথায়, এই নিয়মের শুরু মুঘল আমলে। সেই সময়ে মৃত্যুদণ্ডের সাজা ঘোষণা হত প্রায়শই। বিচারক যে পালক দিয়ে মৃত্যুদণ্ডের সাজা লিখতেন, সেটি ভেঙে ফেলতেন। এরপর ব্রিটিশ আমলে এই সাজা শুনতে হয়েছে বহু স্বাধীনতা সংগ্রামীকে। সেখানেও নিব ভাঙার নিয়ম বদলায়নি। এখনও না। যদিও এর সঙ্গে আইনের কোনও যোগ নেই। অর্থাৎ সংবিধানে এই নিয়মের কথা লেখা রয়েছে এমন নয়। তাই কোনও কোনও সময় বিচারক এই নিয়ম মানেন না। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই মৃত্যু দণ্ডের সাজা ঘোষণার পর কলমের নিব ভেঙে দেন বিচারপতি। এর নেপথ্যে যে কয়েকটি কারণের কথা শোনা যায়, তার প্রথমটি বিচারপতির মানবিকতা। একই শাস্তি আবারও কেউ যেন না পায়, কলমের নিব ভেঙে প্রতীকী অর্থে সেটাই বোঝাতে চান তিনি। আরও কারণ রয়েছে, যেমন নিব ভেঙে দেওয়া মানে ওই কলম আর ব্যবহার যোগ্য থাকবে না। এমনটাও অনেকে বলেন, যে কলম দিয়ে কারও প্রাণনাশের আদেশ দেওয়া হয়েছে, তা অশুচি। আবার এমন আদেশ শোনানোর পর বিচারকের মানসিক অবস্থাও খুব একটা স্বাভাবিক থাকে না, তাই কলমের নিব ভেঙে বিষয়টির গাম্ভীর্য বোঝানো হয়।
আরও একটা কারণ রয়েছে। আসলে, মৃত্যুদণ্ড চরম পর্যায়ের সাজা। সেক্ষেত্রে এই সাজা বদলানো বা সংশোধনের অবকাশ কম। শীর্ষ আদালতে এই সাজা ঘোষণা হলে অপরাধীর মৃত্যুদণ্ড এড়ানো অসম্ভব। তাই কলম ভেঙে সেটাই কার্যত বুঝিয়ে দেওয়া, এই আদেশের কোনও বদল হবে না।ধর্ষণের ঘটনায় এর আগেও একাধিকবার ফাঁসির রায় শুনিয়েছে এ দেশের সুপ্রিম কোর্ট। হেতাল পারেখ-এর ধর্ষণ মামলায় ধনঞ্জয়ের ফাঁসি থেকে নির্ভয়া কাণ্ডে চার অভিযুক্তের ফাঁসি, তালিকা ছোট নয়। আসলে, মানুষ যতরকম ঘৃণ্য অপরাধ করতে পারে, ধর্ষণ একেবারে তার সামনের সারিতে থাকে। আর ইদানীং কালের ধর্ষণ কাণ্ডের মধ্যে যৌনতার চেয়েও প্রবল ক্ষমতার স্বর। তাই অপরকে একেবারে গুঁড়িয়ে দিতে চাওয়ার আক্রোশ সেখানে ধরা পড়ছে বারবার। সে কারণেই বারবার উঠে আসছে জোরালো শাস্তির দাবি। শুধু এ দেশেই নয়, বিশ্বের নানা দেশেই এ দাবি একইরকম জোরালো। যদিও এই সময়ে দাঁড়িয়ে কোনও রাষ্ট্রে আর ক্যাপিটাল পানিশমেন্ট বজায় রাখা উচিত কি না, তা নিয়ে তর্ক জমতেই পারে। তাই বিভিন্ন দেশের ক্যাপিটাল পানিশমেন্টের ধরন বদলানো হয়েছে। তবে ভারত সহ বিশ্বের বহু দেশে চরম শাস্তি হিসেবে মৃত্যুদণ্ড ঘোষণা করা হয় এখনও।