একদিকে মৃত্যুমিছিল, যানজট, অব্যবস্থা। অন্যদিকে আস্থার ডুব দিয়ে পুণ্যের খোঁজ। কুম্ভমেলা শেষ হলেও এই নিয়ে চর্চা কমেনি। আগামী দিনেও কমবে না বলেই মনে করছেন অনেকে। তবে এই চর্চা, আলোচনা, প্রচারে আসল লাভ স্রেফ ব্যবসা, নাকি ভোটের পুণ্য লাভ করলেন যোগী?
ধর্মকে সামনে রেখে ভোটবাক্স ভরাতে চাইছে বিজেপি। বিরোধীদের এই অভিযোগ নতুন নয়। লোকসভা নির্বাচনের আগে রামমন্দির প্রতিষ্ঠা নিয়ে বিতর্ক জমেছিল ঠিক এই কারণে। এবার পালা কুম্ভের। অনেকেই বলছেন, এতশত আয়োজন স্রেফ হিন্দু আবেগে খোঁচা দিয়ে রাজনৈতিক স্বার্থসিদ্ধি করার প্রয়াস। আর তাতে আসল লাভ একজনের, যোগী আদিত্যনাথ।
নেপথ্যে ঠিক কোন কোন যুক্তি উঠে আসছে?
:আরও শুনুন:
‘মুসলিম লিগ আর সমাজবাদী পার্টি এক’ দাবি যোগী আদিত্যনাথের, কেন এমন তুলনা?
জানুয়ারির মাঝামাঝি শুরু হয় প্রয়াগের কুম্ভমেলা। তবে শুধু কুম্ভ নয়, এই মেলায় প্রচার করা হয় মহাকুম্ভ হিসেবে। যা কিনা ১৪৪ বছর পর অনুষ্ঠিত হচ্ছে। স্বপক্ষে বেশ কিছু ছবি বা ঘটনার কথাও সামনে আনা হয়। দেখানো হয় আগের মহাকুম্ভ ঠিক কেমন ছিল, সেই ছবি। তাতে সময়ের পার্থক্য ছাড়া আরও যে তফাৎ ধরা পড়ে, তা হল ব্যবস্থার। একটাই বিষয় প্রমাণের চেষ্টা করা হয় যে, প্রশাসন মেলা পরিচালনায় এতটুকু খামতি রাখছে না। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা থেকে হাজার হাজার পুলিশ মোতায়েন, কিংবা উন্নত মানের ভিড় নিয়ন্ত্রণ পরিকল্পনা, সবই কুম্ভ শুরু আবহে ঘটা করে প্রচার হয়েছিল। প্রথম কদিন সবকিছু মোটের উপর সুস্থ-স্বাভাবিক ছিল। দলে দলে সাধুদের যোগদান, জনপ্রিয় ধর্মগুরুদের সমর্থন, আর সাধারণ মানুষের ভিড়ে কুম্ভ যেন সত্যিই মহাযজ্ঞে পরিণত হয়েছিল। পাল্লা দিয়ে বাড়তে থাকে ভিড়। মহাকুম্ভে মানুষের, আর সোশাল মিডিয়ায় রিলসের। চারদিকে ভাইরাল কনটেন্টের ছড়াছড়ি। এরই মাঝে মৌনি অমাবস্যায় পদপিষ্টের ঘটনা, প্রাণ গেল বহু নিরীহ ভক্তের। তাতে যেন কুম্ভ নিয়ে চর্চা আরও বাড়ল। বিরোধীরা কোমর বেঁধে নামলেন, অভিযোগের তীরে বিদ্ধ করতে থাকলেন যোগী সরকারকে। গোদের উপর বিষফোঁড়া হল ভয়ঙ্কর অগ্নিকাণ্ড। অভিযোগ উঠতে শুরু করল মেলার ব্যবস্থা নিয়েও। কুম্ভ পৌঁছতে যানজট আর ভোগান্তির শিকার হলেন হাজার হাজার ভক্ত। সোশাল মিডিয়ায় ছড়াল সেইসব খবরও। এরইমাঝে সামনে এল জল দূষণ। কেন্দ্রের রিপোর্টেই দাবি করা হল, কুম্ভের জলে স্নান করলে ভয়ঙ্কর রোগের সম্ভাবনা থাকছে। বিরোধীরা যেন হাতে চাঁদ পেলেন! অভিযোগ, পালটা অভিযোগে বিদ্ধ হতে থাকল যোগী সরকার। তাতে মেলার ভিড় কি কমল?
:আরও শুনুন:
কুম্ভমেলায় স্বাগত মুসলিমরাও, তবে বিশেষ শর্তে, যোগী আদিত্যনাথ বলছেন…
একেবারেই না। বরং আরও জমে উঠল মহাকুম্ভ। এরই মাঝে প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কিংবা আম্বানি-আদানিরা কুম্ভে এলেন। আস্থার ডুব দিয়ে প্রশংসায় ভরালেন যোগী আদিত্যনাথের প্রশাসনকে। দরাজ সার্টিফিকেট দিলেন মোদিও। ফলাহ করে সেসবেরও প্রচার হল। সুতরাং বিরোধী শিবিরের অভিযোগ, আর সরকার পক্ষের প্রশংসা সবকিছুই যাকে কেন্দ্র করে, তিনি যোগী আদিত্যনাথ। সুতরাং কুম্ভকে সামনে রেখে গোরক্ষনাথ মঠের অধ্যক্ষ তথা উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী বিশেষ প্রচার পেলেন তা বলাই যায়। কুম্ভ সংক্রান্ত সব খবরের সঙ্গেই তাঁর নাম শোনা গিয়েছে। মোদি বা অমিত শাহ কুম্ভে গেলেও, সঙ্গে দেখা গিয়েছে সেই যোগীকে। আবার সংসদে কুম্ভ নিয়ে প্রশ্ন উঠলে, গর্জে উঠেছেন যোগীই। তার থেকে এটুকু নিশ্চিতভাবে বলা যায়, কুম্ভের চর্চা তাঁর লাভের ঝুলি অবশ্যই ভরিয়েছে। অথচ, এই কিছুদিন আগেও বড়সর প্রশ্ন উঠেছিল বিজেপিরে যোগী আদিত্যনাথের ভূমিকা নিয়ে। রামমন্দির প্রতিষ্ঠার পরও লোকসভায় উত্তরপ্রদেশে বিজেপির ফলাফল অবাক করেছিল সবাইকে। তারপর আরএসএস-এর সঙ্গে বিরোধিতার অভিযোগও বেশ শোরগোল ফেলেছিল। কুম্ভমেলা হয়তো এই সব ঘোলা জল পরিস্কার করে দিয়ে গেল। বিশেষজ্ঞরা দেখছেন, কুম্ভকে কেন্দ্র সবথেকে বেশি প্রচার পেয়েছে যোগী আদিত্যনাথের প্রশাসনই। আগামী নির্বাচনে তার প্রভাব যে একেবারে পড়বে না, তা মানতে নারাজ ওয়াকিবহাল মহল। এবার মহাকুম্ভ কি সত্যি সত্যিই ভোটের ‘পুণ্য’ লাভ হবে যোগীর, তা বলবে সময়!