৫৪ বছর। নেহাত কম সময় নয়। এতদিনে অনেক কিছুই হতে পারে। কিন্তু এক ব্যক্তি এই এতগুলো বছর লাগিয়েছেন স্রেফ গ্র্যাজুয়েট হতে। শুনতে অবাক লাগলেও সত্যি। ৫৪ বছর চেষ্টার পর অবশেষে স্নাতক হয়েছেন তিনি। কিন্তু কী এমন হয়েছিল যার জেরে স্রেফ গ্র্যাজুয়েট হতেই তাঁর এতগুলো বছর লেগে গেল? আসুন শুনে নেওয়া যাক।
আচ্ছা, গ্র্যাজুয়েট হতে ঠিক কত সময় লাগতে পারে? সাধারণ নিয়মে ৩-৪ বছর। আর কেউ যদি একবারে পাশ করতে না পারে তাহলে বড় জোর ৫-৬ বছর। তার বেশি সময় বোধহয় স্নাতক হওয়ার জন্য লাগা উচিত নয়। কিন্তু সেই সব ধারণা ভুল প্রমাণ করেছেন এক মার্কিন ব্যক্তি। স্রেফ গ্র্যাজুয়েট হতেই তিনি সময় লাগিয়েছেন দির্ঘ ৫৪ বছর।
আরও শুনুন: অন্য কেরালা স্টোরি! দক্ষিণী রাজ্যের মন্দির চত্বরে নিষিদ্ধ RSS-এর মহড়া
আর্থার রোস। যার বর্তমান বয়স ৭১। স্কুলের পাঠ শেষ করে অন্যান্য বন্ধুদের সঙ্গে তিনিও কলেজে পা রেখছিলেন। সেটা অবশ্য ১৯৬৯ সাল। ইংরাজি সাহিত্য নিয়ে স্নাতক স্তরের পড়াশোনা শুরু করেন তিনি। কিন্তু বছর ঘুরতে না ঘুরতেই ইংরাজি থেকে মন উঠে যায় তাঁর। সময় কাটাতে শুরু করেন কলেজে নাটক বিভাগে। নিজের ক্লাস না করে, নাটকের ক্লাসেই বুঁদ হয়ে থাকতেন আর্থার। শুধুমাত্র ক্লাস করাই নয়, সেখানকার বন্ধুদের সঙ্গে জোর কদমে থিয়েটার করাও শুরু করেন তিনি। জীবন থেকে ইংরাজি সাহিত্যের পাঠ একেবারেই চুকিয়ে দিলেন। সে নিয়ে কোনও আক্ষেপ ছিল না তাঁর। তখন তিনি মনে প্রাণে অভিনেতা হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন। তৎকালীন থিয়েটার ব্যক্তিত্বদের সঙ্গে তখন তাঁর ওঠাবসা। একপ্রকার ভেবেই নিয়েছিলেন অভিনয়কেই নিজের পেশা হিসেবে বেছে নেবেন। কিন্তু বিধি বাম। সেখানেও বিস্তর গণ্ডগোল। যা কিছু স্বপ্ন দেখতেন , সামনে থেকে তা দেখার পর একেবারেই পোষাল না আর্থারের। বুঝলেন, এই কাজ তাঁর ভালোবাসার হলেও পেশা হিসেবে একে বেছে নেওয়া অসম্ভব। তাই নাটক নিয়েও গ্র্যাজুয়েশন শেষ হল না তাঁর। এদিকে অনেকগুলো বছর এমনি নষ্ট হয়েছে। তাই আর কোনও ভুল পদক্ষেপ নেবেন না বলেই ঠিক করেন আর্থার।
আরও শুনুন: মাতৃগর্ভেই শিশুকে শোনাতে হবে গীতা-রামায়ণ, ‘গর্ভ সংস্কার’ প্রকল্প শুরু আরএসএস-এর শাখার
তাই সম্পূর্ন অন্য এক জগতে পা রাখলেন। পড়াশোনা শুরু করলেন ওকালতি নিয়ে। সেখানে ডিগ্রি অর্জন করে পেশা হিসেবে ওকালতিকেই বেছে নিলেন। দীর্ঘ ৩৫ বছর নির্দিষ্ট একটি ফার্মে কাজও করলেন। কিন্তু সবসময় মনে হত, তিনি স্নাতক স্তরের পড়াশোনা শেষ করেননি। তাই দীর্ঘ কর্মজীবনের পর ফের ভরতি হন সেই পুরনো ইউনিভার্সিটিতে। এবার অবশ্য ইংরাজি বা নাটক, কোনোটাই নয়। পড়াশোনা শুরু করলেন ইতিহাস নিয়ে। সেটা ২০১৬ সাল। তারপর আরও বছর পাঁচেক। শেষপর্যন্ত স্নাতক স্তরের পড়াশোনা সম্পূর্ন হল তাঁর। ৭১ বছর বয়সে গ্র্যাজুয়েট হলেন তিনি। এমন নজির আর কারও নেই। তাই বিশ্ব রেকর্ডের খাতাতেও তাঁর নাম উঠেছে। তাঁকে তকমা দেওয়া হয়েছে, ‘ওয়ার্ল্ডস স্লোয়েস্ট স্টুডেন্ট’ হিসেবে। যদিও এ নিয়ে কোনও আক্ষেপ নেই আর্থারের। বরং এই বয়সে পৌঁছেও যে তরুণদের সঙ্গে বসে ক্লাস করেছেন, এতেই বেজায় খুশি হয়েছেন তিনি। সেইসঙ্গে যোগ হয়েছে অবশেষে গ্র্যাজুয়েট হওয়ার আনন্দ।