ঘূর্ণায়মান জেল! শুনেছেন কখনও এমন আশ্চর্য কয়েদখানার কথা। দোষীদের সাজা দেওয়ার এমনই বাহারি আয়োজন কোথায় রয়েছে? আসুন, শুনে নিই।
মেলায় নাগরদোলা নিশ্চয়ই দেখেছেন। অনেকে হয়তো চড়েছেন তাতে। তবে নাগরদোলার মতোই জেলখানা, এমনটা শুনেছেন কি?
আরও শুনুন: ফেলে দেওয়া প্লাস্টিকের বোতল দিয়েই গড়ে উঠেছে দ্বীপ, পেয়েছে সরকারি স্বীকৃতিও
ঘূর্ণায়মান এক কারাগার। যেখানে একটিই মাত্র দরজা। আর সেই দরজার স্থান বদলে যায় বারবার। ফলে জেলখানার বাসিন্দাদের জন্য আক্ষরিক অর্থেই এই জেল ছিল গোলকধাঁধা।
আমেরিকার ইন্ডিয়ানার ক্রফোর্ডসভিল শহরে সত্যিই রয়েছে এমনই এক আশ্চর্য কয়েদখানা। যা ঘোরে। ১৮৮১ সালে তৈরি হয়েছিল এই রোটারি জেল। সারা পৃথিবী জুড়ে মোট ১৮টি এমন জেলখানা বানানো হয়েছিল সেসময়। তবে ইন্ডিয়ানার এই জেলটি বাদ দিয়ে কোনওটাই আজ আর ঘোরে না।
জেল বা কয়েদখানার উদ্দেশ্য তো দোষীদের বন্দি করে রাখা। তা সেই জেলের ঘূর্ণায়মান হওয়ার হঠাৎ কী প্রয়োজন পড়ল, ভাবছেন তো? সেখানেই তো আশ্চর্য। আসলে এই দ্বিতল জেলখানার ছিল আদতে একটিই দরজা। একমাত্র কোনও বন্দিকে বের করার দরকার হলে তবেই ঘূর্ণায়মান দরজাটিকে নির্দিষ্ট কয়েদখানার সামনে হাজির করা হত। এর ফলে কয়েদিদের পালানোর সম্ভাবনা কমত অনেকটাই।
খরচ কমানোর ভাবনা থেকেই একসময় তৈরি করা হয়েছিল এমন জেলখানা। আসলে এই ধরনের জেল বন্দিদের জন্য এতটাই সুরক্ষিত ছিল যে নজরদারির জন্য বেশি পুলিশ মোতায়েন করতে হত না। জেলবন্দিদের সঙ্গে পুলিশের যোগাযোগ কমিয়ে আনার ভাবনা থেকেই তৈরি করা হয়েছিল এই আশ্চর্য ঘূর্ণায়মান জেলখানার।
আরও শুনুন: দেবর্ষি নারদের বল্কল থেকেই তৈরি ভারকালা সমুদ্রসৈকত, শোনায় পাপমুক্তির কাহিনি
অনেকটা অষ্টভুজাকৃতির দেখতে ছিল দোতলা এই কয়েদখানা। প্রত্যেক তলায় ছিল একটি করে দরজা। তবে বন্দিদের কক্ষগুলিকে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দরজার সামনে আনলে তবেই জেলখানা থেকে বেরোতে পারতেন কয়েদিরা।
সব মিলিয়ে মোট ৩৭ জন বন্দিকে আটকে রাখার ব্যবস্থা ছিল এই জেলখানায়। তবে খুব দাগী আসামীদের রাখা হত না এই রোটারি জেলে। বরং যারা ছিঁচকে মামলায় ধরা পড়ত, তাদেরই পাঠানো হত এখানে।
আশ্চর্যের কথা, দুটো ফাঁসিরও সাক্ষী রয়েছে এই জেলখানা। ১৮৮৫ ও ১৮৮৬ সালে দুই আসামীকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছিল এখানে। ১৯৩৮ সাল নাগাদ জেলটির ঘোরা বন্ধ করে দেওয়া দেওয়া হয়। একটি দুর্ঘটনায় নাকি চোট পেয়েছিলেন বেশ কয়েকজন কয়েদি।
১৯৭৩ সালে অবশেষে কারাগার হিসেবে যাত্রা শেষ হয় ইন্ডিয়ানার এই বিশেষ রোটারি জেলের। আজও সেই রোটারি জেল ঘোরে বটে। তবে সেখানে এখন রয়েছে একটি রেল মিউজিয়াম। দেশ বিদেশ থেকে পর্যটকেরা আসেন নিজের চোখে এই ঘূর্ণায়মান জেলখানার কারিগরি প্রত্যক্ষ করতে। জেলখানার ইতিহাসে আজও এক আশ্চর্য ইন্ডিয়ানার এই ঘুরন্ত কয়েদখানা।