পথে নেমে পথ হারানোর কথা গানে শুনেছেন। কিন্তু চোখে দেখেছেন কি? এই পথ দেখলে আপনার মনে হতে পারে এই পথ নিশ্চয়ই হারিয়েছে। কেন জানেন? কারণ, এ-পথ এতই সরু, সেখানে একজনের বেশি যাতায়াত করা যায় না। তবুও সাবধানতা অবলম্বন করতে সেখানে বসানো হয়েছে ট্রাফিক-লাইট। আসুন আজ তাহলে শুনে নিই, বিশ্বের সবথেকে সংকীর্ণ পথের গল্প।
এ দেশের প্রাচীনতম নগরীর কথা বললে যেমন শুরুতেই আসে বেনারসের কথা। তবে শুধু প্রাচীনত্বের ইতিহাসেই নয়, সরু রাস্তা, কানাগলির কথা উঠলেও কিন্তু বেনারস সমান গুরুত্ব পায়। কারণ সে তল্লাট ছেয়ে গেছে সরু গলিতে। তবে এবার আর বেনারস নয়। বেনারসের গলিরাস্তাকেও টক্কর দিতে পারে এই গলিখানা। আর তা এতই সরু যে একের বেশি দুজন গিয়ে ভিড়লেই আটকে যাবে বাইরে আসার পথ!
শুনে মনে হতে পারে এ নিশ্চয়ই আজগুবি কোনও গল্প। কিন্তু না। এ আদৌ কোনও গল্প নয়। একেবারে খাঁটি কথা। আমাদের চেনা ছকের বাইরে যা কিছু, তা নিয়েই আমাদের জীবনে এতরকম বৈচিত্র। আর তাই যে জিনিসকে ছোটোখাটো দেখতে অভ্যস্ত, একটু বাড়লেই তাকে মনে হয় বেঢপ। অন্যদিকে যে জিনিসকে পেল্লায় মস্ত করে চিনি, তাতে যদি একটুও কমতি দেখা যায়, মনে হয় তা বুঝি অতি ক্ষুদ্র। কিন্তু এখন যা নিয়ে কথা হচ্ছে, তাতে কিন্তু মোটেও কমতি নেই। বরং ওই কমতি দিয়েই ভরাট হয়েছে সেদিকের পথ। ঠিক শুনেছেন। এ হল বিশ্বের সংকীর্ণতম পথ। কারণ এই পথের দৈর্ঘ্য প্রায় ৩২ ফুটের কাছাকাছি। এতদূর শুনে আপনার মনে হতে পারে, এতে আবার আশ্চর্যের কী আছে? কিন্তু মজাটা অন্য জায়গায়। তা হল এই রাস্তার প্রস্থ। কারণ এই রাস্তার প্রস্থ মাত্র ১৯ ইঞ্চি! আর নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন, মাত্র ১৯ ইঞ্চির ব্যবধানে একই সময় একই সঙ্গে দু’জন মানুষের হেঁটে যাওয়া অসম্ভব। তাই এই রাস্তায় পেরোনোর সময় একা একা হাঁটা ছাড়া উপায় নেই।
কিন্তু, একজন হেঁটে যেতে যেতে যদি আচমকাই উলটো পথে কেউ চলে আসেন, তাহলে? ধাক্কা অনিবার্য। কারণ একজনকে পাশ কাটিয়ে অন্যজনের হেঁটে যাওয়া সম্ভব নয়। আর সেজন্যেই এখানে নেওয়া হয়েছে পথদুর্ঘটনা প্রতিরোধক ব্যবস্থা। পাকাপাকিভাবে বসানো হয়েছে ট্র্যাফিক সিগন্যাল। ট্র্যাফিকের লাল আলো দেখামাত্র থেমে যান মানুষ। অপেক্ষা করেন সবুজ সংকেত না আসা পর্যন্ত। আর এই সিগন্যাল চালনা করেন পথচলতি লোকজনই। বোতাম টিপে এই সিগন্যালের গতিবিধি নিয়ন্ত্রণ করা হয়।
আরও শুনুন: ট্রেনের সঙ্গে দুর্ঘটনার আঁতাঁতে ত্রস্ত! মোদি জমানায় সড়ক দুর্ঘটনাও কেড়েছে ১৫ লক্ষ প্রাণ
নিশ্চয়ই আপনাদের জানতে ইচ্ছে করছে এই আশ্চর্য রাস্তাখানি কোথায় আছে? তাহলে শুনুন। এই রাস্তাখানা আছে প্রাগে, সেখানকার প্রাচীনতম এলাকা স্ট্রানায় পথচারীরা তাঁদের দৈনন্দিন চলাফেরার জন্য ব্যবহার করেন এই গলি।
তাহলেই ভাবুন, ‘সেফ ড্রাইভ, সেভ লাইফ’-এর এই বিখ্যাত স্লোগান যে শুধু বিদ্যুৎগতিতে চলা মোটরগাড়ির জন্যেই ব্যবহৃত হবে তা নয়, নিতান্ত একটা পায়ে হাঁটা গলিপথের জন্যেও মোক্ষম সতর্কবার্তা হয়ে উঠতে পারে।