৯০ নয়। ৭০-রও নয়। সারা সপ্তাহে মাত্র ২৪ ঘন্টা কাজ করলেই চলবে। শুনতে অবাক লাগলেও সত্যি। রয়েছে এমনও এক দেশ, যেখানে সারা সপ্তাহে মাত্র ২৪ ঘণ্টা কাজ করাই নিয়ম। ঠিক কোথায় রয়েছে এমন দেশ? আসুন শুনে নেওয়া যাক।
সারা সপ্তাহে কাজ করতে হবে ৯০ ঘন্টা! এমনটাই দাবি এল অ্যান্ড টি চেয়ারম্যানের। শুধু তাই নয়, রবিবার কর্মীদের কাজে আসার নিদান দিয়ে অদ্ভুত এক যুক্তি দিয়েছেন তিনি। দাবি, আর কতক্ষণ স্ত্রীর দিকে তাকিয়ে বসে থাকবেন! এই কটাক্ষ মোটেও ভালোভাবে নেয়নি নেটদুনিয়া। শুরু হয়েছে বিতর্ক। বিভিন্নভাবে পালটা জবাব দেওয়া হয়েছে শিল্পপতিকে। একইসঙ্গে চর্চায় উঠে এসেছে বিভিন্ন দেশের কাজের হিসাব।
সপ্তাহে সত্তর ঘণ্টা কাজ। তাতেই উন্নতি দেশের। ইনফোসিস কর্তা নারায়ণমূর্তি এ প্রস্তাব অনেকেই ভালোভাবে নেননি। একইভাবে এল অ্যান্ড টি চেয়ারম্যানের ৯০ ঘণ্টা কাজের নিদান নিয়েও বিতর্ক চলতে থাকে। অবশ্য এই আলোচনা বিতর্ক থেকে একটা বিষয় আগাম আভাস মিলতেই পারে, তা হল ভারতীয় কর্মসংস্কৃতির আগামী রূপরেখা যে ঠিক কী হতে চলেছে! নেটদুনিয়া যাই বলুক, বাস্তবে বহু সংস্থার কর্তারাই নারায়ণমূর্তির সঙ্গে সহমত পোষণ করেন। স্রেফ ইনফোসিস কর্তার পরামর্শ দেওয়ার ধরণটা মানতে পারেননি কেউ কেউ। কিন্তু তাঁরাও মনে করেন, দেশের তরুণ প্রজন্ম যদি এভাবে কর্মযজ্ঞে ঝাঁপ দেন, তাতে তাঁদের উন্নতি, আর দেশেরও। ভারতের মতো দেশের উন্নতির জন্য তা জরুরি, কারণ বিশ্বের মানচিত্রে অর্থনীতির নিরিখে নিজের জায়গা করে নিতে হলে শ্রমের বিনিয়োগ খুব জরুরি। সুতরাং সপ্তাহে ৭০ ঘণ্টা বা ৯০ ঘণ্টা কাজ যে চাইলেই করানো যায়, এই দলে নাম লেখাবেন এ দেশের বহু শিল্পপতি। কিন্তু ভারতের বাইরেও কি ছবিটা একইরকম?
একেবারেই নয়। বরং এমনও এক দেশ রয়েছে যেখানে মাত্র ২৪.৭ ঘণ্টা কাজ করতে হয় সারা সপ্তাহে। কথা বলছি ভানাতুয়া সম্পর্কে। এই দেশের ৯৬% শতাংশ কর্মজীবী মাত্র এইটুকু সময় কাজ করেন। এবং সেটাই যথেষ্ট মনে করেন তাঁদের নিয়োগকারী সংস্থা। কর্মীরা ব্যক্তিগত জীবন কাটুক আরও আনন্দে, এমনটাই চায় সে দেশের অধিকাংশ সংস্থা। এরপরই কিরিবাতি। এখানে গড় কাজের সময় ২৭.৩ ঘণ্টা। এও সারা সপ্তাহের হিসাবে। দেশের মোট জনসংখ্যার মাত্র ১০% কাজ করেন ৫০ ঘণ্টার বেশি, বাকিরা সারা সপ্তাহে ২৭ ঘণ্টা কাজ করলেই ছুটি পান। মাক্রোনশিয়ায় সারা সপ্তাহে কাজ করতে হয় ৩০ ঘণ্টা, আবার রেওয়ান্ডায় সাপ্তাহিক গড় কাজের সময় ৩০.৪ ঘণ্টা। সময়ের হিসাব ৩০ ঘণ্টা পেরোয় সোমালিয়ায়। তাও বেশি না, মাত্র ১ ঘণ্টা। এই দেশের বাসিন্দারা সারা সপ্তাহে কাজ করেন ৩১.৪ ঘণ্টা। নেদারল্যান্ড, ইরাক, ওয়ালিস, ইথিওপিয়ার মতো দেশেও সারা সপ্তাহে কাজের সময় গড়ে ৩১ ঘণ্টা। তবে বাধ্যতামূলক নিয়ম নয়। সব দেশেই কিছু সংখ্যক মানুষ সপ্তাহে ৫০ ঘণ্টা কাজ করেন। তালিকার শেষে রয়েছে কানাডা। এখানে গড় কাজের সময় সপ্তাহে ৩২ ঘণ্টা। তবে ভারতের হিসাবটা একেবারেই আলাদা। এখানে সারা সপ্তাহে ৪৭ ঘণ্টা কাজ করতে হয় প্রায় ৫১% কর্মজীবীকে। বাকীরা আরও বেশি। বেশি সময় ধরে কাজের হিসাবে গোটা বিশ্বে ভারতের স্থান দ্বিতীয়। সুতরাং নারায়ণ মূর্তিরা যে মন্তব্য করেছেন তা একেবারেই অপ্রাসঙ্গিক তা নয়। বরং দেশের বর্তমান অবস্থা ভালোমতো জেনেই এই সময়ের হিসাব দিয়েছেন ভারতের প্রথম সারির শিল্পপতিরা।