পড়ুয়া জীবনে হাতখরচ চালাতে কমবেশি অনেকেই টুকটাক কাজকম্ম করেন। কেউ করেন টিউশনি, তো কেউ অন্য কিছু। তবে নিজের ডিম্বাণু বিক্রি করে নিজের পড়াশোনার খরচ সামলানোর এমন নজির বোধহয় আগে দেখা যায়নি। আসুন, শুনে নিই সেই তরুণীর কথা।
পড়াশোনার খরচ সামলাতে হয় নিজেকেই। তার মধ্যে কাঁধে রয়েছে বিস্তর ঋণের বোঝা। আর সেসব সামলাতেই হিমশিম ২৮ বছরের তরুণী।
না, তাই বলে কোনও মতেই পড়াশোনা ছাড়তে রাজি নন তিনি। বরং পড়াশোনার খরচ সামলাতে পরিশ্রম করে চলেছেন দিনরাত। পড়াশোনার পাশাপাশি তিন তিনটি চাকরি করেন তিনি। তাঁর পাশাপাশি আরও একটা কাজও করেন তিনি। কলেজের খরচ মেটাতে বিক্রি করেন নিজের ডিম্বাণু। এ কাজে শরীরের যথেষ্ট ঝুঁকি রয়েছে জেনেও সেই কাজ থেকে ফিরতে পারেননি তরুণী। পড়াশোনার প্রতি এতটাই আগ্রহ তাঁর।
আরও শুনুন: অভাব, বারবার ব্যর্থতা, তবু ছাড়েননি হাল! সিভিল আদালতের বিচারকের পদে সবজিবিক্রেতার মেয়ে
আমেরিকার মতো দেশে পড়াশোনা খরচ চালানো এমনিতেই চাড্ডিখানি কথা নয়। তার উপর স্নাতক স্তরে পড়াশোনার সময়েই পড়াশোনার খাতে বেশ কিছু ঋণ নিয়ে রেখেছেন নিউ ইয়র্কের বাসিন্দা কাসান্দ্রা জোনস। অভিভাবক বলতে মাথার উপর তেমন কেউ নেই। তাই নিজের সমস্ত ভার তুলে নিতে হয়েছে নিজের কাঁধেই। সব মিলিয়ে ব্যাঙ্ককে এখনও ১ লক্ষ ৬৭ হাজার ডলার ফেরৎ দিতে হবে কাসান্দ্রাকে। এদিকে, স্নাতকোত্তর পড়াশোনার জন্য প্রতি বছর কলেজে জমা করতে ৪০ হাজার ডলার করে। সব মিলিয়ে আর্থিক দিক দিয়ে খুবই কঠিন অবস্থা তরুণীর।
তাই পড়াশোনার পাশাপাশি করেন হাড় ভাঙা পরিশ্রম। তিন-তিনটি পার্টটাইম কাজের পরেও অর্থ সংকুলান করে উঠতে পারেন না কাসান্দ্রা। এমনই এক সময়ই বন্ধুর কাছ থেকে ডিম্বাণুদানের কথা জানতে পারেন কাসান্দ্রা। দ্বিতীয় বার ভাবেননি তিনি। পড়াশোনা চালাতে গেলে যে কোনও উপায়ে অর্থ তাঁকে যে উপার্জন করতেই হবে। তার পর থেকেই ডিম্বাণুদাতা হিসেবে পথচলা শুরু তরুণীর। ক্যালিফর্নিয়ার একটি ফার্টিলিটি সেন্টারে ডিম্বাণু দান করা শুরু করেন কাসান্দ্রা। ডিম্বাণু প্রতি মিলত ১০ হাজার ডলার করে।
আরও শুনুন: বোনকে কোলে নিয়েই স্কুলে, খুদের পড়াশোনায় আগ্রহ দেখে শিক্ষার ভার নিলেন মন্ত্রী
আমেরিকায় অবশ্য ডিম্বাণুদান কোনও নতুন বিষয় নয়। ব্যাপারটি নিয়ে তেমন ছুৎমার্গও নেই বাসিন্দাদের মধ্যে। তবে সম্প্রতি একটি গবেষণায় জানা গিয়েছে, ডিম্বাণুদান নাকি স্তন ক্যানসারের সম্ভাবনা বাড়িয়ে তোলে। এর জন্য বিশেষ হরমোনাল ইনজেকশন নিতে হয় ডিম্বাণুদাতাকে। যা যথেষ্ট শারীরিক ঝুঁকির বলেই জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞেরা।
এসব জেনেও পিছিয়ে আসতে পারেননি তরুণী। ইতিমধ্যেই পাঁচ দফা ডিম্বাণুদান প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে গিয়েছেন কাসান্দ্রা। সেখান থেকে ৫০ হাজার ডলার আয়ও করেছেন তিনি। অবশ্য সেই অর্থ চোখেও দেখতে পাননি তরুণী। কারণ তার পুরোটাই ব্যায় হয়ে গিয়েছে ঋণের কিস্তি মেটাতেই।
এত কিছুর পরেও ঋণের সামান্য অংশই শোধ করতে পেরেছেন তিনি। তবে হাল ছাড়তে নারাজ কাসান্দ্রা। পরিশ্রম করতে ভয় পান না তিনি। পড়াশোনা করে জীবনে একদিন প্রতিষ্ঠিত হবেনই, এই আশাতেই লড়ে চলেছেন তরুণী। সম্প্রতি তরুণীর এই লড়াইয়ের গল্প ছড়িয়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। তাঁর পরিশ্রম ও লড়াইয়ের প্রশংসা না করে পারেননি নেটিজেনরাও।