ভারতবর্ষের মতো দেশে প্রায়শই প্রশ্নের মুখে পড়ে নারী-নিরাপত্তা। বিভিন্ন অপরাধমূলক কাজকর্মের বাড়বাড়ন্তই সে প্রশ্ন উসকে দেয়। দেশের বাসিন্দাদের মধ্যে তো বটেই, ভিনদেশের মানুষদের মধ্যেও এর ফলে একটা আশঙ্কামূলক বার্তা ছড়িয়ে পড়ে। আর তা দূর করতেই অভিনব পদক্ষেপ এক তরুণীর। সাইকেলে একা একা ভারত ঘুরেই তিনি প্রমাণ করতে চান যে, এই দেশ নারীদের জন্য নিরাপদ। আসুন শুনে নিই তাঁর ভারত-যাত্রার গল্প।
ভারত-জোড়ো যাত্রা শুরু করেছেন রাহুল গান্ধী। রাজনৈতিক আদর্শগত লড়াইকে সাধারণ মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে দিতেই তাঁর এই অভিনব পদক্ষেপ। ঘৃণা সরিয়ে রেখে ভালবাসার বার্তা দিচ্ছে সে-যাত্রা। এ যেমন রাজনৈতিক দলের যাত্রা, তেমনই ব্যক্তিগত প্রচেষ্টায় আরও এক ভারত-যাত্রা শুরু করেছেন ২৪-এর তরুণী আশা মালব্য। এই দেশে নারীরা যে নিরাপদ, সেই বার্তা ছড়িয়ে দিতেই তাঁর এই যাত্রা।
আরও শুনুন: ইংরেজি বলতে না পারায় একদা সয়েছেন বিদ্রুপ, IAS হয়ে দেশের সেবায় ব্রতী সুরভি
নারী-নির্যাতনের বিরুদ্ধে সচেতনতা মূলক প্রচার আছে। আছে শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষের অক্লান্ত চেষ্টা। তা সত্ত্বেও দেশে নারীদের উপর নির্যাতনের ঘটনা যে ঘটেই চলেছে, তার প্রমাণ দেয় তথ্য-পরিসংখ্যান। নারীদের বিরুদ্ধে অপরাধের ঘটনা এখনও জায়গা করে নেয় সংবাদের শিরোনামে। সেই সঙ্গে প্রতিদিনের জীবনযাপনে নারীদের যে ধরনের প্রতিবন্ধকতা এবং অবদমনের মুখে পড়তে হয়, তা-ও খুব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। খোদ প্রধানমন্ত্রী এই বিষয়ে দেশবাসীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিলেন। জানিয়েছিলেন, এই মানসিকতার বদল হওয়া দরকার। ‘মিসোজিনি’-র বিরুদ্ধে লড়তে হবে দেশবাসীকেই। তবু নারী-নিরাপত্তা নিয়ে দেশের মানুষ যে খুব স্বস্তিতে, এমনটা বলা যায় না। এই অস্বস্তি দেশ ছাড়িয়ে পৌঁছেছে বিদেশের মাটিতেও। বহু ভিনদেশি মানুষও এই দেশকে নারীদের জন্য নিরাপদ বলে মনে করেন না। সেই কথা শুনেই অভিনব পরিকল্পনা করেন এই তরুণী। ঠিক করেন একটা সাইকেল সম্বল করেই তিনি গোটা দেশটা ঘুরে দেখবেন। আর প্রমাণ করে দেবেন যে, এ দেশ নারীদের জন্য নিরাপদ।
আরও শুনুন: পড়ার খরচ জোগাতে রাতভর চা বিক্রি, পরিশ্রমী পড়ুয়াকে কুর্নিশ নেটদুনিয়ার
শুধু ভাবনাতেই আটকে থাকেননি তিনি। শুরু হয়েছে ভাবনা বাস্তবায়নের কাজ। মধ্যপ্রদেশের এই তরুণী গত নভেম্বর থেকে শুরু করে দিয়েছেন তাঁর যাত্রা। সে-রাজ্যের পর্যটন বিভাগ থেকে তাঁকে দেওয়া হয়েছে একটি সাইকেল। এ ছাড়া আনুষাঙ্গিক কিছু জিনিসও পেয়েছেন তিনি। তবে তাঁর আসল মূলধন, সাহস। একা একা সাইকেলে যে গোটা দেশ ঘোরা যায়, এমনটা ভাবা যায় বটে, তবে প্যাডেলে পা দিয়ে তা করে দেখানো চাট্টিখানি কথা নয়। সেই কঠিন কাজটিই করে চলেছেন আশা। তিনি নিজে একজন অ্যাথলিট, পর্বতারোহণেও দক্ষ। দিনে প্রায় ১২০ থেকে ২৫০ কিমি সাইকেল চালান তিনি। যখন যেখানে পৌঁছান, সেখানকার পুলিশ ও জেলা শাসকের সঙ্গে দেখা করেন। তাঁদের জানান, তাঁর যাত্রার উদ্দেশ্য। তাঁরাই আশার থাকার ব্যবস্থা করে দেন। ইতিমধ্যেই বেশ কয়েকটি রাজ্য ঘুরে, আপাতত তিনি পৌঁছেছেন কেরলে। সেখানকার মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়নের সঙ্গেও দেখা করেছেন তিনি। আশার আশা, আগামী বছরের সেপ্টেম্বর নাগাদ তাঁর এই ভারত-যাত্রা শেষ হবে। দিল্লিতে পৌঁছে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে দেখা করেই তিনি তাঁর গন্তব্য সম্পূর্ণ করতে চান।
আশা জানিয়েছেন, দেশের সাধারণ মানুষকে তিনি জানাতে চান যে, এই দেশ নারীদের জন্য নিরাপদ। আর তাই বিভিন্ন জায়গায় পৌঁছে সেখানকার স্কুল-কলেজে গিয়েছেন আশা। পড়ুয়াদের জানিয়েছেন তাঁর অভিজ্ঞতার কথা। সেই গল্প তাঁদের প্রেরণা জুগিয়েছে। আর আশার প্রেরণা কে? আশ জানিয়েছেন, এই কাজে প্রেরণা জুগিয়েছেন তাঁর মা। মায়ের উৎসাহে শুরু হওয়া এই যাত্রা যেন দেশ সম্পর্কে একটা সদর্থক ছবি তৈরি করতে পারে সকলের মনে, এমনটাই প্রত্যাশা আশার।