কারওর চিংড়িতে অ্যালার্জি, তো কারওর বেগুনে। তবে অভিকর্ষ বলে অ্যালার্জির কথা শুনেছেন কখনও? তেমনটাই দাবি এই তরুণীর। আর সেই জ্বালায় নাকি দিনের ২৩ ঘণ্টাই তাঁকে কাটাতে হয় বিছানায়। আসুন, শুনে নিই তাঁর কথা।
অভিকর্ষ বল না থাকলে কী হত বলুন তো? ফলমূল গাছ থেকে মাটিতে না-পড়ে উড়ে যেত মহাশূন্যে। ঘর-বাড়ি ইমারত কোনও কিছুই সোজা দাঁড়িয়ে থাকতে পারত না মাটিতে। তবে সেই অভিকর্ষ বলের কারণেই নাকি বেজায় বিপাকে তরুণী। তিন মিনিটের বেশি সময়ের বেশি মাটিতে দাঁড়াতেই পারেন না তিনি। দিনের অন্তত ২৩ ঘণ্টাই বিছানায় কাটাতে বাধ্য হন তরুণী। আর এত সব সমস্যার নেপথ্যে রয়েছে ওই অভিকর্ষ বল।
আরও শুনুন: নিজেকে মৃত মনে করেন রোগী, আশ্চর্য এক অসুখ কোটার্ড সিনড্রোম
অনেক ধরনের অ্যালার্জির কথাই শোনা যায়। কেউ সামুদ্রিক খাবার খেতে পারেন না, তো কারওর ফুলের গন্ধ শুকলেই শুরু হয়ে যায় হাঁচি। কারওর আবার ধুলোতে অ্যালার্জি। তবে আমেরিকার ব্যাঙ্গোরের বাসিন্দা জনসনের রয়েছে এক বিরল অ্যালার্জি। অভিকর্ষ বল বিন্দুমাত্র সহ্য করতে পারেন না তিনি। চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় একে বলে পোস্টুরাল ট্যাকিকার্ডিয়া সিনড্রোম।
এই ধরনের অ্যালার্জির ক্ষেত্রে দাঁড়াতে বা উঠে বসতে গেলেই মারাত্মক বেড়ে যায় হৃদস্পন্দন। জনসন জানিয়েছেন, তিন মিনিটের বেশি দাঁড়ালেই ভয়ঙ্কর রকমের অসুস্থবোধ করেন তিনি। অনেক সময় অজ্ঞানও হয়ে যান। সারা দিনের বেশিরভাগ সময়টাই বিছানাতে কাটান জনসন। একমাত্র শুয়ে থাকলেই একটু স্বস্তিবোধ করেন তিনি।
২০১৫ সালের মাঝামাঝি হঠাৎ করেই কোমরে ও তলপেটে অসহ্য যন্ত্রণা শুরু হয়েছিল তাঁর। সঙ্গে বমি। সেসময় তিনি নৌবাহিনীতে কর্মরত। ক্রমশ খারাপ হচ্ছিল তাঁর অবস্থা। এদিকে চিকিৎসক হাজার পরীক্ষার পরেও কিছুই বুঝতে পারছিলেন না। ২০১৮ সালে এর জন্য চাকরিও ছাড়তে বাধ্য হন জনসন। চলতি বছর ফেব্রুয়ারিতে শুরু হল শ্বাসকষ্ট, রক্তচাপের মতো আরও বেশ কিছু সমস্যা। অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছিল, দিনে অন্তত তিন চার বার অজ্ঞান হয়ে যেতেন তিনি। কোনওমতে স্নান-খাওয়াটুকুর জন্য কষ্ট করে বিছানা ছাড়তে হত তাঁর।
আরও শুনুন: গড় আয়ু ১০০ বছর, তবুও অটুট যৌনজীবন! বিস্ময় দ্বীপে বাস করলে সেরে যায় অসুখও!
মাত্র আঠাশ বছরেই যে এমন শয্যাশায়ী হয়ে যেতে হবে দুঃস্বপ্নেও ভাবেননি জনসন। স্নানটুকু সারতে পর্যন্ত চেয়ারের সাহায্য নিতে হয় তাঁর। জনসনকে প্রতিপদে সাহায্য করেন তাঁর স্বামী জেমস। তা সত্ত্বেও হাল ছাড়েননি জেমসন। একদিন ঠিক নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারবেন, কাটিয়ে উঠতে পারবেন এই অবস্থা। এমনটাই বিশ্বাস করেন তিনি ও তাঁর পরিবার। আপাতত মিউজিকের ব্যবসা নিয়ে পড়াশোনা চালাচ্ছেন তিনি। যে অভিকর্ষ বল পৃথিবীর জন্য আশীর্বাদ, তা যে তাঁর জন্য এমন অভিশাপ ডেকে আনবে তা কে জানত! জনসনের এমন অদ্ভুত অ্যালার্জির কথা শুনে কার্যত হতবাক নেটিজেনরা।