চেহারা দেখলে মনে হয় তাঁর দেহ বহন করার সাধ্য বোধহয় হাতিরও নেই। অথচ সেই গণপতির বাহন নাকি ছোট্ট ইঁদুর! এত বড় যাঁর দেহ তাঁর বাহন কেন এত ক্ষুদ্র! আসুন শুনে নেওয়া যাক সেই কাহিনি।
বরাবরই ব্যতিক্রমী এক দেবতা তিনি। স্থূলকায় শরীর, মানুষের ধড়ের উপর হাতির মাথা, এমন সব বিষয়েই দেবকুলে সবার থেকে আলাদা তিনি। ব্যতিক্রম নয় তাঁর বাহনও। অন্যান্য দেবতাদের চেহারার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখেই পাশে থাকে তাঁদের বাহন। সেখানে গণেশের চেহারার তুলনায় তাঁর বাহনের আকার একেবারেই ক্ষুদ্র। কিন্তু কীভাবে এমন কাণ্ড ঘটল, তার নেপথ্যের কাহিনিটি বর্ণনা করা আছে মৎস্যপুরাণে। সেই কাহিনি অনুযায়ী, গণেশের বাহন হিসেবে থাকা এই মূষিক আসলে এক অভিশপ্ত দেবতার রাক্ষস রূপান্তর। গণেশের কৃপা লাভ করেই নাকি মুক্তি হয়েছিল তাঁর।
আরও শুনুন: দুর্গা সপ্তমীর অবস্থান অনুযায়ী ঠিক হয় দেবীর যান, মেলে ভাগ্যের ইঙ্গিতও
কী বলা আছে সেই কাহিনিতে?
কথিত আছে যে, স্বর্গে ইন্দ্রের সভায় গান গেয়ে সকলের মনোরঞ্জন করতেন ক্রৌঞ্চ নামে এক গন্ধর্ব। বরাবরই নিজের সঙ্গীত প্রতিভা নিয়ে ভীষণ অহংকার ছিল তাঁর মনে। এক দিন ঋষি বামদেব এসে উপস্থিত হন ইন্দ্রপুরীর সেই সভায়। শুধু যে উপস্থিত হলেন তা-ই নয়, সেখানে তিনি তাঁর বেসুরো গলায় গান গাইতে শুরু করেন। আর সেই গান শুনেই ভরা সভায় হেসে ওঠেন ক্রৌঞ্চ। এমন আচরণ দেখে রীতিমতো ক্রোধান্বিত হয়ে পড়েন বামদেব। তিনি সঙ্গে সঙ্গে ক্রৌঞ্চকে ইঁদুর হয়ে যাওয়ার অভিশাপ দেন। একইসঙ্গে ঋষি বলেন, আর কোনও দিনই গান গাইতেও পারবেন না ওই অহংকারী গন্ধর্ব। এমন অভিশাপ শুনে তৎক্ষণাৎ নিজের ভুল স্বীকার করে ক্ষমা চান ক্রৌঞ্চ। কিন্তু ঋষির অভিশাপ তো আর ফিরিয়ে নেওয়া যায় না। তবে ক্রোধ সংবরণ হলে মুনি তাঁকে বলেন, কোনও দিন যদি গণেশ তাঁকে বাহন করেন, তাহলেই তাঁর মুক্তি মিলবে।
আরও শুনুন: দশভুজা দুর্গা নন, কেবল দেবীর মুণ্ডকেই অর্ঘ্য দেওয়া হয় এই বনেদি পুজোয়
কিন্তু ইঁদুর হয়ে জন্মেই ক্রৌঞ্চ অতীতের সব কথা ভুলে যান। প্রথমেই তিনি উপস্থিত হন পরাশর মুনির কুটিরে। সেখানে গিয়ে বিশাল এক দানবের রূপ ধারণ করে তছনছ করে দিতে থাকেন ঋষির আশ্রম। ইঁদুররূপী সেই রাক্ষসের উৎপাতে অতিষ্ঠ হয়ে ওঠেন আশ্রমবাসীরা। এমনকি আশেপাশের আশ্রমগুলিতেও হানা দিতে থাকে এই ভয়ানক ইঁদুর। এরই মাঝে একদিন গণেশ এসে উপস্থিত হন পরাশর মুনির কুটিরে। সেখানে পৌঁছে তিনিও জানতে পারেন সেই বিশালাকায় ইঁদুরের কুকীর্তির কথা। তখন স্বয়ং গণেশ তাকে ধরতে উদ্যত হন। গণেশের বুদ্ধির সামনে পরাস্ত হতে বাধ্য হয় সেই ইঁদুর। গণেশকে দেখেই ক্রৌঞ্চ নিজের পরিচয় দিয়ে তাঁর অভিশাপের সব কথা খুলে বলেন। বলেন, বামদেব বলেছিলেন যে স্বয়ং গণপতি যদি তাকে তাঁর বাহন করেন, তবেই ঘুচবে তাঁর দুঃখ। এ কথা শুনে গণেশের মনেও দয়া জাগে। তিনি সেই ইঁদুরকে নিজের বাহন হিসেবে আশ্রয় দেন। আর তারপর থেকেই গণেশের বাহন হিসেবে পূজিত হয়ে আসছেন মূষিকও।