স্রেফ আলোর উৎসব নয়, আস্ত একটা গ্রামের নামও দীপাবলি। নেপথ্যে কারণ রয়েছে। তবে রামচন্দ্রের যোগ নেই। তাহলে? কেন এমন নাম এই গ্রামের? আসুন শুনে নেওয়া যাক।
রাবণ বধ করে অযোধ্যা ফিরলেন রামচন্দ্র। আলোয় আলোয় সেজে উঠল গোটা নগর। সেই উৎসবই দীপাবলি। প্রচলিত ধারণা এমনটাই। প্রতিবছর সেই উপলক্ষে বিশেষ সাজে সেজে ওঠে অযোধ্যা। গোটা দেশের ছবিটাও তেমন আলাদা নয়। আলোর রোশনাই ভরে ওঠে সবর্ত্রই। এরই মাঝে নজর কাড়ে দক্ষিণের এক গ্রাম। কারণ তার নামই দীপাবলি।
দীপাবলি শুনলে আলোর ছবি মনে ভাসে। তবে সব জায়গায় নয়। অন্ধ্রের মানুষজন দীপাবলি বলতে বোঝেন, একটা গ্রামকে। শ্রীকাকুলাম জেলার এই গ্রাম স্রেফ নামের জোরে নয়, উৎসবের কারনেও বিখ্যাত। তাও আবার আলোর উৎসবের জন্য। এখানে দীপাবলি পালিত হয় ৫ দিন ধরে। আলোর মালায় সেজে ওঠে চারদিক। অনুষ্ঠানের আয়জন হয়। সেসব দেখতে দূর থেকে অনেকে আসেন। উত্তর ভারতে দীপাবলির যতই রমরমা হোক, অন্ধ্রের এই গ্রামে গেলেও উৎসবের আঁচ ভালমতো টের পাওয়া যাবে। নামকরণের সার্থকতা বোধহয় একেই বলে। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, এই গ্রামের নাম এমন কেন হল?
মনে হতে পারে এর সঙ্গে হয়তো রামচন্দ্রের যোগ রয়েছে। কিন্তু না, এমনটা মোটেও নয়। বরং রাজা শ্রীকাকুলাম এই নামের কারণ। ব্যাপারটা খুলেই বলা যাক। শ্রীকাকুলাম একসময় দক্ষিণের বড় একটা অংশের রাজা ছিলেন। তাঁর নামেই বর্তমানে অন্ধ্রের ওই জেলার নাম। কথিত আছে, একদিন রাজা রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় অজ্ঞান হয়ে পড়ে যান। দীর্ঘ যাত্রা পথের ক্লান্তি থেকেই এমনটা ঘটেছিল। এদিকে রাজা তখন একা। বেশীক্ষণ অচেতন অবস্থায় পড়ে থাকলে বিপদ হতে পারে। কয়েকজন স্থানীয় বাসিন্দা রাজাকে উদ্ধার করেন। সময়টা ছিল রাতের দিকে। তাই প্রদীপের আলো জ্বালিয়ে রাজাকে ঘরে নিয়ে আসেন তাঁরা। অবশ্য সেইসময় প্রদীপ ছাড়া কৃত্রিম আলোর উৎস আর কিছু হত না। জ্ঞান ফিরে রাজা দেখেন অচেনা জায়গায় তিনি পড়ে আছেন। প্রদীপের আলোয় প্রথমবার সকলের মুখ দেখেন শ্রীকাকুলাম। জীজ্ঞাসা করে সব ঘটনা জানতে পারেন। আপ্লুত রাজা ব্যস্ত হয়ে পড়েন গ্রামের মানুষজনকে উপহার দেওয়ার জন্য। কিন্তু সমস্যা অন্য জায়গায়। গ্রামের কী নাম, তা কেউ জানে না। বয়স্ক কজন বলেন, তাঁদের গ্রামের কোনও নাম নেই। একথা শুনে রাজা বলেন, আজ থেকে গ্রামের নাম দীপাবলি। প্রদীপ আলোর সঙ্গে মিলিয়েই এমন নাম দেন রাজা। তা বদলায়নি আজও। ঘটা করে দীপাবলি উদযাপনও যে এই কারণেই, তা সঠিক ভাবে জানা যায় না। তবে কারণ যাই হোক, প্রতিবছর দীপাবলি উপলক্ষে বিশেষ ভাবে সেজে ওঠে এই গ্রাম।