তাঁর দেহ তরুণ সূর্যসদৃশ। তপ্তকাঞ্চনবর্ণ, শক্তিধারী, দ্বিভুজ, কার্তিকেয়র অবস্থান সর্বদা সৈন্যদলের পুরোভাগে। সেই দেবসেনাপতির বাহন হিসেবে দেখা যায় ময়ূরকে। কীভাবে হয়েছিল এই বাহন নির্বাচন? আসুন, শুনে নেওয়া যাক।
পুরাণমতে দেবী পার্বতী ও মহাদেবের পুত্র হলেন কার্তিক। ভয়ানক তারকাসুরকে বধ করার উদ্দেশেই তাঁর জন্ম। শৌর্য বীর্যের দিক থেকে দেবকুলে শ্রেষ্ঠত্বের আসন লাভ করেন তিনি। একইরকম আভিজাত্য দেখা যায় তাঁর বাহন ময়ূরের মধ্যে। অসাধারণ কর্মতৎপরতা এবং সৌন্দর্যের নিরিখে পক্ষীজগতের সর্বশ্রেষ্ঠ হিসেবে বিবেচনা করা হয় এই প্রাণীটিকে। আবার ময়ূর নাকি ভীষণ তেজোদীপ্ত। সারাদিনে খুব সামান্য সময় ঘুমোতে দেখা যায় ময়ূরকে। চারিদিকে সর্বদা সতর্ক দৃষ্টি থাকে তার। আর এই পাখিটির জনপ্রিয়তা নিয়ে তো নতুন করে কিছু বলার নেই। সৌন্দর্যের বিচারে তাবৎ পক্ষীকুলকেই পিছনে ফেলে দেয় ময়ূর। একইভাবে সৈনিক পুরুষের ময়ূরের মতো নিরলস এবং কর্মকুশল হওয়াই বাঞ্ছনীয়। আবার তাদের মধ্যেও যিনি প্রধান, সেই সেনাপতির অন্যতম গুণ লোকপ্রিয়তা। জনপ্রিয় হলে তবেই দলের অন্যান্যদের কাছে থেকে আনুগত্য দাবি করতে পারেন কোনও নেতা। সুতরাং এই সমস্ত বৈশিষ্ট্যের নিরিখে দেখা যায়, কার্তিকের বাহন হিসেবে একেবারেই উপযুক্ত ময়ূর।
আরও শুনুন: এত বড় চেহারায় গণেশের বাহন এইটুকু ইঁদুর! নেপথ্যে রয়েছে কী কারণ?
তবে কেবলমাত্র বাংলা নয়। দেবসেনাপতি কার্তিক সারা দেশেই বিভিন্ন রূপে পুজো পান। অনেক জায়গায় তাঁর একটি ষড়ানন রূপও দেখা যায়। বিশেষত দক্ষিণ ভারতে তাঁর মূর্তি বাংলার প্রচলিত মূর্তির তুলনায় বেশ খানিক আলাদা। সেখানে কার্তিকের বাহন হিসেবে দেখা যায় মোগর। দক্ষিণী লোককথা অনুযায়ী কার্তিকের বাহন হিসেবে মোগরের কিছু বিশেষ গুণের কথা বলা হয়। বলা হয় একজন প্রকৃত ক্ষত্রিয় যে বিশেষ গুণের অধিকারী হন, তার সবকটিই এই প্রাণীটির মধ্যে বর্তমান। আবার দেবতাদের সেনাপতি হিসেবে কার্তিকের মধ্যেও ক্ষত্রিয়জাত গুণের প্রকাশ দেখতে পাওয়া যায়। আসলে ময়ূর এবং মোগর সমবর্গীয় পাখি। সেই হিসেবে তাদের মধ্যে বৈশিষ্ট্যের পার্থক্য বড় একটা নেই। আর সেই কারণেই বহির্বঙ্গেও দেবসেনাপতি কার্তিকের বাহন হিসেবে নির্বাচন করা হয়েছে এই পাখিকেই।