রান্নাবান্না থেকে সালাড তৈরি – ঘরোয়া কাজে প্রতিদিন পেঁয়াজের দরকার হয়ই হয়। আর, পেঁয়াজ কাটতে গেলেই আকুল কান্না নেমে আসে চোখে। কেন হয় এমনটা? আর, এই কান্না নিবারণের কি কোনও উপায় নেই? আসুন শুনে নিই।
পেঁয়াজ এমনিতেই বেশ অদ্ভুত। পরতের পর পরত ছাড়িয়ে যাবেন, কিন্তু কোনটা যে তার শুরু আর কোনটা যে শেষ, সে হিসেব কিছুতেই মিলবে না। কেননা বলতে গেলে পেঁয়াজের কোনও কেন্দ্রই নেই। কেন্দ্রবিহীন একরকম মডেলের কথা বলতে গেলে, অবশ্যই প্রাকৃতিক ভাবে পেঁয়াজের উদাহরণ মনে আসবেই। না না, কোনও তাত্ত্বিক কচকচানিতে যাচ্ছি না। কিন্তু আরো একটা অদ্ভুত ব্যাপার দেখুন। আর কোনও সবজি কাটতে গেলে যা হয় না সেভাবে, পেঁয়াজ কাটতে গেলেই তা হয়। দু-চোখ ভরে আসে জলে। চোখ জ্বালাও করে। হ্যাঁ, অনেকেরই মনে তাই প্রশ্ন জাগে, কী এমন আছে পেঁয়াজে যে এমন কান্না পায়!
আরও শুনুন: Nuts: বাদাম খেলে বাড়বে ত্বকের জৌলুস? জেনে নিন এর গুণাগুণ
আসলে পেঁয়াজ যখন কাটা হয়, তখন এর কোষগুলি থেকে একরকমের রাসায়নিক পদার্থ নির্গত হয়। বিজ্ঞানের ভাষায় যাকে বলে, প্রোপেনেথিয়াল-এস-অক্সাইড। নামটা শক্ত তা নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই। কিন্তু এই রাসায়নিকের যত কাজকর্ম সব তরল নিয়েই। কেন বলছি, শুনুন। পেঁয়াজ কাটার সময় এই উদ্বায়ী রাসায়নিক তো গিয়ে পৌঁছয় আমাদের চোখে। আমাদের সকলেরই চোখের উপর হালকা জলের একটা আস্তরণ থাকে। রাসায়নিকটি সেই জলের সঙ্গে বিক্রিয়া করে একরকমের অ্যাসিড তৈরি করে, যার নাম সালফেনিক অ্যাসিড। এই অ্যাসিডই আমাদের কাঁদায়। কেননা, সে আমাদের চোখের অশ্রুগ্রন্থিগুলোকে উত্তেজিত করে তোলে। আর, চোখ ঠিক করে নেয় আরও বেশি জল নির্গত করে চোখ থেকে ওই অ্যাসিড ধুয়ে সাফ করে দেবে। তখনই চোখে আসতে থাকে জল। এই হল কান্নার উৎস। তবে, অ্যাসিড যা তৈরি হয় তা পরিমাণে সামান্যই, আর যেহেতু চোখ নিজেই নিজেকে ধুয়ে পরিষ্কার করে নেয়, তাই বড় কোনও ক্ষতি অবশ্য এতে হয় না।
আরও শুনুন: Soybean : মাছ-মাংসের বদলে কতটা পরিমাণ সয়াবিন মেটাতে পারে প্রোটিনের চাহিদা?
এ তো গেল কান্নার সাতকাহন। কিন্তু এ কান্না থামবে কী করে? এর উত্তরও সোজা। সকল কাজের গোড়া ওই রাসায়নিকটিকে নিস্তেজ করে দিলেই কেল্লা ফতে। এইজন্যই অনেকে বলেন, কাটার আগে পেঁয়াজকে বেশ কিছুক্ষণ জলে ভিজিয়ে রাখতে। তাতেই রাসায়নিকের তীব্রতা চলে যায় অনেকখানি। ফলে কান্নাকাটির গল্প মুলতুবি হয়ে যায়।
তবে, অনেকে এও বলেন যে, এতে কান্না নয় থামানো গেল, কিন্তু পেঁয়াজের ঝাঁজালো স্বাদ-গন্ধ যে অনেকটা হারিয়ে যাবে। সে কথা ঠিক। এখন, আপনি পেঁয়াজের ঝাঁজালো স্বাদ চাইবেন নাকি কান্না আটকাবেন- সে সিদ্ধান্তের ভার তো একান্তই আপনার।