কোনও বিয়েবাড়িতে নেমন্তন্ন খেতেই যান কি নিজের গ্যাঁটের কড়ি খসিয়ে রেস্তোরাঁয় গিয়ে উঠুন, খাওয়ার টেবলে বসলে আপনার হাতে প্রথমে কী এসে পৌঁছয়? উঁহু, খাবার নয়। খাবার আসার আগে তার আগমনের আভাস নিয়ে আসে খাবারের তালিকা। যাকে আমরা চিনি মেনুকার্ড বলেই।
মেনুকার্ড শব্দটা শুনে এবং তার বানান দেখে দেখে আপনি হয়তো ধরেই নিয়েছেন, শব্দটা যখন ইংরেজি, এর জন্মও নির্ঘাত বিলেত কিংবা আমেরিকায়। গোড়ায় গলদ! না মেনু শব্দটা আদতে ইংরেজি শব্দ, না সাহেবদের দেশে এর উৎপত্তি। তাহলে? খুলেই বলি।
আরও শুনুন: ৪০০ বছর ধরে সমুদ্রে ঘুরে চলেছে ভূতুড়ে জাহাজ! কী এই রহস্য?
আসলে লাতিন ‘মিনুটুস’ শব্দ, অর্থাৎ কোনও কিছুকে ছোটো আকারে দেখা, থেকে ফরাসিরা তৈরি করে নিয়েছে ‘মেনু’ শব্দটা। কিন্তু মেনুকার্ড ব্যাপারটা ফ্রান্সেও প্রথম তৈরি হয়নি। প্রথম কোন দেশ এমন খাদ্যতালিকা বানানোর কথা ভেবেছিল জানেন? সেই কৃতিত্ব সম্ভবত পাবে প্রাচীন মিশর। ১৯২২ সালে পুরাতাত্ত্বিক উইলিয়াম ক্রিস্টাল মিশরে এক ফারাওয়ের মমি আবিষ্কার করেন। আর সেই মমির সঙ্গেই বেরিয়ে আসে কিছু হায়ারোগ্লিফের টুকরো। যেগুলো খাদ্যতালিকা ছাড়া আর কিছুই নয়। পরীক্ষানিরীক্ষা চালিয়ে দেখা যায়, মমিটি আদতে ফারাও তৃতীয় রামেসিস-এর বাবা সেত্নাখত-এর, যিনি মারা গিয়েছিলেন ১১৮৬ খ্রিস্টপূর্বাব্দে। প্রাচীন মিশরে মৃতদেহের সঙ্গে তার নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস দিয়ে দেওয়া হত, এ কথা জানা। অতএব, আন্দাজ করা যায়, জীবদ্দশায় তিনি নিশ্চয়ই মেনু দেখে খাবারের ফরমাশ দিতেন।
আরও শুনুন: পুরনো বাসন দেখলেই ঘরে নিয়ে আসেন এক ব্যক্তি, কিন্তু কেন জানেন?
এ তো গেল রাজারাজড়াদের কথা। আরেকটু সাধারণের নাগালে মেনুকার্ডকে নিয়ে এল চিন। চিনে তখন সং বংশের শাসন চলছে। বাণিজ্যে তার বোলবোলাও বিশ্ব জুড়ে। ফলে রাজধানী বিয়ানজিং-এ লেগেই থাকে ভিনদেশি বণিকের ভিড়। আর কাজ করলে খিদে তো পাবেই। ফলে ভিড় উপচে পড়ে শহরের সরাইখানাগুলোতেও। নানা দেশের খাবারের বায়না মেটাতে প্রাণ ওষ্ঠাগত পাচকদের। আর নানা ভাষার সরু-মোটা গলায় যে কী সব খাবারের দাবিদাওয়া করা হয়, তা বুঝতে না পারলে আর-এক ঝঞ্ঝাট! অবশেষে এক বুদ্ধি বের করলেন সরাই মালিকেরা। ততদিনে কাগজ বলে একটা জিনিস এসে পড়েছে তাঁদের দেশে। সেদিন কী কী খাবার পাওয়া যাবে, কাগজে লিখে প্রতিদিন টাঙিয়ে দেওয়া হতে থাকল রেস্তোরাঁর দেওয়ালে। অবশ্য খদ্দেরের মুখ বদলাতে তালিকাও বদলাত প্রায়ই। কিন্তু এই সীমিত খাদ্যতালিকা মালিক আর ক্রেতা উভয় পক্ষেরই বেশ সুবিধে করে দিয়েছিল।
শুনে নিন বাকি গল্প।