কাল হতে পারে বিয়ের সাজ। বলা ভালো, সাজের বাড়াবাড়ি। বাস্তব ঘটনা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে এ কথা। তার পরেও সেই হুঁশিয়ারি ভুলে গিয়ে অনেকেই পা দিচ্ছেন চলতি ফাঁদটিতে। দেখতে ভালো হওয়া নিয়ে যে গুরুত্ব আমরা মনে জিইয়ে রেখেছি, সেই ফাঁদে। এই ভাবনায় বদলের সময় কি আসেনি এখনও? প্রশ্ন উসকে দিচ্ছে নানা ঘটনা।
সম্প্রতি এক ওয়েব সিরিজে দেখা গিয়েছিল এক তরুণীকে। সামনেই বিয়ে, তার আগে নিয়মিত সাজসজ্জার পালা চলছে তার। হবু স্বামীর মা মনে করেছেন, কনের গায়ের রং যে শ্যামলা, সেটিই তার খুঁত। সুতরাং কিছু বিউটি ট্রিটমেন্ট করে সেই ব্যাপারটিকে বদলে ফেলতে হবে। এদিকে মেয়েটি শিক্ষিত, স্বনির্ভর, সমাজের উঁচু মহলেই বাস তাদের, তারপরেও সে কিন্তু এই কথাটি ফেলে দিতে পারে না। কারণ দেখতে ভালো হওয়ার বৈশিষ্ট্য ঠিক কী কী, তার একরকম ছক তো সমাজে জারি রয়েছে। সেই ছক তারও চেনা। তাই হবু স্বামী এই ব্যবস্থায় ঘোর আপত্তি জানালেও সে নিয়মমাফিক ওই রূপচর্চা চালিয়েই যায়। সেই ট্রিটমেন্ট চিকিৎসাবিজ্ঞানসম্মত নয়, এমনকি তার জেরে সে অসুস্থ হয়েও পড়ে, তারপরেও সে থামতে নারাজ।
-: আরও শুনুন :-
সত্যি বলতে, কেবল কোনও একজন নয়, প্রায় সবার মনেই এমন ইচ্ছে থাকে যে, বিয়ের দিন মানেই নিজেকে সাজিয়ে তুলতে হবে নিখুঁত করে। খুঁত ঠিক কী, তার তেমন কোনও ব্যাখ্যা নেই যদিও। আসলে বাস্তবের কাউকে দেখেই হোক কিংবা রুপোলি পর্দার কোনও তারকাকে দেখেই হোক, মনে বাসা বাঁধে গোপন ইচ্ছে, যদি অমনটা হত আমারও! সেই ইচ্ছেকে আরও জাগিয়ে দেয় একের পর এক বিজ্ঞাপন। যেখানে কোনও তারকাই আশ্বাস দেন, অমুক প্রসাধনীটি ব্যবহার করলেই ত্বক হবে তাঁরই মতো নিখুঁত। এইভাবেই, রুপোলি পর্দা থেকে ঘরের কোণ, সর্বত্র অনেকখানি বেশি গুরুত্ব পেয়ে যায় দেখতে ভালো হওয়া। আর সেই নিক্তিতেই নিজেদের মেপে নিয়ে সাজাতে বসি আমরা। বিশেষ করে বিয়ের দিনটি আসন্ন হলে তার অনেক আগে থেকেই চলতে থাকে সেই রূপচর্চা। বিয়ের আগে সাজতে সাজতে ক্লান্ত হয়ে অনেকেই হয়তো বলে ওঠেন, মরেই গেলাম! কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে, আর রূপক নয়, সাজের জেরে সত্যি সত্যিই প্রাণ হারাতেও পারেন কেউ। সম্প্রতি তেমনটাই ঘটেছে হায়দরাবাদে। বছর আঠাশের যুবক চেয়েছিলেন, চওড়া হাসি নিয়ে বিয়ে করতে যাবেন তিনি। তার জন্যই এক ক্লিনিকের দ্বারস্থ হয়েছিলেন তিনি। যার ফলশ্রুতিতে প্রাণ গিয়েছে তাঁর।
-: আরও শুনুন :-
অনুরাগে যত রাগ! যেন সোশ্যাল মিডিয়া ছাড়া হারানোর কিছুই নেই
ঘটনাটি মর্মান্তিক। কিন্তু রিল হোক কি রিয়েল, এই ঘটনাগুলি আসলে এক বড় সত্যির দিকে ইঙ্গিত করে। বুঝিয়ে দেয়, ‘নিখুঁত’ হতে চাওয়া আসলে এক বিপজ্জনক ফাঁদ। তা একইসঙ্গে ব্যয়সাপেক্ষ এবং সময়সাপেক্ষও বটে। তারপরেও, তা সম্পূর্ণ নিরাপদও নয় অনেকসময়ই। একসময় বলিউডের ফ্যাশন ডিভা বলে পরিচিত সোনম কাপুর বলেছিলেন, নিখুঁত সৌন্দর্য বলে আদতে কিছু হয় না। কেউ যদি নিজেকে আয়নায় দেখে হতাশ হয়ে ভাবেন, কেন তাঁকে দেখতে তারকাদের মতো নিখুঁত নয়, তবে তিনি ভুল ভাবছেন। আসলে তারকারাও নিখুঁত হন না। আর শুধু সাজ দিয়েও খুঁত ঢাকা পড়ে না। তার জন্য মেকআপ, কেশসজ্জা, বাঁধাধরা ডায়েট, মানানসই পোশাক- এমন একাধিক ধাপ পেরোন তারকারা, এমনকি এক বা একাধিক সার্জারি করতেও তাঁরা পিছপা হন না। আসলে সৌন্দর্য যে কেবল স্কিন ডিপ হয় না, কেবল শরীরের বাইরের দিকটুকুই সৌন্দর্যের সব কথা বলে না, এমন কথা তো বারে বারেই বলা হয়। কিন্তু সে কথা শুনছেন আর কজন! তাই সৌন্দর্যের প্রচলিত ধারণাও চলছে, সঙ্গে রমরমিয়ে চলছে ফর্সা আর সুন্দর করার গ্যারান্টি দেওয়া প্রসাধনীর দৌড়।
যা আদতে বানিয়ে তোলা, সেই মরীচিকার দিকে ছুটতে গেলে যে আদতে বিপত্তি ঘটে, সোনার হরিণের গল্প কিন্তু আমাদের সে কথা জানিয়েছিল। প্রশ্ন হল, আমরা সে কথা মানব কবে?