১৭৯৪ সাল, নবাব ওয়াজির আলি শাহ-এর নিকাহ্-এ খরচ হয়েছিল প্রায় ৩০ লাখ টাকা। অথচ তাঁকে সমাধিস্থ করতে তৎকালীন ব্রিটিশ শাসক খরচ করেছিল মাত্র ১০ টাকা। ভাগ্যের পরিহাসে, কলকাতা শহরেই, অবর্ণনীয় যন্ত্রণা সয়ে, বন্দিদশায় মৃত্যু হয়েছিল, নবাব ওয়াজির আলির। কলকাতার কাসিয়াবাগানে কোথায় হারিয়ে গিয়েছে সেই সমাধি! তা অনেক খুঁজেও মেলে না।
আওধের চতুর্থ নবাব আসাফ-উদ্-দৌল্লা। কেউ বলেন তাঁর নিজের কোনও পুত্রসন্তান ছিলনা। কেউ বলেন ছিলেন, কিন্ত থাকা সত্বেও একটি পুত্রসন্তানকে তিনি দত্তক নেন। কেউ বলেন, তিনি পরিচারিকার সন্তান, কেউ বলেন আসফউদ্দৌলার বোনের সন্তান। সে যেই হোক, নবাব তাঁকে প্রাণাধিক প্রাণ হিসেবে দেখতেন। মাত্র চোদ্দ বছর বয়সে সেই নবাবজাদাকে তিনি বসান নিকাহ্-এর ঘোড়ায়। প্রায় মাসাধিককাল ধরে সেই নিকাহ্-এর উৎসব চলেছিল লখনউ শহরে। সাল ১৭৯৪। সেই সময়েও বিয়েতে খরচ হয়েছিল প্রায় তিরিশলক্ষ টাকা। নবাব আসফউদ্দৌলা তাঁর ছেলেকে বিশেষ মর্যাদা দিতে, সেই বিয়েতে বরযাত্রী হিসেবে গিয়েছিলেন পায়ে হেঁটে। অনেকেই নবাবকে পয়দল যেতে দেখে, অন্তত ঘোড়ার পিঠে বসার কাতর অনুরোধ জানিয়েছিলেন, কিন্তু নবাব তাতে কিছুতেই রাজি হননি।
আরও শুনুন – ইংরেজদের ভারত জয় করার পথ খুলে দিল একটি ফোড়া
নবাবজাদা ওয়াজির আলি শাহ্-এর বিয়ের বছর তিনেকের মধ্যে নবাব আসফউদ্দৌলার ইন্তেকাল হল। সিংহাসনে আসীন হলেন, নবাব ওয়াজির আলি শাহ্। মাস চারেকের মধ্যেই তাঁর ভাগ্যে নেমে এল ঘোর বিপর্যয়ের ছায়া। ইংরেজরা ঠাওর করল ওয়াজির তলে তলে ইংরেজদের ঘোরতর অপদস্থ করার পরিকল্পনা চালাচ্ছে।
আরও শুনুন – যেমন Breast তেমন Tax, প্রথার নামে দেশের মেয়েদের সইতে হত যৌন হেনস্তাও
আসাফ-উদ্-দৌল্লার আত্মীয় সাদাত আলি খান ইংরেজদের মদত করলেন। তিনি অভিযোগ তোলেন, ওয়াজিরের সঙ্গে নবাবের কোনো রক্তের সম্পর্ক নেই। এই বিষয়ে তদন্ত করতে আসেন, জেনারেল জন সোরে। তিনি তদন্তে রায় দেন ওয়াজির অসৎ এবং ইংরেজদের জন্যও বিশেষ সুবিধের নয়। সাদাত আলি পুরস্কার হিসেবে পেলেন সিংহাসন। ওয়াজির পেলেন বেনারসে নির্বাসন। বার্ষিক ভাতা হিসেবে স্থির হল দেওয়া হবে দেড় লক্ষ টাকা। অসহায় ওয়াজিরের এই সিদ্ধান্ত মানা ছাড়া আর কোনও উপায় রইল না।
আরও শুনুন – Safety Pin আবিষ্কারের এই গল্প আপনাকে অবাক করবে
বেনারসের রেসিডেন্ট জর্জ চেরীর দরবারে তাকে তলব করা হল। নির্বাসনের পর তাঁর জায়গা কোথায় হবে সেই ঠিক করার জন্য তাঁকে দরবারে ডাকা হয়েছিল। ওয়াজিরের যাওয়ার কথা ছিল একলা। কিন্তু তা না করে তিনি লুকিয়ে নিয়ে গিয়েছিলেন রাশি রাশি ‘সোয়ারি’ বা অনুগত কিছু ফৌজকে। মিস্টার চেরী এঁদের হাতেই প্রাণত্যাগ করলেন। সেখানেই মৃত্যু হল আরও দুজনের, ক্যাপ্টেন কনওয়ে এবং মিস্টার গ্রাহামেরও। তিনজনকে ধরাশায়ী করে বীর বিক্রমে ওয়াজির গেলেন তৎকালীন ম্যাজিস্ট্রেট স্যামুয়েস ডেভিসের বাসভবনে। একটা বর্ষা নিয়ে প্রবল সাহসিকতায় কোনওভাবে সাহেব ঠেকিয়ে রাখলেন, ওয়াজির এবং দলবলকে। খানিক পর ইংরেজ সৈন্যদের আসার ফলে তাঁরা পালালেন দাক্ষিণাত্যে বেরার প্রদেশে। কিন্তু ইংরেজরা খুব দ্রুত সেখান থেকে তাঁকে ধরে ফেললেন। সেখান থেকে তাঁকে চালান করে দেওয়া হল তৎকালীন কোম্পানির রাজধানী কলকাতায়। কলকাতায় তাঁর স্থান হল ফোর্ট উইলিয়মে।
বাকি কাহিনি শুনে নিন প্লে-বাটন ক্লিক করে।