‘হাতের উপর হাত রাখা খুব সহজ নয় / সারা জীবন বইতে পারা সহজ নয়’- কবিতার এ-পঙক্তি তো আমাদের সকলেরই জানা। তবু আজও তো মানুষ হাতের উপর হাত রেখেই আজীবন কাটিয়ে দিতে চায়। আর তাই এই বাস্তবের রুখাশুখা মাটিতে প্রেমের কোনও পদ্য যদি হঠাৎ চোখে পড়ে যায়, তবে মুগ্ধ না হয়ে কি উপায় আছে! সম্প্রতি বৃদ্ধ দম্পতির ভালবাসা আর বিশ্বাসের ভিডিও দেখে তাই উদ্বেল-ই হল নেটদুনিয়া।
সময়টা ব্যস্ততার। সময়টা দ্রুতগতির। আর তাই এ সময়ে শান্ত কোনও প্রেমের মুহূর্তের দেখা পাওয়া যেন দুরুহ ব্যাপার। যেন শুধু গল্পে-সিনেমাতেই সে সবের দেখা পাওয়া যায়। বাস্তবে তা দুর্লভ। সত্যি বলতে, প্রেম কিংবা সম্পর্কের মানে ও মাত্রাই তো বদলে যাচ্ছে প্রতিনিয়ত। সম্পর্কের আয়ু কমছে। হাতে-হাত রেখে একসঙ্গে বহুদিন কাটানোর প্রতিশ্রুতির বদলে যেমন-পরিস্থিতি-তেমন-সম্পর্ক এমন ইন্সটান্ট গ্র্যাটিফিকেশনের মন্ত্রেও বিশ্বাসী অনেকে, বিশেষত আধুনিক প্রজন্ম। সম্পর্কের ভাঙাগড়া তো মানুষের জীবনে নতুন কিছু নয়। তবে আধুনিক জীবনযাপন বা জীবনের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি যেখন সম্পর্কের উপর কোপ বসাচ্ছে, তখন নির্ভেজাল কোনও প্রেমের দৃশ্য আদতে অপূর্ব তৃপ্তি হয়েই ধরা দেয়। তারই যেন দেখা মিলল রাস্তায়, যখন বৃদ্ধ এক দম্পতি হয়ে উঠলেন একে অপরের অবলম্বন। আর ভারচুয়াল নেটদুনিয়ায় তখনই যেন নেমে এল বসন্ত।
আরও শুনুন: অবাক কাণ্ড গুজরাটে! শ্মশানেই চলছে দেদার প্রি-ওয়েডিং শ্যুট, হচ্ছে জমিয়ে পিকনিকও
ব্যস্ত রাস্তায় হেঁটে চলেছেন তাঁরা। একদিকে ছুটে যাচ্ছে দুরন্ত গাড়ি। আর সেই গতির শহর থেকে স্ত্রীকে আড়াল করতেই যেন আগলে আগলে চলেছেন বৃদ্ধ। সামান্য দৃশ্য। কিন্তু তাতেই মনকেমন আধুনিক প্রজন্মের। হয়তো এরকম একটা বিশ্বাস ও ভরসার হাত খোঁজেন সকলেই। কিন্তু খুঁজলেই যে আজ আর তা পাওয়া যায়, এমন তো নয়। ভারচুয়াল দুনিয়া এসে মানুষে মানুষে তথাকথিত যোগাযোগ যত বেড়েছে, একলা ঘরে ততই একাকী হয়েছে মানুষ। পৃথিবী ছোট থেকে হয়েছে ছোটতর, আর মানুষ সরে গিয়েছে আলোকবর্ষ দূরে। ঘোরতর এই বাস্তবতার ভিতর বৃদ্ধ দম্পতির এই সাধারণ প্রেম-যাপন তাই অলৌকিক বলেই মনে হয়েছে বহু নেটিজেনের কাছে। কেউ কেউ মনে করছেন কোরিয়ান কোনও সিনেমার দৃশ্যই যেন বাস্তবে নেমে এসেছে ভারতের রাজপথে। অথবা নাইন্টিজের যে চিরকালীন ভালোবাসার আবহ, তাই-ই হয়তো মূর্ত হয়েছে এই বৃদ্ধ দম্পতির মধ্য দিয়ে। আদতে এই প্রেমহীন সময়ে বৃদ্ধ দম্পতি হাতে হাত রেখে ব্যারিকেড করেছেন যেন একখানা আস্ত প্রেমের পদ্যকেই। আর আপাতত তাতে মশগুল সকলেই।
আরও শুনুন: হাত নেই, আছে স্বপ্ন! পা দিয়েই ছবি আঁকেন এই শিল্পী, কুর্নিশ নেটদুনিয়ার
ভিডিওটি পোস্ট করেছেন জনৈক জেনিফার রহমান। তা দেখে অন্য এক নেটিজেন জানিয়েছেন, এই বৃদ্ধ দম্পতিকে তিনি চেনেন। তাঁর অফিসের কাছেই এঁরা থাকেন। প্রতি সন্ধেয় এরকমই হাঁটতে বেরোন তাঁরা। আর বৃদ্ধ আগলে আগলে রাখেন তাঁর স্ত্রীকে। কখনও শপিং করাতে নিয়ে যান। চকোলেট কিংবা ফল কিনে দেন। ছোট ছোট এই কাজে বৃদ্ধা বেজায় খুশি হন। যুবকটি জানিয়েছেন, তাঁর সঙ্গে দেখা হলেই তিনি এই ভালবাসার কথা আলাদা করে উল্লেখ করেন। আর জবাবে বৃদ্ধ কেবল মুচকি হাসেন। যুবকটি জানিয়েছেন, এরই নাম বোধহয় সত্যি ভালবাসা।
সত্যি ভালবাসা যে কাকে বলে, তা কে জানে! তবে কখনও ভালবাসার অতি সাধারণ দৃশ্যও যে অনেকের কাছে মহার্ঘ্য হয়ে ওঠে তা এই ভিডিও প্রমাণ করে দিয়েছে। না সিনেমার মতো নাটকীয় কোন ঘটনা এখানে নেই। তবু দুই বয়স্ক মানুষের এই যে একে অন্যের নির্ভরতায় হাতে হাত হেতে রেখে এগিয়ে যাওয়া, তা যেন আধুনিক প্রজন্মের মধ্যে বইয়ে দিয়েছে প্রেমের বিশুদ্ধ বাতাস। এই নির্ভ্রতা, বিশ্বাস আর ভালবাসার কাছে ফেরার জন্য এই সময়ের মনের ভিতরও যে আকুলতা আছে, তা এই বৃদ্ধ দম্পতিকে আপন করে নেওয়ার মধ্যেই স্পষ্ট হয়েছে। ভালবাসা যে শত যুদ্ধে যেতা যায় না, সে তো সকলেই জানেন। তবে সত্যিকার ভালবাসা যে এক লহমায় বহুজনের মন জিতে নিতে পারে, এই দৃশ্যের প্রতি মানুষের অপার মুগ্ধতা, আবার যেন সেই কথাটিই নতুন করে মনে করিয়ে দিল এই বসন্তে।