দুটো হাতই নেই। কিন্তু তাতে কী! পায়ে দিয়ে ছবি আঁকেন এই মহিলা। আর সেভাবেই সকলের নজর কেড়েছেন তিনি। একটা সময় যাঁর দিন কাটত ভিক্ষা করে, তিনিই এখন অনেকের অনুপ্রেরণা। আসুন শুনে নিই, তাঁর জীবনের গল্প।
আসলে শরীর নয়, প্রতিবন্ধকতা থাকে মনেই। তাই মনের ইচ্ছা থাকলে যে কোনও বাধাই অনায়াসে জয় করে ফেলা যায়। এ কথাই যেন ফের প্রমাণ করে দিলেন বছর ৩৮-এর অঞ্জনা মালিক। আপাতদৃষ্টিতে তিনি শারীরিকভাবে প্রতিবন্ধী। কিন্তু সেই প্রতিবন্ধকতা বিন্দুমাত্র ছাপ ফেলেনি তাঁর মনের জোরে। সম্প্রতি এক ছবিতে সে কথাই বুঝিয়ে দিয়েছেন তিনি। যা অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে নেটিজেনদেরও।
আরও শুনুন: ‘সমাজ সংস্কারের সুযোগ পেলে বিধবা বিবাহ আইন চালু করতাম’, খুদের উত্তরে প্রশংসা নেটিজেনদের
জন্ম থেকেই দুটো হাত নেই অঞ্জনার। শিরদাঁড়া এবং দুটো পা-ও কিছুটা বিকৃত। এমন প্রতিবন্ধকতা থাকলে অনেকেই ভেঙে পড়েন। সমাজ ও পরিবারের নানারকম চাপ তাঁদের কাছে অসহ হয়ে ওঠে। অঞ্জনাও তার ব্যতিক্রম ছিলেন না। খুব কম বয়সেই বাড়ি ছেড়ে অজানার উদ্দেশে বেরিয়ে পড়েন তিনি। তখন তো আর জানতেন না, জীবন তাঁর জন্য কী পরিকল্পনা করে রেখেছে! কোনওদিনই জীবনযুদ্ধে টিকে থাকার লড়াই থামাতে চাননি অঞ্জনা। ভাগ্যের জেরে হাজির হন ঋষিকেশে। সেই সময় ভিক্ষাবৃত্তি ছাড়া আর কোনও উপায় ছিল না তাঁর। তাতে একরকম ভাবে দিন কেটে যাচ্ছিল বটে, কিন্তু অঞ্জনা ঠিক করেন, তিনি নতুন কিছু করবেন। এদিকে তাঁর তো হাত নেই। তাই পা দিয়েই কাগজের উপর দেবতাদের নাম লেখা শুরু করেন তিনি। আর সেই লেখা পাশে নিয়েই সাহায্য চাইতে শুরু করেন।
এভাবেই কোনওক্রমে দিন কাটছিল তাঁর। প্রায়শই অদ্ভুত কৌশলে পা দিয়ে খাতায় আঁকিবুঁকি কাটতেন। ঠাকুরের নাম লিখতেন। এরকমই একদিন তাঁর এই কৌশল নজরে পড়ে জনৈক বিদেশি পর্যটকের। তিনিই অঞ্জনাকে পরামর্শ দেন, শুধু ঠাকুরের নাম না লিখে, ওইভাবে ছবি আঁকার চেষ্টা করতে। তিনিই দায়িত্ব নিয়ে আঁকা শেখানোর কথাও বলেন অঞ্জনাকে। মন দিয়ে তা শিখেও নেন অঞ্জনা। তারপরই অদ্ভুত প্রত্যাবর্তন হয় তাঁর। পা দিয়েই বিভিন্ন দেবদেবীর ছবি আঁকতে শুরু করেন অঞ্জনা। তারপর সেই ছবি বিক্রিও করতে শুরু করেন। ধীরে ধীরে পরিচিতি বাড়ে তাঁর। সম্প্রতি নিজের এই প্রতিভার কথা নেটদুনিয়াতে জানিয়েছেন তিনি। তাঁর পরিবারের সদস্যরাই সেই কাজে সাহায্য করে। বর্তমানে পাঁচ জনের সংসারে তিনিই প্রধান উপার্জনকারী। অন্যদিকে তাঁর এই মনের জোর দেখে অনুপ্রাণিত হন নেটিজেনরাও। তাঁর ছবি আঁকার অদ্ভুত কৌশল প্রায়শই চর্চার বিষয় হয়ে ওঠে তাঁদের কাছেও।