হাতের বদলে কাঁটাচামচ দিয়ে খেতে পছন্দ করেন? কিন্তু জানেন কি, এই কারণেই নেমে আসতে পারে দেবতার অভিশাপ? হ্যাঁ, এমনটাই মনে করতেন প্রাচীন যুগের মানুষেরা। কী কারণ ছিল এহেন বিশ্বাসের পিছনে? আসুন, শুনে নেওয়া যাক।
এক রাজকুমারী ছিলেন ভারী শৌখিন। আর পাঁচজন মানুষের মতো খাবারে হাত ডুবিয়ে হাতে নখে তেল ঝোল লাগাতে তাঁর ভারী আপত্তি। অতএব রাজকন্যার ফাইফরমাশ খাটার জন্য যেসব চাকরবাকরেরা নিত্য বহাল থাকত, তাদের উপর হুকুম হল, সব খাবার ছোট ছোট টুকরো করে দিতে হবে তাঁকে। আর সোনার কাঁটাচামচ দিয়ে সেই খাবার তুলে খাবেন তিনি। ঘটনাচক্রে প্লেগের হানায় মৃত্যু হয়েছিল বাইজানটাইন সাম্রাজ্যের এই রাজকুমারীর। আর তারপরে সন্ত পিটার দামিয়ান যা বলছেন, তার থেকে স্পষ্ট, রাজকুমারীর এই অকালমৃত্যুর জন্য তিনি দায়ী করছেন কাঁটাচামচ ব্যবহারের অভ্যাসকেই। তাঁর মতে, ওই অভ্যাস আসলে বিলাসিতা ছাড়া কিছুই নয়, এবং ওভাবে জীবনযাপন করার কারণেই ঈশ্বরের ক্রোধ নেমে এসেছিল রাজকুমারীর উপরে।
আরও শুনুন: বাবার পদকের মতোই পদক! দেখে অবাক শহিদপুত্র, খুদেকে ডেকে বোঝালেন অপর শহিদের স্ত্রী
অবাক হচ্ছেন? খাবার খাওয়ার জন্য যেসব বাসনকোসনের প্রচলন আছে দুনিয়া জুড়েই, তাদের তালিকার একেবারে প্রথমেই থাকবে কাঁটাচামচ। এমনকি সাহেবি কেতা অনুযায়ী হাত দিয়ে খাবার খাওয়াকে টেবল ম্যানার্সের বিরোধী বলেও ধরা যেতে পারে। অথচ দীর্ঘদিন যাবৎ কাঁটাচামচ ব্যবহার করাকে এমন ভয়ংকর পাপ হিসেবেই দেখা হত বিলিতি সমাজেও। ‘দ্য ফর্ক’ নামের একটি কবিতা জানাচ্ছে, এই অদ্ভুত জিনিসটি সরাসরি নরক থেকেই উঠে এসেছে। কবির মতে, কোনও নরখাদকের গলায় যেন পাখির পা প্যাঁচানো রয়েছে, এমনই চেহারা এই বিশেষ উপাদানটির।
আরও শুনুন: গল্পে নয়, বাস্তবেও আছে ‘লিলিপুট’দের গ্রাম… কোথায় দেখা মিলবে তার?
মানুষের সবচেয়ে প্রাচীন অস্ত্র, হাতকুঠারের আদলেই ধারালো ছুরি তৈরি হয়েছিল বলে মনে হয়। খাবারের টেবলে তার দেখা মিললেও, কাঁটাচামচের আবির্ভাব ঘটেছে বেশ দেরিতে। আট কি নয় শতাব্দী নাগাদ ইরানের কোনও কোনও ব্যক্তিকে কাঁটাচামচ ব্যবহার করতে দেখা যায়। এগারো শতক নাগাদ, বাইজানটাইন সাম্রাজ্যেই কাঁটাচামচ ব্যবহারের উল্লেখ পাওয়া যায়। সেই সময়ের একটি চিত্রিত পাণ্ডুলিপিতে দেখা যায় দুজন মানুষের কাঁটাচামচ দিয়ে খাওয়ার ছবি। কিন্তু বহুদিন পর্যন্ত মানুষ একে সাদরে গ্রহণ করেনি। কারণ অনেকেরই বিশ্বাস ছিল, ঈশ্বর মানুষকে প্রয়োজনীয় সব অঙ্গই দিয়েছেন, আর সেইজন্যই এই ধরনের নকল হাত ব্যবহার করা আসলে অশুভ। এমনকি এতে খোদ ঈশ্বরকেই অপমান করা হয়, এই বিশ্বাসেই কাঁটাচামচ সরিয়ে রেখেছিলেন সেকালের মানুষ।