গরমে আরাম বলতে একটু আমের আহ্লাদ। কাঁচামিঠে থেকে শুরু করে পাকা আমের জন্যই গরমের যাবতীয় ক্লান্তি সহ্য করতে রাজি আমজনতা। তবে, সেই আমের দাম যদি হয় কেজিতে তিন লাখ টাকা? অবাক হলেন! আসুন, সে-আমের কথা শুনেই নেওয়া যাক।
আম তো আম-আদমির পছন্দের ফল। ফলের রাজা। তবে, দামের রাজা হলে তা সাধারণের নাগালের বাইরে চলে যায়। সাধারণ কৃষকরা তাই এমন আমই ফলান, যা বিক্রি করা সহজসাধ্য। তবে, ব্যতিক্রম কর্নাটকের ‘কৃষক’ যোসেফ লোবো। তাঁর বাগানে যে আম হয়েছে, কেজি প্রতি সেই আমের দাম প্রায় ৩ লক্ষ টাকা। অবশ্য লোকসান হচ্ছে না, বিরল গোত্রের আম ফলিয়ে লাভেরই মুখ দেখেছেন তিনি।
যসেফ লোবো-কে অবশ্য সাধারণ কৃষকের গোত্রে ফেলা যায়। কৃষি তাঁর কাছে রীতিমতো পরীক্ষার বিষয়। এবং এই বিদ্যায় তিনি দক্ষ। শখ হয়েছিল, জাপানি আমের চাষ নিয়ে তিনি পরীক্ষায় মাতবেন। সেইমতো তাঁর বাগানে বছর তিনেক আগে এনে রোপণ করেছিলেন মিয়াজাকি আমের চারা। এই মিয়াজাকি ম্যাঙ্গোর খ্যাতি গোটা বিশ্বেই। মূলত জাপানেই এই প্রজাতির আমের ঘরবসত। তবে ইদানীং সে আম বিশ্বের অন্যত্রও ছড়িয়ে পড়েছে। প্রশ্ন হচ্ছে, এই আমের এত কদর কেন? স্বাদে-গন্ধে-রূপে অতুলনীয়, সেই কারণে? সেরকম আমের সংখ্যা তো কম নয়। সত্যি বলতে গেলে, স্বাদের নিরিখে দেশি প্রজাতির কয়েকটি আমও মিয়াজাকিকে টেক্কা দিতে পারে। মিয়াজাকির বাজিমাত আসলে অন্য কারণে। এই প্রজাতির আমের পুষ্টিগুণ তথা ওষধিগুণ দুর্দান্ত। বিটা ক্যারোটিন, ফোলিক অ্যাসিড এবং অ্যান্টিঅক্সিড্যান্টস থাকার দরুণ এই আম বিশ্বজুড়ে সমাদৃত।
আরও শুনুন: বায়না ছিল ‘কুড়কুড়ে’ চাই, আনতে বেমালুম ভুলে গেলেন স্বামী! রেগে ডিভোর্স চাইলেন স্ত্রী
তার চাষ করাও নেহাত সহজ নয়। যোসেফ নিজেই বছর তিনেকের চেষ্টায় তবে আমের মুখ দেখেছেন। গত বছর গাছে মুকুল এসেছিল মাত্র। আম হয়নি। এ বছর গোটাকয় আম ফলেছে। আর সে দামের হবে কেজিপ্রতি প্রায় তিন লাখ টাকা। উল্লেখ করার মতো বিষয় হল, এত দাম হলেও এই আমের বিক্রির বাজার আছে। ফলে, যোসেফের যে লোকসান হবে, তা কিন্তু নয়। সম্প্রতি ভারতে এই মিয়াজাকি প্রজাতির আমের চাষ বাড়ছে। এখনও বলতে হাতে গোনা কয়েকজনই তা চাষ করেন। যোসেফকে দেখে হয়তো আরও অনেকেই উৎসাহিত হবেন।
হরেক রকম পরীক্ষামূলক চাষবাসে যোসেফের উৎসাহও অবশ্য কম নয়। শুধু জাপানি আম ফলিয়েই ক্ষান্ত হচ্ছেন না তিনি। ব্রাজিলের চেরি, তাইওয়ানের কমলা চাষের দিকে এখন তাঁর মন। ব্যবসায়িক সাফল্য জরুরি, তবে চাষবাদ তো শিল্পও বটে। সে কথাই যেন দেশবাসীকে মনে করিয়ে দিচ্ছেন ‘শিল্পী’ যোসেফ।