অপহরণ করা হয়েছে আস্ত একটা স্কুল। তা করেছেন মাত্র একজনই। মুক্তিপণ ১০০ কোটি টাকা। না দিলে স্কুলে ঢুকতে পারবে না কেউ। টানা চারদিন এই দাবিতে স্কুল দখল করে রাখলেন ব্যক্তি। দিনরাত এক করে পাহারা দিলেন তীর-ধনুক নিয়ে। কী হল তারপর? আসুন শুনে নেওয়া যাক।
নিজেদের দাবি পূরণ করতে অপহরনের ছক কষেন দুষ্কৃতিরা। কখনও ধনী ব্যবসায়ী কিংবা তাঁর পরিবারের কেউ। আবার কখনও ট্রেন, প্লেন জাতীয় জনপরিবহন। সাধারণ মানুষকে বন্দী বানিয়ে মুক্তিপন চেয়ে নেন অপহরণকারীরা। তবে এক্ষেত্রে কিডন্যাপ করা হয়েছে একটা স্কুল। তার জন্য মুক্তিপণ হিসেবে চাওয়া হয়েছে ১০০ কোটি টাকা।
শুনতে অবাক লাগলেও সত্যি। এমন কাণ্ড ঘটেছে ওড়িশায়। অপহৃত স্কুলের নাম বড়জোলা আপার প্রাইমারী। পড়ুয়া ও শিক্ষক মিলিয়ে প্রতিদিন ভালোই ভিড় হয় স্কুলে। এমন একটা জায়গা অপহরণ করা একজনের পক্ষে সম্ভব? হয়তো না। কিন্তু এক্ষেত্রে অদ্ভুত ফন্দি এঁটেছিলেন অপহরণকারী সাদান মুণ্ডা। স্থানীয় নন, স্কুলের কেউই তাঁকে চিনতেন না। হঠাৎ তীর-ধনুক নিয়ে হাজির হন স্কুলে। বেছে বেছে শনিবার এসেছিলেন। কারণ সেদিন স্কুলে খুব একটা কেউ যায় না। ছুটিও অনেকসময় তাড়াতাড়ি হয়। এমন একটা দিনে স্কুলে ঢুকতেও অসুবিধা নেই, আবার ফাঁকা স্কুল দখল করতেও সমস্যা হবে না। এতশত ভেবেই সসস্ত্র সাদান হাজির হন ওই স্কুলে। কয়েকজন শিক্ষক যথারীতি সেইসময় ছিলেন। তাঁদের প্রত্যেককেই ভয় দেখিয়ে স্কুলে ঢুকে পড়েন সাদান। পরেরদিন স্কুল ছুটি। কাজেই গোটা স্কুল বাড়ি একাই দখল কর বসে থাকেন ওই ধনুকধারী। ইতিমধ্যে স্থানীয়রা ঘটনার কথা জেনেছেন। কয়েকজন স্কুল চত্বরে গিয়ে দেখার চেষ্টাও করেছেন ভিতরে কে রয়েছে। প্রত্যেককেই কমবেশি আহত হতে হয়েছে। আসলে স্কুলে ঢুকেই ধনুক নিয়ে ছাদে উঠে যান সাদান। কাউকে আশেপাশে দেখলেই তীর ছোঁড়া শুরু করেন। খেয়াল না করে অনেকেই আহত হন। এমনকি পুলিশ আধিকারিকরাও তীরের আঘাত সহ্য করেছেন। এদিকে সোমবার থেকে স্কুল শুরু। সেদিন সকলেই স্কুলে যাবে। কিন্তু ঢোকার উপায় নেই। ছাদে দাঁড়িয়ে ধনুক হাতে পাহারা দিচ্ছেন সাদান।
প্রথম তিনদিন এভাবেই কাটে। পাশের গ্রামে অন্য এক স্কুলে পড়ুয়াদের পঠন-পাঠনের ব্যবস্থা করা হয়। তার থেকেও জরুরি অবশ্য ছিল মিড-ডে-মিল। অনেক পড়ুয়াই স্রেফ খাবার আশায় স্কুলে যেত। তাদের কথা ভেবেই তড়িঘড়ি অন্য স্কুলে মিড-ড-মিলের ব্যবস্থা করা হয়। এরপর সকলের নজর যায় সাদানের দিকে। তখনও কেউ তাঁর নাম বা পরিচয় জানতেন না। ঠিক কেন এমনটা তিনি করছেন, এ ব্যাপারে কারও ধারণা ছিল না কিছু। চতুর্থদিনে সবটা খোলসা করেন অপহরনকারী সাদান। স্কুলের ছাদ থেকে আট পাতার চিঠি নীচে ফেলেন তিনি। তা দেখে তো সকলের চক্ষু চড়কগাছ! আসলে, ওই চিঠিতেই মুক্তিপণের কথা লিখেছিলেন সাদান। তাঁর দাবি, স্কুলবাড়ি ছাড়ানোর জন্য দিতে হবে ১০০ কোটি টাকা। সঙ্গে একটা নতুন পাকাবাড়ি, তাতে সৌরবিদ্যুত, কুয়ো আর চাষ করার মতো জায়গা থাকতে হবে। স্বাভাবিক ভাবেই এই দাবি মেটানো সম্ভব নয়। তাই বাধ্য হয়ে কড়া পদক্ষেপ করে পুলিশ। বাইরে থেকে বিশাল বাহিনী আনা হয়। তাঁরাও সম্পূর্ণভাবে প্রস্তুত ছিলেন সাদানের তীর-ধনুকের সামনে লড়াই করার জন্য। লোহার বর্ম নিয়ে আলাদা মই-এ চড়ে স্কুলের ছাদে ওঠেন পুলিশ আধিকারিকরা। চারদিক দিয়ে ঘিরে ধরে ফেলা হয় সাদানকে। আটক করে থানায় এনে তাঁর পরিচয় সহ যাবতীয় তথ্য জানতে পারে পুলিশ। একইসঙ্গে এই ব্যক্তিকে মানসিক ভারসাম্যহীন বলেও দাবি করা হয়। কাজেই তিনি যা করেছেন তা অপরাধ হলেও সহানুভুতির নজরেই দেখা হয়েছে। কোনওভাবেই আঘাত করা হয়নি সাদানকে। স্কুলের পরিবেশ আবারও স্বাভাবিক করা হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে আগামীদিনে তদন্ত চলতে পারে বলেই মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল।