দেশের অন্যতম কঠিন পরীক্ষাতেও তাঁর সাফল্য চোখে পড়ার মতোই। শুধু সফলই হননি, আদায় করে এনেছেন সেরার শিরোপাও। NEET-এর অল ইন্ডিয়া মেডিক্যাল এনট্র্যান্স এক্সামে প্রথম স্থানাধিকারী শগুন জীবনের কোনও পরীক্ষাতেই প্রথম বই দ্বিতীয় হননি। আসুন, শুনে নিই তাঁর এই ধারাবাহিক সাফল্যের গল্প।
জীবনের পরীক্ষায় জেতা-হারা তো লেগেই থাকে। স্কুল-কলেজের পরীক্ষাতেও কখনও কম নম্বর পাননি, এমন লোক বোধহয় কমই রয়েছে দুনিয়ায়। তবে এই তরুণী ব্যতিক্রম। আজ পর্যন্ত জীবনের কোনও পরীক্ষাতেই দ্বিতীয় হননি তিনি। এবার দেশের অন্যতম কঠিন পরীক্ষাতেও সেই ধারাবাহিকতা বজায় রাখলেন দিল্লির মেয়ে ডক্টর শগুন বাত্রা। ২০২২ সালের অল ইন্ডিয়া মেডিক্যাল এনট্র্যান্স এক্সামের স্নাতকোত্তর স্তরে প্রথম স্থান অর্জন করলেন শগুন।
আরও শুনুন: শিক্ষাঋণ মেটাতে না পেরে আত্মঘাতী বাবা, বাবার স্বপ্নপূরণ করতে UPSC পাশ মেয়ের
দিল্লি পাবলিক স্কুল আরকে পুরম থেকে বারো ক্লাস পাশ করেন শগুন। সেখানেও বরাবর প্রথম স্থান অর্জন করে এসেছেন তিনি। ২০১৬ সালে দিল্লির মৌলানা আজাদ মেডিক্যাল কলেজে ডাক্তারিতে ভরতি হন শগুন। সেখানে স্বর্ণপদকও পান তিনি। এমবিবিএসের প্রতিটি ধাপেই প্রথম স্থান অর্জন করেছিলেন তিনি।
জিপমার (JIPMER) স্নাতক পরীক্ষায় ৫২ ব়্যাঙ্ক করেছিলেন শগুন। এইমসেও (AIIMS) আসে ভাল ব়্যাঙ্ক। জেইই মেন এনট্রান্সেও তার ব্যতিক্রম হয়নি। তবে সেই ধারাবাহিকতা যে NEET স্নাতকোত্তর পরীক্ষাতেও বজায় রাখতে পারবেন, তা আদৌ ভাবেননি শগুন। তবে বরাবরের কৃতী শগুন বাউন্ডারি হাঁকিয়েছেন NEET-এও।
করোনা, লকডাউনের জন্য পড়াশোনায় ক্ষতি হয়েছে অনেকটাই। চিকিৎসাবিজ্ঞানের সিলেবাসে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশই হল ক্লিনিক্যাল লার্নিং। যেখানে রোগীদের সঙ্গে সংযোগের সুযোগ পান নবীন চিকিৎসকেরা। সেই জায়গাটা করোনার জন্য অনেকটাই মার খেয়েছে। তবে হাল ছাড়েননি শগুন। অনলাইনেই যতটা সম্ভব তা পূরণ করার চেষ্টা করেছিলেন বলেই জানান কৃতী এই ছাত্রী।
অতিমারির সময়ে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে করোনার চিকিৎসায় জানপ্রাণ লাগিয়ে দিয়েছিলেন শগুনরা। তিনি যখন ইন্টার্নশিপ শুরু করেন, সেসময়েই আছড়ে পড়ে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ। ওই মুশকিল সময়ের মধ্যেও চিকিৎসক হিসেবে অনেক মূল্যবান শিক্ষা পেয়েছেন বলেই জানান শগুন। আপাতত মেডিসিনে স্নাতকোত্তর করতে চান তিনি। আর তার জন্যই জোরদার প্রস্তুতি ইতিমধ্যেই শুরু করে দিয়েছেন শগুন।
আরও শুনুন: না ডাক্তার, না ছুরিকাঁচি! প্রশান্ত মহাসাগরের বুকেই সন্তানের জন্ম দিলেন মহিলা
ছোটবেলা থেকেই যে তিনি ডাক্তার হতে চেয়েছিলেন এমনটা কিন্তু নয়। তবে বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে অনুভব করেন, রাতারাতি মানুষের জীবনটাকে আমূল পালটে দেওয়ার ক্ষমতা রয়েছে এই একটি পেশাতেই। সেই টানেই চিকিৎসার জগতে আসা। বাবা ছিলেন তথ্যপ্রযুক্তিকর্মী, মা গৃহবধূ। শগুনই তাঁদের বংশের প্রথম ডাক্তার। স্বভাবতই তাঁর সাফল্যে খুশি বাবা-মা। কিন্তু এত বড় সাফল্যের মাঝেও একটু দুঃখ রয়েই গিয়েছে। NEET-এর প্রস্তুতি নেওয়ার সময়ই আচমকা মারা যান শগুনের একমাত্র ভাই। দিদির প্রথম হওয়াটা তাঁর আর নিজের চোখে দেখা হল না। আর এত সব সাফল্যের মধ্যেই সেই কাঁটাটাই কোথায় যেন বিঁধে রয়েছে শগুনের গলায়।