প্রতি বছর শীত পড়া মাত্রই সূর্য ডুবে যায় পাহাড়ের কোলে। নভেম্বর থেকে প্রায় ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সেই যে গা ঢাকা দেয় আর তার দেখা নেই। তাই সুয্যিমামাকে বশে আনতে এক জব্বর উপায় বের করেন এই গ্রামবাসীরা।
হাড় কাঁপানো ঠান্ডায় জড়সড় হয়ে পড়ি আমরা সকলেই। তার মধ্যে রোদের অভাব হলে তো আর কথাই নেই। কনকনে শীতে কাবু হওয়া ছাড়া আর উপায় কই! তবে প্রকৃতির এই খামখেয়ালিপনার কাছে হার মানতে নারাজ একটি গ্রামের বাসিন্দারা। আর তাই, সূর্যকেই কার্যত হাতের মুঠোয় ধরে এনেছেন তাঁরা।
কীভাবে সম্ভব হল তা?
এ আসলে এক পাহাড়ি গ্রামের গল্প। অনেক বছর ধরে গ্রামবাসীরা ভুগছিলেন মহা সমস্যায়। প্রতি বছর শীত পড়া মাত্রই সূর্য ডুবে যায় পাহাড়ের কোলে। নভেম্বর থেকে প্রায় ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সেই যে গা ঢাকা দেয় আর তার দেখা নেই। তাই সুয্যিমামাকে বশে আনতে এক জব্বর উপায় বের করেন এই গ্রামবাসীরা। তৈরি করা হয় একটি পেল্লায় আয়না। প্রায় ৮ মিটার চওড়া আর ৫ মিটার লম্বা আয়নাটিকে খাড়া করে দাঁড় করানো হয়েছিল ১১০০ মিটার উঁচুতে। পাহাড়ের ঠিক উল্টো দিকটিতে। তবে এই আয়না কিন্তু যে-সে আয়না নয়। আয়নায় বসানো ছিল আধুনিক প্রযুক্তি। কম্পিউটার চালিত এই আয়নাটির কাজ ছিল সারাদিন ধরে সূর্যকে নজরে রেখে প্রতিফলিত আলোকে দূর-দূরান্ত পর্যন্ত পৌঁছে দেওয়া। আয়নাটি দিনে কমপক্ষে ৬ ঘণ্টা ধরে ৩০০ বর্গগজ এলাকাকে আলোকিত করে তুলতে পারে। শুধু তাই নয়, পাশাপাশি আলো-আঁধারি কুয়াশাকে কাটিয়ে দিয়ে ছড়িয়ে দিতে পারে ঝলমলে রোদের উপশম।
ইতালির ভিগানেলা গ্রামের বাসিন্দারা প্রায় তাক লাগিয়েছেন বলা যায়। এই অভিনব ভাবনাটি আশেপাশের সমস্ত দেশগুলিতে ভীষণভাবে সাড়া ফেলেছে। উচ্ছ্বসিত প্রশংসায় মেতে উঠেছেন সবাই। সারা বিশ্ব যখন জীবনযাত্রার উন্নতির জন্য নানান আধুনিক উপায় ব্যবহার করছে, সেইখানে দাঁড়িয়ে এমন পরিবেশবান্ধব উদ্যোগের জুড়ি মেলা ভার। প্রকৃতির সঙ্গে বন্ধুত্ব পাতিয়েই প্রকৃতির প্রতিকূলতা জয়। তাতে প্রকৃতির যেন ক্ষতি না হয়! মানুষের সভ্যতার সেই গোড়ার দিনের কথাটিই আবার যেন মনে করিয়ে দিয়েছেন এই গ্রামের বাসিন্দারা।