একজন দায়িত্বশীল নাগরিকের কাছে এই ধরনের কাজ একেবারেই প্রত্যাশিত নয় বলে জানিয়েছেন অনেকেই। তাঁদের মনে হয়েছে, জীবনের মার যাঁদের ভিক্ষুক হতে বাধ্য করেছে, তাঁদের জন্য অন্তত আর একটু সহমর্মিতা প্রত্যাশিত ছিল।
এমনটা যে আদৌ সম্ভব হতে পারে তা কেউ ভেবে উঠতে পারেননি। গল্পে হলে আলাদা কথা। তা বলে বাস্তবেও এমন কিছু হয়! যাঁরা শুনছেন তাঁদের বিশ্বাস হচ্ছে না। চক্ষু-কর্ণের বিবাদভঞ্জন করে মিলিয়ে নিচ্ছেন। এবং বুঝতে পারছেন, যা রটেছে তার কিছুটা নয়, পুরোটাই সত্যি। বাচ্চা কোলে নিয়ে সাহায্যপ্রার্থী এক মহিলার হাতে কন্ডোম তুলে দিয়েছেন জনৈক ডাক্তারবাবু।
ঘটনায় খানিকটা চমক লাগে বইকি! তবে, ডাক্তারবাবুর এই কাজ যে অন্য কেউ প্রকাশ্যে এনেছেন, তা নয়। তিনি নিজেই তা সামনে এনেছেন এবং জানিয়েছেন, রাস্তার পাশে বসে থাকা ভিক্ষুককে সাহায্য করার এর থেকে ভালো পথ আর কী হতে পারে!
যত মত, তত পথ যেমন সত্যি। তেমনই এক পথে যে ভিন্ন মত উঠে আসবে তা-ও সত্যি। চিকিৎসকের এই ভিডিও দেখে অনেকেই ক্ষুব্ধ হয়েছেন। এমন কাজ সংবেদনশীল নয় বলেই মনে হয়েছে বহু মানুষের। তাঁরা চাঁচাছোলা সমালোচনাও করেছেন। কেউ কেউ মনে করছেন, অন্যের অসহায়তাকে মূলধন করে নিজের ভিডিও কন্টেন্ট বানিয়েছেন ওই চিকিৎসক। মহিলা তো শুধু একা নন, পাশে শিশুটিও ছিল। ফলে একজন দায়িত্বশীল নাগরিকের কাছে এই ধরনের কাজ একেবারেই প্রত্যাশিত নয় বলে জানিয়েছেন অনেকেই। তাঁদের মনে হয়েছে, জীবনের মার যাঁদের ভিক্ষুক হতে বাধ্য করেছে, তাঁদের জন্য অন্তত আর একটু সহমর্মিতা প্রত্যাশিত ছিল।
সমালোচনা যথেষ্টই ক্ষুরধার। আর তার মূলে আছে একজন দরিদ্র মানুষের সঙ্গে যে ব্যবহার করা হয়েছে সেই প্রসঙ্গটি। ডাক্তারবাবুর লক্ষ্য সম্ভবত ছিল দারিদ্র্যের বিরুদ্ধেই বার্তা দেবার। যদিও স্পষ্ট করে তিনি তা উল্লেখ করেননি। তবু তাঁর ভিডিও-র ক্যাপশন দেখে বোঝা যায়, অপরিকল্পিত সন্তানধারণ, জনসংখ্যা বৃদ্ধি যে দারিদ্র্যের অন্যতম কারণ, সেই কথাটি নিহিত আছে। এই দারিদ্রই মহিলাকে পথে নেমে ভিক্ষা করতে বাধ্য করেছে। আর তাই একেবারে গোড়ার কারণটি যাতে নির্মূল হয় তাই তাঁর এমন কাজ। মোটের উপর গোটা কর্মকাণ্ডে এই বার্তাটিই প্রচ্ছন্ন।
উদ্দেশ্য হয়তো ভালোই ছিল। তবু এই পদ্ধতি কি ঠিক? যে সচেতনতার কথা ডাক্তারবাবু বলছেন, তা কি এভাবে ছড়িয়ে দেওয়া সম্ভব? নেটিজেনদের সমালোচনার ভিতর এই প্রশ্নটিই আসলে থেকে গেল।