ডারউইনের বিবর্তনবাদের সেই তত্ত্ব তো সকলেরই জানা। তবে সেই বিবর্তনের প্রমাণ যে আজকের পৃথিবীতেও হাতেনাতে খুঁজে পাবেন বিজ্ঞানীরা, তা বোধহয় ভাবতে পারা কঠিন। তবে তেমনটাই হয়েছে। সাইবেরিয়া থেকে এক প্রাচীন মানবসন্তানের সন্ধান পেয়েছেন তাঁরা। যে নিজে আধুনিক মানব হলে কী হবে, তাঁর বাবা-মা ছিলেন আদিম মানব। শুধু তা-ই নয়, তাঁরা দুজনে আলাদা আলাদা প্রজাতিভুক্তও বটে। আসুন, শুনে নিই সেই আশ্চর্য মানবের গল্প।
বিবর্তনবাদের ইতিহাস অনুযায়ী, সারা পৃথিবী জুড়ে কয়েক কোটি প্রজাতির প্রাণী রয়েছে। তার মধ্যে বহু প্রাণীরই বিলুপ্তি ঘটেছে প্রকৃতির নিয়মে। আবার বহু প্রাণী বিলুপ্তপ্রায় হয়ে বেঁচে রয়েছে। পরিবেশের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বেঁচে থাকার লড়াইয়ে প্রায় সব প্রাণীর মধ্যেই ঘটেছে পরিবর্তন। মানুষও তার ব্যতিক্রম নয়। দীর্ঘদিন ধরে অভিযোজনের ফলে মানুষের আকৃতির নানান বদল হয়েছে। সোজা হয়ে হাঁটতে শিখেছে মানুষ। আরও ক্ষুরধার হয়েছে তার বুদ্ধি। মানুষের আদিমতম সেই রূপের সঙ্গে আজকের মানুষের মিল খুঁজে পাওয়া দুষ্কর।
আরও শুনুন: প্রকৃতির টানে নয়, বিখ্যাত মানুষের সমাধি দেখতেই বিশ্বভ্রমণে ব্যক্তি
মানুষের বিবর্তন হওয়ার ধাপগুলির মধ্যে অন্যতম হলো নিয়েন্ডারথালস। যারা আজ থেকে প্রায় ৩০ হাজার বছর আগে বসবাস করত পৃথিবীতে। ঐতিহাসিকরা জানান, এই প্রজাতির মানুষ ছিল অস্ত্র বানাতে পারদর্শী। প্রায় তিনটি শৈলযুগ কাটিয়ে ধীরে ধীরে বিবর্তিত হতে শুরু করে মানুষের এই প্রজাতিটি। সে সময়ই পৃথিবীতে আসতে শুরু করে ডেনিসোভানস নামে নতুন এক মানব প্রজাতি। তবে বিবর্তন তো আর একদিনে হয় না। এটাকে একটা দীর্ঘ প্রক্রিয়া বলা যেতে পারে। তবে আশ্চর্যের কথা, প্রায় ৫০ হাজার বছর আগে এই দুই প্রজাতিভুক্ত মানুষদের সঙ্গে বাস করত আজকের মানব অর্থাৎ হোমো সেপিয়েন্স। আর তেমনটাই সম্প্রতি জানতে পেরেছেন বিজ্ঞানীরা।
আরও শুনুন: আকাশ থেকে ঝরেছিল ‘রক্তবৃষ্টি’, কারণ নিয়ে ধন্দে ছিলেন বিজ্ঞানীরাও
সম্প্রতি সাইবেরিয়ার ডেনিসোভা গুহায় এক তেরো বছর বয়সি বালিকার কঙ্কাল আবিষ্কার করেন একদল গবেষক। সেই কঙ্কালের হাড় পরীক্ষা করে তাঁরা জানান, এই শবদেহ প্রায় ৫০ হাজার বছরের পুরনো। ডিএনএ পরীক্ষার পর জানা গিয়েছে, বালিকার দেহে একই সঙ্গে তিন প্রজাতির মানুষের চিহ্ন রয়েছে। অর্থাৎ সে নিজে একজন আধুনিক মানুষ হলেও তাঁর অভিভাবকেরা ছিলেন আদিম প্রজাতিভুক্ত। গবেষকেরা জানান, সেই বালিকার মা আদতে ছিলেন নিয়েন্ডারথাল গোত্রীয় আর বাবা ছিলেন ডেনিসোভান প্রজাতির। একসঙ্গে গোষ্ঠীবদ্ধ হয়ে থাকার সময় দুই প্রজাতির এমন মিলন হতে পারে বলেই মনে করছেন গবেষকরা। তবে আশ্চর্যের ব্যাপার যেটা, তাঁদের গর্ভের সন্তান কিন্তু হয়েছে আধুনিক মানব অর্থাৎ হোমো সেপিয়েন্স। আর এই আবিষ্কার বেশ যুগান্তকারী বলেই মনে করছেন নৃতত্ত্ববিদেরা। মানুষের বিবর্তন সম্পর্কে এই আবিষ্কার নতুন দিশা দেখাতে পারে বলেও বিশ্বাস তাঁদের।