ফাঁকা রাস্তায় একা একা হাঁটতে গেলে আপনি কী গুনগুন করে গান ধরেন? দূরে কোথাও লং ড্রাইভে গেলে গাড়িতে গান না-বাজলে ঠিক চলে না, তাইতো? আসলে এ সবই আমাদের অভ্যাস। একা থাকলে মনের অবচেতনে কখন যে প্রিয় গানের দু-কলি ভেসে ওঠে তা আমরা টেরও পাই না। কিন্তু মনে করুন রাস্তা দিয়ে আপনি চুপচাপ গাড়ি চালিয়ে যাচ্ছেন। আশেপাশে কেউ নেই। অথচ রাস্তা থেকে ভেসে আসছে নানানরকমের সুর! ঘাবড়ে যাবেন নিশ্চয়ই। ভাববেন আপনি হয়তো ভুল শুনছেন কিংবা এ কোনও ভূতুড়ে কাণ্ড। অদ্ভুত শোনালেও এমন রাস্তা কিন্তু সত্যিই আছে, যে-রাস্তা দিয়ে গাড়ি চালিয়ে গেলে সুর ভেসে আসে রাস্তা থেকে-ই। এর পিছনে আসল রহস্যটা ঠিক কী? কোথায় আছে এমন আজব রাস্তা? আসুন শুনে নেওয়া যাক।
আমাদের চারপাশে কতই না আজব জিনিস রয়েছে। প্রকৃতি তার নিজের খেয়ালে এমন অনেক কিছুই সাজিয়ে রেখেছে, যার বাখ্যা খুঁজে পাওয়া মুশকিল। তবে চমকপ্রদ সৃষ্টিতে মানুষেও কিছু কম যায় না। বিশ্বের বিস্ময় মানুষও কম সৃষ্টি করেনি। বড় বিস্ময়ের কথা নাহয় সরিয়েই রাখা হল, দৈনন্দিন জীবনেই কত ছোট ছোট উদ্ভাবন আছে মানুষের, যা অবাক করেছে সকলকে। ঠিক সেরকমই, সুর-ভেসে-আসা এই রাস্তাগুলিও মানুষের এক অবাক-সৃষ্টি। এই রাস্তায় যেতে যেতে গান শুনতে হলে লাগবে না কোনও সাউন্ড সিস্টেম! কানে দিতে হবে না ইয়ারফোন-ও। চলতি পথে আপনা থেকেই বেজে উঠবে সুর। হ্যাঁ, ঠিকই শুনছেন। জাপানের ইঞ্জিনিয়ারদের তৈরি এমন রাস্তা-ই অবাক করেছে বিশ্বকে। তাও আবার একটি নয়। চার চারটি এমন রাস্তা রয়েছে, যার উপর দিয়ে গাড়ি চললে স্বয়ংক্রিয় ভাবে ভেসে আসে সুর।
আরও শুনুন: ৬৫০০ কিমি পাড়ি দিয়ে মক্কায় অ্যাডাম মহম্মদ, পথ-পরিক্রমায় দিলেন সমন্বয়ের বার্তা
এই রাস্তাগুলোর পোশাকি নাম দেওয়া হয়েছে- ‘মেলোডি রোড’। প্রায় ২৫০ মিটার লম্বা এই রাস্তাগুলিতে নির্দিষ্ট দূরত্বে রয়েছে স্পিডব্রেকার আর ছোট ছোট কিছু গর্ত। যার উপর দিয়ে গাড়ি চললেই অদ্ভুত ভাবে বেজে ওঠে সুর। আসলে গাড়ির চাকার ঘর্ষণেই তৈরি হয় এই সুর। কিন্তু গাড়ির ভিতরে থাকা মানুষদের মনে হয় রাস্তা থেকেই ভেসে আসছে সুর। আর সেই সুর যথেষ্ট শ্রুতিমধুর। তবে নেহাত সংগীতপ্রীতির কারণে যে এই ধরনের রাস্তা বানানো হয়েছে, এমনটা ভাবার কারণ নেই। এর পিছনে আসল কারণটা যদিও অন্যরকম। ফাঁকা রাস্তায় গাড়ি চালানোর সময় অনেকেই অন্যমনষ্ক হয়ে পড়তে পারেন চালক। কিংবা পাশে কেউ না-থাকলে চোখ লেগে আসে অনেক চালকের। যার ফলে ঘটে যেতে পারে মারাত্মক দুর্ঘটনা। তবে এই রাস্তায় গাড়ি চালালে এমন কিছু হওয়ার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। আসলে পথ দুর্ঘটনা এড়াতেই এমন চমকপ্রদ ব্যবস্থা করেছেন জাপানি নির্মাতারা। এছাড়া এই ধরনের রাস্তায় নির্দিষ্ট দূরত্বে স্পিড-ব্রেকার থাকায় বেশি গতিতেও গাড়ি চালাতে পারেন না চালক। একইসঙ্গে শ্রুতিমধুর সুর শোনার জন্য বেশ কিছু নিয়মও মানতে হয় চালককে। প্রথমত একেবারে রাস্তার ধার দিয়ে চালাতে হবে গাড়ি। আর গাড়ির স্পিড কখনোই খুব বেশি করা যাবে না। নাহলে এই সুর এতটাই বিশ্রী ভাবে বেজে উঠবে যে, চালক গাড়ি থামাতে বাধ্য হবেন।
আরও শুনুন: বয়সের বাধা পেরিয়ে ‘ইউনিফর্ম’ পরে নিয়মিত স্কুলে হাজিরা, নজির বৃদ্ধাদের
তাই একমাত্র সঠিক নিয়ম মেনে গাড়ি চালালে, তবেই গাড়ির মধ্যে বসে চালক অনুভব করতে পারবেন এক মনোরম সাংগীতিক আবহ। বিভিন্ন বিখ্যাত গানের সুর ভেসে আসে ওই বিশেষ রাস্তা দিয়ে। বর্তমানে সারা পৃথিবীর কাছেই আকর্ষণের বিষয় এই রাস্তা। বিশেষত পর্যটকেরা বহুদূর থেকে এই রাস্তার আমেজ উপভোগের জন্যও ছুটে আসেন জাপানে। প্রথমে তেমন ব্যবস্থা না থাকলেও বর্তমানে সে-দেশের সরকার শুধুমাত্র পর্যটকদের জন্যই সংরক্ষিত করে রেখেছে এই রাস্তাগুলি।