ভাই-বোনের সম্পর্ক যেমন মধুর, তেমন তার ভিতর ঝঞ্ঝাট-ঝামেলাও কম নেই। এই রোদ্দুর তো এই মেঘ। এই দুজনে হাসিখুশি, তো পরক্ষণেই কোনও কারণে বেধে গেল ঝুট-ঝামেলা। ভাই বোনের সম্পর্ক এরকমই। কিন্তু এর নেপথ্যে কী কারণ থাকতে পারে? আসুন শুনে নিই।
ভাইফোঁটার দিনটি প্রত্যেক ভাই-বোনের কাছেই খুব স্পেশাল। ভাইয়ের কপালে ফোঁটা দেওয়ার জন্য যেমন উদগ্রীব থাকে বোন বা দিদি, তেমন এই দিনটায় কোনও কারণে ফোঁটা নিতে না পারলে মন খারাপ হয় দাদা কিংবা ভাইয়ের। এমনকী প্রবাসী ভাইকে ভিডিয়ো কল করে ভারচুয়াল ফোঁটা দিতে পারলেও খুশি হয় বোন বা দিদিরা। দিনটার মাধুর্য এরকমই। আর এরকম ঝলমলে উৎসবের দিনে ছোটবেলার ঝামেলামুখর দিনগুলোর কথা মনে পড়লে বড় হয়ে যাওয়া ভাই-বোন হেসেই ফেলেন। ফেলে আসা দিনের নস্ট্যালজিয়া তাঁদের যেন আরও কাছাকাছি এনে দেয়। যে দিনগুলো এককালে বিরক্তিকর ছিল, সেই সব ফেলে আসা দিন পরবর্তীতে ফিরে আসে সুখস্মৃতি হয়ে। সে তো হল! প্রশ্ন হচ্ছে, ছোটবেলায় ভাই-বোনে এত ঝামেলা বাধেই বা কেন!
আরও শুনুন: অন্য প্রেমের গল্প! সমাজের ভ্রুকুটি উড়িয়ে উনিশের যুবককেই মন দিলেন ৫৬-র ‘যুবতী’
অনেকেই বলে থাকেন, এ খুব স্বাভাবিক ঘটনা। দুই শিশুর বড় হয়ে ওঠারই অংশ এটি। সে কথা সত্যি বটে। তবে ভাই-বোনে বা সিবলিং-দের মধ্যে এই যে ঝামেলা বাধে, তার পিছনে নির্দিষ্ট কিছু কারণও আছে। সবথেকে প্রথমেই যে কারণটা উল্লেখ করার মতো, তা হল, মা-বাবার মনোযোগ আকর্ষণ করার তাগিদ। যে বড়, একটা সময় পর্যন্ত সে মা-বাবার অখণ্ড মনোযোগ পেয়েছে। বাড়িতে ছোট-র আবির্ভাব মাত্রেই সেই মনোযোগ ভাগাভাগি হয়ে যেতে থাকে। এর ফলেই একটা দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হয়। তবে এটাই একমাত্র কারণ নয়, আরও নানারকম কারণ আছে এই ঝামেলার। দেখা যায়, একেবারে শৈশবে বাচ্চারা নিজেদের জিনিসপত্র বিশেষত খেলনার মালিকানা সম্পর্কে বেশ সচেতন থাকে। বলা যায়, একটু বেশি মাত্রাতেই সচেতন থাকে। এই পরিস্থিতিতে বাড়ির ছোটটি যদি সেই খেলনায় হাত দেয় বা নিতে চায়, তবে তো চিত্তির। গোলমালের সূত্রপাত সেখানেই। কেননা অপর বাচ্চাটি মনে করতে থাকে, তার অধিকারের জিনিস হাতছাড়া হচ্ছে।
আরও শুনুন: ভারতবর্ষে মুসলমানও প্রশাসনের শীর্ষে যেতে পারে, পাকিস্তানকে জবাব IAS শাহ ফয়জলের
আর-একটু বড় হলে বাচ্চাদের মনে ইক্যুয়ালিটি বা সমানাধিকারের বিষয়টি বেশ ভালভাবে প্রভাব ফেলে। ফলত একজন যদি দেখে যে, অন্যজনকে খানিক আলাদাভাবে ট্রিট করা হচ্ছে, তবে সে মনে মনে আহত হয়। সেই কারণেও ঝামেলা বাধতে পারে। আবার টিন-এজে পৌঁছালে ব্যক্তি-স্বাধীনতা, ব্যক্তিস্বাতন্ত্রের ধারণাগুলি পোক্ত হতে থাকে। তখন যদি তাতে কেউ হস্তক্ষেপ করতে চায়, তাঁর দরুন অবধারিত ভাবে বাধে ঝামেলা। অনেকসময় মা-বাবাদের দেখেও কলহপ্রবণ হয়ে ওঠে ভাই-বোন। যদি মা-বাবাকে কোনও একটি বিষয় নিয়ে উত্তেজিত হতে দেখে, তবে নিজেদের সমস্যাকে বাচ্চারা সেই উত্তেজিত ভাবেই সমাধান করতে চায়। যার পরিণতি হল ঝামেলা। এক্ষেত্রে মা-বাবাদের সচেতন হওয়া আবশ্যক।
আবার প্রত্যেকটা মানুষের যা হয়ে থাকে, সেরকম বাচ্চাদেরও মন-মেজাজ-মর্জি, বা যদি আমরা টেম্পারমেন্ট বলি, তা আলাদাই হয়। একজন যখন অন্যজনকে বুঝতে পারে না, তখন খুব স্বাভাবিক ভাবেই দুজনের মধ্যে ঝামেলা বাধে। এই সমস্যা বিশেষত হয় ছোটদের। ছোটদের মস্তিষ্ক বুঝেই উঠতে পারে না যে তাঁর বড় দাদা বা দিদি কী চাইছে আর কেনই বা বিরক্ত হচ্ছে। এই না-বোঝার জায়গা থেকেও ঝামেলার সূত্রপাত হয়।
সাধারণ ভাবে ভাই-বোনের ঝামেলায় বাড়ির বড়রা হস্তক্ষেপ করেই না। যদি না তা মারাত্মক কোনও কিছুর দিকে গড়ায়। ফলে শৈশবের সেই সব হাতাহাতির স্মৃতি পরে হাসাহাসি হয়ে ফিরে আসে। তবে কোনও কোনও গবেষণা বলছে, এই ঝামেলার নেপথ্যে বাচ্চার মানসিক স্বাস্থ্যের অবনতির দিকটিও খেয়াল করার মতো। যদি তা হয়ে থাকে, তবে নেহাত বাচ্চাদের ঘটনা বলে, এটিকে এড়িয়ে যাওয়া যায় না। তবু শেষ পর্যন্ত ভাই-বোনের সম্পর্কের মতো মধুর বোধহয় আর কিছুই নেই। আর তাই সবকিছু পেরিয়েই হাসি-কান্নার চুনি-পান্নাই লেগে থাকে এই সম্পর্কের গায়ে।