যন্ত্রণার দেশভাগ। আর তার বিনিময়েই এল আমাদের স্বাধীনতা। একদিকে ভারতবর্ষ, অন্যদিকে জন্ম হল পাকিস্তানের। সেই পাকিস্তান থেকে আবার পরে জন্ম স্বাধীন বাংলাদেশের। এ ইতিহাস তো আমাদের সকলেরই জানা। না না, সেই ভাগ-বাঁটোয়ারার ইতিহাস খুলে এখন বসছি না। কিন্তু যদি বলি, আমাদের দেশে, মানে এই ভারতবর্ষেই আছে এক পাকিস্তান, তাহলে অবাক হবেন তো! তা অবাক হওয়ার মতো কথাই বটে! তবে সত্যি যে তা আছে, এ নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই। আসুন আজ শুনে নিই এই অদ্ভুত পাকিস্তানের কথা।
দেশ নয়, ছোট্ট একটা গ্রাম। নেহাতই ছাপোষা। আলাদা করে তার এমন বৈশিষ্ট নেই যে খবরের শিরোনামে জায়গা করে নেবে। কিন্তু নেই নেই করেও এমন একটা জিনিস এই গ্রামের সঙ্গে জুড়ে আছে, যা সকলকে যারপনাই চমকে দেয়। গ্রামটার নামই যে বেশ অদ্ভুত! যে নাম বললে অনেক ইতিহাস হুড়মুড়িয়ে চলে আসে, সেরকমই একটি নাম এই গ্রামের – পাকিস্তান। খটকা লাগল! না না, তার কোনও কারণ নেই। সত্যিই ভারতবর্ষের একটা গ্রামের নাম পাকিস্তান। আস্ত একখানা মুলুকের নামেই বিখ্যাত এই গ্রাম। বিহারের পূর্ণিয়া জেলার এই গ্রাম নিয়ে বরাবরই কৌতূহল দেশবাসীর। পাকিস্তান মানেই কাঁটাতারের ওপারের দেশ। দেশভাগের পর থেকেই আবার সে-দেশের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক একরকম আদায়-কাঁচকলায়। তার নানারকম কূটনৈতিক কারণও আছে। সে কথা আলাদা। কিন্তু একই নামের একটা গ্রাম যে ভারতবর্ষে এখনও আছে, তা বিস্ময় জাগায় বইকি!
আরও শুনুন: পছন্দের মানুষটি কি বিবাহিত! চুল বাঁধার ধরন দেখেই বুঝে যান কারা?
বিহারের যে মূল শহর, তার থেকে অনেকটা দূরে এই গ্রাম। তেমন বড়সড় কিছু নয়। গ্রামবাসীর সংখ্যাও বেশ অল্পই। মূলত চাষবাসই তাঁদের পেশা। সেই ১৯৪৭ সালে, এ গ্রামের বহু মানুষ চলে গিয়েছিলেন অন্যত্র। দেশভাগের কারণেই ভিটেমাটি ছেড়ে তাঁদের চলে-যাওয়া। অধুনা বাংলাদেশে ঠাঁই হয়েছে তাঁদের। বাস্তুভিটে ছেড়ে সেই চলে যাওয়া মানুষদের স্মৃতিতেই একসময় নাকি এ গ্রামের নামকরণ হয়েছিল পাকিস্তান। যাঁরা সেদিন ঘর ছেড়েছিলেন তাঁরা সকলেই ছিলেন ইসলাম ধর্মাবলম্বী। তবে বর্তমানে ওই গ্রামের অধিবাসীরা আর কেউই মুসলমান নন। কিন্তু পুরনো নামটা থেকেই গিয়েছে। আর তাই নিয়েই যত গেরো। গ্রামের নাম অনুসারেই পাশাপাশি গ্রামের মানুষরা এ গ্রামের অধিবাসীদের পাকিস্তানি বলে অভিহিত করেন। এখন ভারতে বসে কেউ পাকিস্তানি বলে চিহ্নিত হলে তাঁর কেমন লাগবে, সে তো সহজেই বোঝা যায়। এই গ্রামের লোকেরাও তাই পড়েন আতান্তরে। বেজায় লজ্জায় পড়ে যান তাঁরা। কেনই বা একজন ভারতবাসী খামোখা পাকিস্তানি বলে চিহ্নিত হবেন! আর বর্তমান পরিস্থিতিতে এই কথার যে অর্থ দাঁড়ায় তা-ও লজ্জিত করে গ্রামবাসীদের। কিন্তু কী আর করা যাবে! গ্রামের নামটাই যে সব সমস্যার মূলে।
আরও শুনুন: পৃথিবীর এত জঞ্জাল সব যাচ্ছেটা কোথায়! আপনার শহরে এসে ভিড়ছে না তো বিদেশি বর্জ্য?
এখানেই অবশ্য শেষ নয়, আরও সমস্যা আছে। গ্রামের এহেন নাম বলে এ গ্রামের ছেলে-মেয়েদের বিয়েও ভেস্তে যায় হামেশাই। পড়শি গ্রামের কেউই নাকি যেচেসেধে পাকিস্তানিদের সঙ্গে বৈবাহিক সম্পর্ক স্থাপন করতে চান না। এদিকে আসল পাকিস্তানের সঙ্গে এই গ্রামের ছাপোষা মানুষের কোনও যোগাযোগই নেই।
সব মিলিয়ে এককালে যা ছিল স্মৃতি, এখন তাই-ই হয়েছে গ্রামবাসীদের মাথাব্যথার কারণ। বাধ্য হয়েই তাঁরা গ্রামের নাম পালটানোর কথা চিন্তা করেন। সেইমতো প্রশাসনের কাছে দরবারও করা হয়। তবে নাম যে পালটেছে এমন খবর এখনও মেলেনি। ফলে দেশভাগ আর স্বাধীনতার স্মৃতিটুকু আছে বটে, কিন্তু তা নিয়ে গ্রামবাসীরা যে বেজায় অস্বস্তিতে, সে আর বলার অপেক্ষা রাখে না।