দুই নশ্বর মানুষের প্রেম কীভাবে কালের গণ্ডি পেরিয়ে শাশ্বত হয়ে যায়, সে কথাই বলে তাজমহল। যমুনা নদীর তীরে দাঁড়িয়ে থাকা এই অপরূপ স্থাপত্যটি স্থান করে নিয়েছে বিশ্বের সাত আশ্চর্যের তালিকাতেও। কিন্তু জানেন কি, এই একটিমাত্র নয়, একাধিক তাজমহল ছড়িয়ে রয়েছে সারা পৃথিবী জুড়ে? আসুন, শুনে নেওয়া যাক।
নিজের প্রিয়তমা বেগম মমতাজমহলের স্মৃতিতে এক অপরূপ সৌধ বানানোর পরিকল্পনা করেছিলেন মুঘল সম্রাট শাহজাহান। সেইমতো ১৬৩২ খ্রিস্টাব্দে শুরু হয়েছিল তার নির্মাণকাজ। আর গুনে গুনে কুড়িটি বছর পরে বাস্তবে রূপ নিয়েছিল সম্রাটের স্বপ্নের তাজমহল। আধুনিক কালে বিশ্বের সাত আশ্চর্যের মধ্যে স্থান করে নেয় এই স্থাপত্য। ইউনেস্কোর ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইটের তালিকাতেও যোগ হয় তাজমহলের নাম। কিন্তু আরও আশ্চর্যের কথা হল, তাজমহল আদৌ এক এবং একমাত্র নয়। হ্যাঁ, শুনতে আশ্চর্য লাগলেও সত্যি। পৃথিবীর সপ্তম আশ্চর্যের অন্যতম যে তাজমহল, তারই নাকি একাধিক প্রতিরূপ ছড়িয়ে রয়েছে সারা বিশ্ব জুড়ে।
আরও শুনুন: কেন প্রকাশ্যে স্তন দেখানো হল! খোদ ব্রিটেনে কোপ অন্তর্বাসের বিজ্ঞাপনে
তাজমহলের প্রথম প্রতিরূপটি গড়ে তোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন খোদ সম্রাট শাহজাহানই। বেগমের সমাধিমন্দিরের ঠিক মুখোমুখি, যমুনা নদীর অন্য তীরে আরেকটি তাজমহল নির্মাণের পরিকল্পনা ছিল তাঁর। যা তৈরি হবে কালো পাথরে। কিন্তু ছেলে ঔরঙ্গজেবের হাতে বন্দি হওয়ার পর সম্রাটের সে ইচ্ছা পূরণের আর সুযোগ মেলেনি।
তবে একইরকম উদ্যোগ নিয়েছিলেন সম্রাট ঔরঙ্গজেব নিজেই। অবশ্য পিতার স্মৃতির উদ্দেশে নয়। নিজের বেগম রাবিয়া-উদ-দৌরানির মৃত্যুর পর তাজমহলের নকশা অবলম্বনেই একটি সমাধিসৌধ গড়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন তিনি। মহারাষ্ট্রের অওরঙ্গাবাদে ‘বিবি কা মাকবারা’ নামের সেই সৌধটি সম্পূর্ণ করেন সম্রাটপুত্র আজম খান।
আরও শুনুন: থর আসলে হনুমান, কর্ণ আয়রন ম্যান! অ্যাভেঞ্জার্স বেদ-মহাভারত থেকেই অনুপ্রাণিত, দাবি কঙ্গনার
শাহজাহানের সিংহাসনে পরবর্তীকালে এসে বসেছিলেন যে ব্রিটিশ শাসকেরা, ভারতের অনেক সম্পদই তাঁরা নিজেদের দেশে নিয়ে গিয়েছেন। আসল তাজমহলটি নিয়ে যাওয়া সম্ভব না হলেও তারই আদলে এক স্থাপত্য গড়ে উঠেছে খোদ ইংল্যান্ডে। উনিশ শতকে ওয়েলসের রাজকুমার জর্জের বাসস্থান হিসেবে ইংল্যান্ডের ব্রাইটনে তৈরি করা হয় এটি। যার নাম ‘রয়্যাল প্যাভিলিয়ন’।
নকল করার ক্ষেত্রে পৃথিবীজোড়া সুনাম রয়েছে যে দেশের, সেই চিনও এ ব্যাপারে পিছিয়ে নেই। চিনের শেনজেন শহরের ‘উইন্ডো অব দ্য ওয়ার্ল্ড’ পার্কে রয়েছে তাজমহলের একটি প্রতিরূপ। আবার পৃথিবীর অন্যতম বিলাসবহুল ধনী শহর দুবাইয়ে একটি হোটেলের আকার নিয়েছে তাজমহল। কুড়িতলার এই পাঁচতারা হোটেলটির নাম ‘তাজ আরাবিয়া’।
ভারতের প্রতিবেশী বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা শহরেও রয়েছে ‘তাজমহল’। সে দেশের সব মানুষের পক্ষে ভারতে এসে তাজমহল দেখা সম্ভব নয়। এই কথা ভেবে ২০০৮ সালে এই প্রতিরূপটি বানিয়েছেন বাংলাদেশের চিত্রপরিচালক আহসানউল্লা।
এ কথা ঠিক যে, সপ্তম আশ্চর্যের অন্যান্য নিদর্শনগুলির মতো তাজমহল এক ও একমাত্র নয়। কিন্তু বিশ্বজুড়ে এত প্রতিরূপ গড়ে ওঠাই বোধহয় তাজমহলের সৌন্দর্যের সবচেয়ে বড় শংসাপত্র।