দুনিয়া থেকে উধাও আস্ত একটা হ্রদ। আবার ফিরেও আসে সে। এ কি ভৌতিক ঘটনা? শুনেই নেওয়া যাক।
এ যেন ‘ওয়াটার অফ ইন্ডিয়া’ ম্যাজিকের কাণ্ড। এই জল আছে, এই জল নেই। তবে সে তো নাহয় মঞ্চে ঘটতেই পারে। অনেকরকম যন্ত্রপাতি, কলাকৌশলের কায়দায় আজগুবি কত কিছুই তো সত্যি করে তোলেন জাদুকর। কিন্তু মঞ্চের বাইরে, বাস্তব দুনিয়ায়? তাও এক কাপ জল নয়, আস্ত একটা জলভর্তি হ্রদ এই আছে, এই নেই! এমনটাও কি হতে পারে?
আরও শুনুন:
ভ্রূ প্লাক করতেন মোনালিসাও! কেন ভ্রূ নেই ছবিতে থাকা মহিলার?
বাস্তব বলছে, হ্যাঁ। এমনটাই হয়েছে। এমনও উধাও হওয়ার খেলা দেখায় অস্ট্রেলিয়ার জর্জ লেক।
অস্ট্রেলিয়ার ক্যানবেরা এলাকার কাছেই রয়েছে জর্জ লেক। পৃথিবীর সবচেয়ে পুরনো হ্রদগুলির মধ্যে অন্যতম এই লেক। মনে করা হয়, কয়েক হাজার বছর আগে এই হ্রদের জন্ম। কিন্তু গোটা হ্রদটাই যেন অস্থির। একজায়গায় থাকতে তার ভারি আপত্তি। উনিশ শতকের শুরুতে প্রথমবার এই হ্রদের অদ্ভুত কাণ্ড নজরে আসে মানুষের। তারপরও একাধিকবার ঘটেছে এ ঘটনা।
আরও শুনুন:
৭৬৪২ ভাষায় নাম লিখেছেন, গীতার অধ্যায় হাতে লিখলেন বাংলাদেশের মুহাম্মাদ সাদ আহমেদ
আসলে মাঝে মাঝেই এই হ্রদের জল পুরো অদৃশ্য হয়ে যায়। ভাবছেন, এ আর আশ্চর্য কী! গরমের দিনে খালে-বিলে-নদীতে জল শুকিয়ে যাওয়ার ঘটনা তো আকছার ঘটে। আজ্ঞে না, এখানে দিনে দিনে জল শুকোয় না যে। স্রেফ হঠাৎ করেই উবে যায়। ১৮৪০ সাল নাগাদ প্রথম হ্রদের জল এভাবে অদ্রিশ্য হয়ে গিয়েছিল। বিশ শতকেও একই ঘটনা দেখা যায়। ১৯৮৬ সালে জলশূন্য হয়ে গেলেও, ১৯৯৬-তে আবার জলে ভরে যায় গোটা হ্রদ। ২০০২ এবং ২০১৬ সালেও ঘটেছে ঠিক একই ঘটনা। এই ঘটনার কথা জানাজানি হতে ১৯৭১ সালে অস্ট্রেলিয়ার ভূতত্ত্ববিদ প্যাট্রিক ডে হ্রদ পর্যবেক্ষণ শুরু করেন। তাঁর গবেষণা জানাচ্ছে, আসলে এই হ্রদ এলাকা একটি অবনত ভূমি। বিশেষ গভীরও নয়। তার তলায় জল থাকে। বৃষ্টির জল জমে জমে উপরে উঠে এলে তখন হ্রদে জল আছে বলে মনে হয়। আবার এই অঞ্চলে তুমুল ঝড় ওঠে মাঝে মাঝেই। তার জন্য এক প্রান্তের জল অন্য প্রান্তে সরে যেতে পারে বলেও মনে করা হচ্ছে। অর্থাৎ, ঠিক কী কারণে মাঝে মাঝেই এই হ্রদের সব জল উধাও হয়ে যায়, তার নিখুঁত ব্যাখ্যা মেলেনি এখনও। প্রকৃতির অনেক আশ্চর্যের একটি হয়েই রয়ে গিয়েছে অস্ট্রেলিয়ার জর্জ লেক।