এ যেন সত্যিই শিহরণ জাগানো ঘটনা। এই যে সুবিশাল মরুভূমি সাহারা, তাকে নিয়ে এত গল্প, এত কথা। অথচ জানেন , বরাবর এই মরুভূমি এমনই রুক্ষ, বালিময় ছিল না। এককালে সেখানেও ছিল সবুজের সমারোহ। ঘাসের বুক ছাপিয়ে নদী বইত কুলকুল শব্দে। অবাক হচ্ছেন নিশ্চয়ই শুনে? কিন্তু সত্যিই এককালে সেখানে ছিল ঘন বনাঞ্চল। তবে কী করে বদলে গেল সবটা? আসুন শুনে নিই সেই গল্পই।
মরুভূমি শুনলেই প্রথমেই আমাদের মনে হয় সাহারার কথা। আফ্রিকার সাহারা মরুভূমি। ধু-ধু বালি শুধু। পৃথিবীর রুক্ষতম মরুভূমিদের অন্যতম এই সাহারা। আয়তনের দিক থেকে তৃতীয় হলেও তাপমাত্রার দিক থেকে এক্কেবারে প্রথম সে। পৃথিবীর সবচেয়ে তপ্ত মরুভূমি এটি। তবে সব সময় ছবিটা কিন্তু এমন ছিল না। এই মরুভূমি এককালে ছিল ক্রান্তিয় বৃষ্টিঅরণ্য। অন্যান্য বৃষ্টি অরণ্যের মতোই বৃষ্টি পড়ত এখানেও বারোমাস। উঁচু উঁচু সব সবুজ গাছের মাঝখান দিয়ে তিরতির করে বয়ে যেত নদী।
সেই ছটফটে সবুজ অরণ্য কী করে হয়ে গেল কাঠফাটা মরুভূমি, সেই গল্পই শোনাব আপনাদের। সম্প্রতি এক দল গবেষক দাবি করেছেন, আজ থেকে প্রায় এগারো হাজার বছর আগে ওই মরুভূমি আসলে ছিল ঘন জঙ্গল। আর এই বদলের পিছনে নাকি বিরাট অবদান রয়েছে মানুষের।
আরও শোনো: একটাও রাস্তা নেই এ গ্রামে! জানেন কীভাবে যাতায়াত করেন এখানকার মানুষ?
সিওল ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির একদল পরিবেশ বিষয়ক পূরাতাত্বিক জানিয়েছেন, হাজার আষ্টেক বছর আগে মানুষের পা পড়েছিল সেই ক্রান্তিয় বৃষ্টিঅরণ্যে। মানুষের সঙ্গে সঙ্গে এসেছিল পাল পাল গবাদি পশু। ছাগল, ভেড়া, গরুর মতো সেই সব তৃণভোজী পশুদের চারণভূমি হয়ে উঠেছিল সেই জঙ্গল। গোটা বৃষ্টি অরণ্যের ঘাস ফাঁকা করে দিতে বেশি সময় নেয়নি তারা। ঘাসহীন মাটিতে সূর্যের আলো আসতে লাগল আরও বেশি করে। এককালে নাকি সুবিশাল একটি হ্রদ ও বেশ কয়েকটি নদী ছিল ওই এলাকায়। সেখানে সরিসৃপদের মেলা ছিল। পরে গবেষকেরা ওই হ্রদের তলা থেকে প্রচুর কুমিরের কঙ্কাল উদ্ধার করেন। ছিল মানুষের বসবাসও। গড়ে উঠেছিল সভ্যতা। ক্রমে সেই বনভূমি উত্তপ্ত হতে শুরু করল। কমতে লাগল বৃষ্টিও।
তবে শুধু গবাদি পশুর কারণেই যে রাতারাতি বৃষ্টি অরণ্য মরুভূমিতে পরিণত হল, এমনটা কিন্তু নয়। তার পিছনে রয়েছে অন্য কারণও। একটা সময়ের পর হঠাৎ করেই আবহাওয়া বদলাতে থাকে ওই এলাকার। সূর্যের যে কক্ষপথ ধরে পৃথিবী প্রদক্ষিণ করে, সেই কক্ষপথের আকার বদলের ফলে ক্রমেই উত্তাপ বাড়তে লাগত ওই এলাকার। কোনও মহাজাগতিক সংঘর্ষের ফলে সূর্যের সেই কক্ষপথ পাল্টে গিয়েছিল বলে বিজ্ঞানীদের ধারণা। আর তার ভয়াবহ প্রভাব পড়ল ওই সাহারার উপরে। কয়েকশো বছরের মাথায় শুকিয়ে গেল ওই বিশাল হ্রদ। জলহীন হয়ে পড়ল সমস্ত নদী। ক্রমে মরুভূমিতে পরিণত হল সবুজ সাহারা।
আরও শোনো: সময়ে-অসময়ে ভেসে আসে সুর, থেকে থেকে গান গেয়ে ওঠে ‘রহস্যময়’ সেতু!
বৃষ্টি ছেড়ে চলে গেল সাহারাকে। তার সঙ্গে সঙ্গে উঠে গেল সভ্যতাও। নীল নদ ধরে মিশরে এসে বসতি গড়ল মানুষ। আর সাহারা দাঁড়িয়ে রইল খাঁ খা বালিভর্তি প্রান্তর মাথায় করে। যেখানে মানুষ তো দূরের, একটা গাছ পর্যন্ত বাঁচে না। সেই গনগনে বালির তলায় আজও ঘুমিয়ে রয়েছে একটা গোটা সভ্যতার ধ্বংসাবশেষ। বিজ্ঞানীরা মাটির তলা থেকে বেশ কিছু কঙ্কাল, পশুদের হাড়, মানষের ব্যবহৃত আদিম যন্ত্রপাতি, বাসন ও ছবি আঁকা পাথর পেয়েছিলেন, যা প্রমাণ করে এককালে সেখানে জেগে ছিল মানবসভ্যতা। তবে সেসব আজ সবটাই অতীত। এখন ধূ ধূ মরুভূমি শুধু। সেই বৃষ্টিঅরণ্য হয়তো ঘুমিয়ে রয়েছে মাটির অনেক গভীরে, যেখানে হয়তো আজও মিলবে জলের খোঁজ। কে জানে!