পাঁচতারা, সাততারা হোটেলে থাকা তো অনেক হল। কিন্তু যাঁরা অবসরটা একেবারে অন্যরকম, অভিনব কিছু করে কাটাতে চান, তাদের জন্যই যেন এ হোটেল আদর্শ। বিলাসবহুল জাহাজের ক্রুজে থাকার অভিজ্ঞতা তো অনেকেরই আছে। সমু্দ্রের একেবারে বুকে চারদিকে যেদিকেই তাকাবেন শুধু জল আর জল। কিন্তু যদি এমনটা হয়, মেঘের পকেটে বসেই কাটল এবারের ছুটিটা। বিমানে যাতায়াত তো করেছেন, তবে এমন মহাশূন্যে ভাসমান বিলাসবহুল হোটেলে থেকেছেন কখনও? আর তেমনটাই সত্যি হতে চলেছে এবার। মহাশূন্যেই এবার কাটতে চলেছে আপনার বহুপ্রতীক্ষিত অবসর। আসুন, শুনে নেওয়া যাক।
জিম থেকে শুরু করে সুইমিং পুল, বিলাসবহুল হোটেলে যা যা থাকার প্রয়োজন, সবটাই মিলবে সেখানে। তবে পার্থক্য একটাই। পুরো ব্যাপারটাই ঘটবে মহাশূন্যে। অবাক হচ্ছেন নিশ্চয়ই। তা ব্যাপারটা তো অবাক করার মতোই। বিমানে যাতায়াত, সে সব ঠিক আছে। তাই বলে মহাশূন্যে ঝুলে থাকবে আস্ত একটা হোটেল, তাও আবার পাঁচ-সাত তারার সকল সুবিধা-সহ, তা আবার হয় নাকি?
কী ভাবছেন কোনও ‘সাইফাই’ সিনেমার গল্প বলছি। মোটেও না। বরং সেই অবিশ্বাস্য কাণ্ডটাই ঘটিয়ে ফেলেছেন ইয়েমেনের এক বিজ্ঞানী। হাশেম আল ঘাইলি নামে ওই বিজ্ঞানী সম্প্রতি ইউটিউবে সেই স্কাই ক্রুজ ভেসেল নিয়ে একটি ভিডিও আপলোড করেন, সেখানে দেখা যাচ্ছে, মেঘের চাদরে মোড়া আশ্চর্য সেই ভাসমান হোটেলটিকে। যা দেখে মুগ্ধ নেটিজেনরা।
আরও শুনুন: ঘরের ছাদ, দেওয়াল নেই… তবু হোটেল ভাড়া ২৬ হাজার টাকা, কেন জানেন?
টনি হোমস্টেন বলে এক বিজ্ঞানীর হাত ধরে শুরু হয়েছিল প্রথম ভাবনা। পরে অবশ্য সেটিকে রূপ দেন হাশেমই। জানা গিয়েছে, বিলাসবহুল ওই স্কাই ক্রুজে এক সঙ্গে থাকতে পারবেন অন্তত পাঁচ হাজার পর্যটক। রেস্তোঁরা, বার, স্পোর্টস সেন্টার থেকে সিনেমা, ছোটদের খেলার মাঠ থেকে শুরু করে গোটা একটা শপিং মল, উড়ন্ত সেই হোটেলে থাকবে সেসব কিছুই। নিশ্চয়ই ভাবছেন, এই যে এতকিছু নিয়ে আকাশে যে উড়তে থাকবে স্কাই ক্রুজটি, তার জন্য তো দরকার জ্বালানির। তা লাগাতার উড়তে থাকলে সঞ্চিত জ্বালানি তো নিমেষেই শেষ হয়ে যাবে। তখন উপায়?
হ্যাঁ, তার হালও ভেবে রেখেছেন বিজ্ঞানীরা। ওই বিশেষ স্কাই ক্রুজটি আদতে চলবে পারমাণবিক শক্তিতে। অন্তত ২০টি নিউক্লিয়ার ইঞ্জিন ব্যবহার করা হয়েছে ওই স্কাই ক্রুজটিতে। যা সেটিকে ভাসতে সাহায্য করবে মহাশূন্যে।
আরও শুনুন: কাশ্মীর সীমান্তে রমরমিয়ে চলছে সেনার ক্যাফে, রুটিরুজির সন্ধান পাচ্ছেন স্থানীয়রাও
বিনোদনের পাশাপাশি সেখানে থাকবে হাসপাতালের সুবিধাও। এমনকী প্রয়োজনে পর্যটকদের যাতে ওই স্কাই ক্রুজ থেকে অন্য বিমানে করে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া যায়, সেই ব্যবস্থাও রয়েছে সেখানে। বিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন, প্রয়োজন হলে ওই ভাসমান হোটেলটিকে যাতে মাঝআকাশেই সারানো যায়, সেই ব্যবস্থাও করেছেন বিজ্ঞানীরা। একই সঙ্গে এয়ারপকেটে পড়ে ঝাঁকুনি এড়াতেও বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে স্কাই ক্রুজটিতে। তার জন্য একটি বিশেষ এআই সিস্টেম বসিয়েছেন বিজ্ঞানীরা। সব মিলিয়ে সেই হোটেলে কোনও রকম ত্রুটি রাখতে চাননি হাশেমের দল।
ইউটিউবে হোটেলের নকশা দেখে মুগ্ধ নেটিজেনরা। তবে সমালোচনাও কম হয়নি। কেউ কেউ ব্যাপারটিকে কল্পনা বলে উড়িয়েও দিয়েছেন। এক নেটিজেন যেমন মজা করে বলেই ফেলেছেন, ‘পদার্থবিদ্যা আর এরোডায়নমিকসের অস্তিত্ব না থাকলে তবেই উড়বে এই স্কাই ক্রুজ।” সব মিলিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় মিশ্র প্রতিক্রিয়া পেয়েছে হাশেমের এই স্কাইক্রুজ। তবে সত্যি যদি কোনওদিন এই কাজ সফল হতে পারে, তবে মানুষের বেড়াতে যাওয়ার যে নতুন গন্তব্য খুলে যাবে, তা বলাই যায়।