বিড়ালের দ্বীপের কথা শুনেছেন। বাঁদরদের দ্বীপ, তাও শুনেছেন। তবে এমনও দ্বীপ রয়েছে, যেখানে রাজত্ব খরগোশদের। ছোট্ট, মিষ্টি আদুরে এই প্রাণীতেই ঠাসা রয়েছে ছোট্ট এই দ্বীপ। কোথায় রয়েছে এই আশ্চর্য জায়গা, আসুন শুনে নেওয়া যাক।
সবুজ ঘাসে ঢাকা ছোট্ট একফালি দ্বীপ। তেমন ভাবে দেখতে গেলে আড়াই মাইলের কিছু বেশি জায়গা। ইনল্যান্ড সমুদ্র ঘেঁষা এই দ্বীপটি দখলে রাখে একগুচ্ছ নরম বলের মতো, মিষ্টি, আদুরে প্রাণী।
জাপানের ইনল্যান্ড সমুদ্রঘেঁষা এই ছোট্ট দ্বীপের নাম ওকুনোশিমা। যেখানে রাজত্ব করে কয়েকশো ইউরোপিয়ান খরগোশ।
২০১৪ সালের পর থেকে জনপ্রিয় হতে শুরু করে এই দ্বীপ। একটা ভিডিও ছড়িয়ে পড়ার পর থেকেই এই জনপ্রিয়তা। কী ছিল সেই ভিডিওয়?এক মহিলা রীতিমতো খরগোশ চাপা পড়ে যান এই দ্বীপে এসে। সেই ভিডিও দারুণ ভাইরাল হয় সোশ্যাল মিডিয়ায়। তার পর থেকেই খরগোশপ্রিয়দের ভিড় জমতে থাকে এই দ্বীপে। যা এই দ্বীপবাসী খরগোশের কাছে মোটেও সুখকর হয়নি।
আরও শুনুন: মানুষ প্রায় নেই বললেই চলে! এই দ্বীপে বসবাস কয়েক হাজার বিড়ালের
কী ভাবে এই দ্বীপ খরগোশদের বাসস্থান হয়ে উঠল, তা কিন্তু আজও পরিষ্কার নয়। তবে মনে করা হয়, এর পিছনে লুকিয়ে রয়েছে একটি রহস্যময় ইতিহাসও। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ঠিক আগে আগে, ১৯২৯ সালের দিকে জাপান সরকার নাকি গোপনে একটি বিষাক্ত গ্যাসের পরীক্ষা করেছিল এই ওকিনোশিমা দ্বীপে। সে সময় স্থানীয়দের কাছে ‘পয়েজন গ্যাস আইল্যাল্ড’ বলে পরিচিত ছিল দ্বীপটি। ব্যাপারটির গোপনীয়তা বজায় রাখতে সে সময়ের মানচিত্র থেকেও মুছে ফেলা হয়েছিল দ্বীপটিকে। কথিত আছে, দ্বীপটিতে ওই রাসায়ণিক অস্ত্র পরীক্ষার জন্য আনা হয়েছিল খরগোশগুলিকে। অনেকে মনে করেন, ওই দ্বীপে যেসব খরগোশ রয়ে গিয়েছে, তারা সেদিনের সেসব খরগোশেরই বংশধর। অভিজ্ঞদের অবশ্য দাবি, ওই পরীক্ষা বন্ধ হয়ে যাওয়ার পরে মেরে ফেলা হয়েছিল দ্বীপের খরগোশগুলিতে। তবে সে কথা আদৌ কতটা সত্য বা কতটা মিথ্যে, জানা নেই।
আরও শুনুন: মানুষের প্রবেশ নিষেধ… শুধু বাঁদরদের জন্যই পৃথিবীতে আছে এক আশ্চর্য দ্বীপ
অনেকে আবার মনে করেন, এক ব্রিটিশ দম্পতির সঙ্গেই ওই দ্বীপে এসেছিল খরগোশেরা। ১৯৭১ সাল নাগাদ স্থানীয় কোনও একটি স্কুলের বাচ্চারা বেশ কয়েকটি খরগোশ ওই দ্বীপে ছেড়ে গিয়েছিল বলেও মনে করা হয়। ২০০৭ সালে তিনশোর কাছাকাছি খরগোশ বাস করত এই ওকিনোশিমা দ্বীপে। পরে সে সংখ্যাটা আরও বেড়েছে। এখন কম করে হলেও সাতশো থেকে হাজারটি খরগোশের বাস সে দ্বীপে। ২০১৫ সালে ক্যালিফর্নিয়ার একটি খরগোশ উদ্ধারকেন্দ্র থেকে একদল গবেষক ঘুরে দেখেন দ্বীপটি। সেখানকার লোকেদের জিজ্ঞাসাবাদ করে জানতে পারেন, ওই ভিডিয়ো ভাইরাল হওয়ার পর পর্যটকদের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে দ্বীপটি। ২০০৫ সালে ১ লক্ষ ৩৬ হাজার পর্যটক এসেছিল ওই দ্বীপে। ২০১৫ সালে সেই সংখ্যাটা আড়াই লক্ষ ছাড়িয়েছে। খরগোশ ছাড়াও ওই দ্বীপে রয়েছে একটি গল্ফ কোর্স ও একটি গ্যাস মিউজিয়ামও। তবে ওকিনোশিমা দ্বীপের মূল আকর্ষনই ওই খরগোশবাহিনী। মানুষ দেখলেই খাবারের লোভে ঔৎসুক হয়ে ওঠে তারা।