বই নকল হয়, সুর নকল হয়, যন্ত্রপাতিও নকল করে ফেলা যায় দিব্যি, তা বলে আস্ত একটা শহরকে নকল! না না, ওয়ার্ক এডুকেশনের ক্লাসে বানানো মডেল নয়। নকল করে বানানো শহরটাও নাকি আসলে একটা সত্যিকারের শহরই। কোথায় রয়েছে এমন আজব শহর? আসুন, শুনে নেওয়া যাক।
সেই কবে ‘আবোল তাবোল’-এর কবি সুকুমার রায় বলে গিয়েছিলেন, “এই দুনিয়ায় সকল ভাল/ আসল ভাল, নকল ভাল”। তা সত্যিই, এমনিতে তো দুনিয়া জুড়ে নকলের ছড়াছড়ি। এই যে ধরুন আমি আপনি, এই মানুষগুলো তো একরকম না একরকম ভাবে নকলই। প্রথম যে ছাঁচ গড়েছিল প্রকৃতি, তারপর থেকে তার আদলেই সেই দুটো হাত দুটো পা চোখ নাক মুখের কাঠামো গড়ে উঠছে বারবার। শুধু মানুষ কেন, একই প্রজাতির জীবজন্তু, পশুপাখি, গাছপালা, সবার ক্ষেত্রেই তো সেই একই কথা খাটে। কিন্তু সেখানে তো আসল নকল সবই প্রকৃতির খেলা। মানুষের ক্ষেত্রে তো একই নিয়ম চলে না। মানুষের যেহেতু একটা মস্তিষ্ক আছে আর সেটা যেহেতু সবার ক্ষেত্রে আলাদা আলাদা, ফলে একজনের মস্তিষ্কপ্রসূত জিনিসগুলো অন্য কেউ নকল করলে তাকে কুম্ভীলকবৃত্তির দায়ে পড়তে হয়। তবুও, নকলনবিশির খেলা থামেনি আজ পর্যন্ত।
আরও শুনুন: এক শহরের মালিক দুই দেশ! কোথায় রয়েছে এমন শহর?
সভ্য মানুষের দুনিয়ায় নকলের কথা যদি ওঠেই, তবে একটি দেশ বোধহয় নকলনবিশিতে সেরার শিরোপা পেতে পারে। মোবাইল ফোন থেকে শুরু করে যে কোনও যন্ত্রপাতির নকল মেলে সে দেশে, আর সেখান থেকেই রপ্তানির সূত্রে ছড়িয়ে পড়ে সারা পৃথিবীতে। ঠিকই ধরেছেন, হচ্ছে চিনের কথা। কিন্তু কেবল যন্ত্রপাতির নকল করেই তাদের কেরামতি ফুরিয়ে যায়নি। জানেন কি, একেবারে আস্ত একটা শহরই নকল করে ফেলেছে তারা?
আরও শুনুন: তিনি মেয়র, তিনিই নাগরিক… আশ্চর্য এই শহরের বাসিন্দা মাত্র একজনই
কী ভাবছেন, এমন আবার হয় নাকি? নকল শহর মানে কি আসলে কোনও খেলনা, বা শহরের মডেল? উঁহু, একেবারে বাস্তব দুনিয়ার সত্যিকারের শহর সেটি। কেবল তা গড়ে উঠেছে প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত অন্য দেশের একটি শহরের আদলে। চিনের বিখ্যাত শহর সাংহাই-এর থেকে ৩০ কিলোমিটার মতো দূরে অবস্থিত সংজিয়াং প্রদেশের এই শহরটি, যার নাম টেমস টাউন। নাম থেকেই স্পষ্ট, টেমস নদীর তীরবর্তী লন্ডন শহরই আদতে এই টেমস টাউন-এর অনুপ্রেরণা। ব্রিটিশ শহরগুলির ধাঁচেই তৈরি এই শহরের বাড়ি, রাস্তাঘাট, ভিক্টোরিয়ান টেরেস, কর্নার শপ, এমনকি লাল রঙের ঐতিহ্যবাহী টেলিফোন বক্সও। ব্রিটেনের স্থানীয় খাবারেরও হদিশ মেলে এই নকল শহরে। একেবারে ব্রিটেনের আদল নকল করেই যে এই টেমস টাউন তৈরি, তা বুঝতে ভুল হওয়ার কোনও জো নেই। দেশের সীমানা যেখানে কাঁটাতারের কড়া পাহারায় বাঁধা, সেখানে দেশের মধ্যেই ঢুকে পড়া অন্য দেশের একটুকরো যেন বুঝিয়ে দেয়, মিলেমিশে থাকাটা আসলে কঠিন কোনও কাজ নয়।