সামনেই বন্দুক হাতে দাঁড়িয়ে সাক্ষাৎ যম। প্রাণ বাঁচাতে বন্ধুদের রক্তের মধ্যেই মরার মতো শুয়ে রইল কিশোরী। আর সেই বুদ্ধির জন্যই বাবা-মায়ের কাছে ঘরে ফিরে যেতে পেরেছে টেক্সাসের ওই খুদে পড়ুয়া। শুনে নিন, তাঁর সেই ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতা।
বন্দুকবাজ বয়সে মাত্র কয়েক বছর বড় তাদের থেকে। ওই বয়সেই বইপত্তর ছুঁড়ে ফেলে হাতে তুলে নিয়েছে সে বন্দুক। টেক্সাসের এলিমেন্টারি স্কুলে এসে চালিয়েছে ধ্বংসলীলা। প্রাণ গিয়েছে অন্তত ১৯টি নিষ্পাপ শিশুর। যারা পড়াশোনা করবে বলেই স্কুলে এসেছিল।
সেদিনের ওই নিথর শিশুদের তালিকায় নাম থাকতে পারত বছর এগারোর মিয়াহ সেরিলোরও। যদি না ওই ভয়ঙ্কর পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে নিজের উপস্থিত বুদ্ধিটুকু ব্যবহার করত ওই খুদে।
আরও শুনুন: এক পায়েই যেত স্কুলে, কিশোরীর লড়াই দেখে আপ্লুত সোনু, আশ্বাস পাশে দাঁড়ানোর
পাশেই রক্তে লুটোপাটি খাচ্ছে সহপাঠীদের দেহ। নিথর দেহ পড়ে রয়েছে স্কুলের আন্টিদেরও। সামনে সাক্ষাৎ যমের মতোই দাঁড়িয়ে বন্দুকবাজ। যে কোনও মুহূর্তে বুক ফুঁড়ে দিতে পারে গুলি। পালিয়ে যাওয়ার পথ নেই কোনওদিকেই। বুদ্ধি করে ওই রক্তের ভাসা মাটিতেই শুয়ে পড়ে খুদে মিয়াহ। সারা শরীর ভিজিয়ে নেয় বন্ধুর রক্তে। তার পর পড়ে থাকে মৃতদেহের মতোই। সেই যেভাবে ভাল্লুকের সামনে নিঃশ্বাস বন্ধ করে মৃত সেজে শুয়ে থাকতে হয়, ঠিক তেমন ভাবেই।
সেদিন ডাক্তার দেখানোর দিন ছিল মিয়াহর। তাই আগে থেকেই একঘণ্টা দেরিতে আসার অনুমতি চেয়ে রেখেছিল সে স্কুলের থেকে। তবে সেই দিনটা যে ওই ভাবে বিভীষিকায় পাল্টে যাবে, তা কল্পনা করতে পারেনি মিয়া বা স্কুলের অন্য কেউই। মিয়ার মতোই একই রকম পন্থা অবলম্বন করে বন্দুকবাজের হাত থেকে বাঁচার চেষ্টা করেছিল তার আরেক বন্ধু। তবে সে যাত্রায় বন্দুকবাজের নিশানা থেকে বাঁচা হয়নি তাঁর। মিয়ার পাশেই মৃত্যুর কোলে লুটিয়ে পড়ে তার বন্ধুটি। সব মিলিয়ে গোটা ঘটনার ভয়াবহতা থেকে কিছুতেই বেরিয়ে আসতে পারছে না ছোট্ট মেয়েটা। তাঁর পরিবারের লোকেরা জানিয়েছেন, এখনও ট্রমার মধ্যে রয়েছে সে।
আরও শুনুন: দেশের অধিকাংশ পড়ুয়াকেই এখনও স্কুলে যেতে হয় পায়ে হেঁটে, জানাল সরকারি সমীক্ষা
হত্যালীলা চালানোর পরে পুলিশের গুলিতে মৃত্যু হয় ওই বন্দুকবাজেরও। তবে সব কিছুর শেষে একটা প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। এ নিয়ে চলতি বছরে ন-বার বন্দুকবাজের এমন হামলার শিকার হয়েছে আমেরিকা। এর আগেও একাধিক বার আমেরিকায় অস্ত্র আইনে কড়াকড়ির দাবিতে সরব হয়েছে নানা পক্ষ। তবে এই সমস্যা থেকে রেহাই মেলেনি আজও। কেন বছর আঠারোর একটি ছেলের হাতে উঠে আসবে বন্দুক। আর আপাতত সেই প্রশ্নটারই উত্তর খুঁজতে চাইছে বিশ্ব।