আগামীর দিনকে দিশা শেখায় শিক্ষা। সেই দিশার কাণ্ডারী একইসঙ্গে শিক্ষক ও পড়ুয়া। শিক্ষক দিবসের আবহে শুনে নেওয়া যাক এমনই দুই ঘটনার কথা, যা আগামীর কাছে আলো হয়ে জেগে থাকতে পারে।
যিনি শেখান আর যে শেখে, দুজনের মেলবন্ধনেই দিশা পায় আগামী। শিক্ষক আর পড়ুয়ার সম্পর্ক এমনই, যে, তা দেশ ও সমাজের ভবিষ্যৎকে পথ দেখায়। সেই পথের দিশা হয়ে থাকতে পারে এই দুই ঘটনা।
একটি ঘটনার কেন্দ্রে আছেন একজন শিক্ষিকা। তিনি এই বাংলারই মানুষ। রুনু মজুমদার বসাক দক্ষিণ দিনাজপুরের কাছে গঙ্গারামপুরের সরস্বতী শিশু মন্দিরে যখন যোগ দেন, সেটা ১৯৯৪ সাল। ৩০ বছর ধরে শিক্ষাদানের পর তিনি যখন অবসর নেন, সেই সময়ে দেখা যায়, বিগত ২২ বছরে একটি দিনও ছুটি নেননি তিনি। তিনি জানিয়েছিলেন, আসলে স্কুলের পড়ুয়া এবং সহকর্মীদের সঙ্গে সময় কাটানোটাই তাঁর কাছে সবচেয়ে কাঙ্ক্ষিত। সত্যি বলতে, শিক্ষকতা এমনই এক পেশা যা এক ধারাবাহিক অভ্যাস। তরুণ মনে নিয়ত জীবনবোধের শিক্ষা দিয়ে চলেন একজন শিক্ষক, আর সেই শিক্ষায় সত্যিই কোনও বিরাম থাকে না। নিজের যাপন দিয়ে সেই শিক্ষাই দিয়েছিলেন এই শিক্ষিকা।
আবার এই ধারাবাহিক শিক্ষার কথাই মনে রেখে অভিনব দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিলেন এক তরুণী। গুজরাটের হালধারু গ্রামের মেয়ে নিশাদবানু বাজিফধর যখন বিয়ের আসরে বসছেন, তখন তাঁর বয়স ২২ বছর। কৃষক পিতার মেয়ে এমসিএ পড়া শেষ করে একই গ্রামের রামিজ মহম্মদকে বিয়ের সিদ্ধান্ত নেন। বছর বাইশের তরুণীর মনে বিয়ে নিয়ে নানারকম আমোদ আহ্লাদের পরিকল্পনা থাকারই কথা। কিন্তু এই তরুণী হেঁটেছিলেন অন্য পথে। তিনি ঠিক করেন, খাবার, সাজসজ্জা বা অন্য আমোদপ্রমোদে বিপুল অর্থব্যয় করবেন না। বদলে বিয়ের আসরে তিনি আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন ৭৫ জন প্রাক্তন শিক্ষককে। নার্সারি থেকে এতদিনের পড়াশোনায় যাঁদের কাছে কোনও না কোনও পড়েছেন তিনি। সকল শিক্ষককে একটি করে স্মারক ও শাল দিয়ে সংবর্ধনা জানান ওই তরুণী। তিনি বলেন, তাঁদের গ্রামে শিক্ষার যে বিশেষ চল রয়েছে তা নয়। কিন্তু বাবার চাওয়া আর এই শিক্ষকদের সহায়তাই তাঁকে এতদূরে নিয়ে এসেছে। শিক্ষার এই আলো যাতে গ্রামে আরও ছড়িয়ে পড়ে, মানুষ যাতে উদ্বুদ্ধ হয়, সে কথা ভেবেই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন তিনি।
এই দুই ঘটনার স্থান, কাল, পাত্র আলাদা। কিন্তু দুটি ঘটনাই শিক্ষার সেই অন্তর্নিহিত সত্যকে তুলে ধরে, যে সত্য মানুষকে আলো দেখায়।