রাতের আঁধারে খুন হচ্ছেন একের পর এক ট্রাকচালক। সঙ্গে লোপাট ট্রাকের সব মালপত্রও। ন-বছরে ৩৩টি খুন, একই পদ্ধতিতে। তদন্তে নামল পুলিশ। কী হল তারপর?
একটানা আওয়াজ করে চলেছে সেলাই মেশিন। পায়ের ওঠাপড়ার ছন্দে তালে তালে ফোঁড় পড়ছে সুতোর। নিখুঁত সেলাই। আশপাশের সকলেই এককথায় স্বীকার করে, এই এলাকায় আদেশ খামরার মতো দরজি আর নেই। দিনের বেলাটায় তাই কাজের চাপে নিঃশ্বাস ফেলার সময়ই থাকে না। তবে রাতে তাড়াতাড়ি দোকান গুটিয়ে বাড়ির দিকে পা বাড়ান আদেশ। কিন্তু তারপর…
আরও শুনুন: পুলিশের ঘুম ছুটিয়েছিল কলকাতার প্রথম মহিলা সিরিয়াল কিলার
নাহ, তার পরের কথাটা কেউই জানতে পারেনি। না পাড়াপড়শি বা দোকানের খরিদ্দারেরা, না বাড়ির লোকজন। যতদিন না পুলিশের হাতে ধরা পড়েন ওই ব্যক্তি। আর তখনই প্রকাশ্যে আসে, দিনের বেলায় যিনি একজন ছাপোষা দরজি মাত্র, রাতের আঁধারে তিনিই নাকি এক নৃশংস সিরিয়াল কিলার। ঠান্ডা মাথায় যিনি একের পর এক খুন করতে পারেন। জানা যায়, একটি দুটি নয়, গুনে গুনে মোট ৩৩টি খুনের অভিযোগ ঝুলছে আদেশ খামরার নামে। হ্যাঁ, নয় বছরের মধ্যে এতজন মানুষকে নিজে হাতে হত্যা করেছেন ওই সাধারণ দরজি। যেমন দক্ষতায় কাপড় কাটতেন নির্দিষ্ট মাপে, তেমনই পাকা হাতের টানে এক-একজন মানুষের ভবলীলা সাঙ্গ করে দিয়েছেন তিনিই।
সিরিয়াল কিলারদের খুনের প্যাটার্ন এক হয়, এ কথা সকলেরই জানা। কিন্তু এক্ষেত্রে খুনের ভিকটিমরাও ছিলেন একই গোত্রের মানুষ। প্রত্যেকেই পেশায় ট্রাকচালক ছিলেন। ন’বছর ধরে ছয় রাজ্যে অপারেশন চালিয়ে ৩৩ জন ট্রাক ড্রাইভারকে খুন করে আদেশ খামরা ও তার গ্যাং। হ্যাঁ, দলের মাস্টারমাইন্ড হলেও, ওই ব্যক্তি একা খুন করত না। আসলে আর পাঁচজন সিরিয়াল কিলারের মতো কেবল খুন করার জন্যেই খুন করত না সে, লুঠপাট করাই ছিল তার আসল উদ্দেশ্য।
জানা যায়, হাইওয়ের ধারে ধাবাগুলিতে জাল বিছানো হত। সেখানেই ট্রাকচালকদের সঙ্গে আলাপচারিতার মাধ্যমে ঘনিষ্ঠতা বাড়িয়ে তুলত অভিযুক্তরা। এরপর ওই চালকের সঙ্গে ট্রাকে উঠে পড়ত আদেশ। পরিকল্পনামাফিক হাইওয়ের ধারে কোনও ফাঁকা জায়গায় অপেক্ষা করে থাকত দলের কিছু লোকজন। হাইওয়ে ধরে ট্রাক সেই জায়গায় পৌঁছতেই চালকের উপর হামলা চালাত আদেশ। চালককে খুন করতেই রাস্তা ফাঁকা। ট্রাকের মালপত্র লুঠ করে সেখানেই ট্রাকটিকে ফেলে রেখে আসত এই দল।
আরও শুনুন: কিশোরীদের রক্তে স্নান, ৬০০ জনকে খুন, কুখ্যাত মহিলা সিরিয়াল কিলারের রুদ্ধশ্বাস গল্প
মহারাষ্ট্র, মধ্যপ্রদেশ-সহ বেশ কয়েকটি রাজ্যে একের পর এক ট্রাকচালকদের খুনের ঘটনা কানে আসতেই নড়েচড়ে বসেছিল প্রশাসন। তদন্ত করতে নেমে দেখা যায়, দুই রাজ্যে যত ট্রাকচালক খুন হয়েছেন, খুনের ধরন সব এক। সেই সময়েই সিরিয়াল কিলিংয়ের ভাবনা উঁকি দিয়ে যায় পুলিশের মাথায়। তল্লাশিতে পাওয়া সব সূত্র জড়ো করে আদেশ খামরার চিহ্ন মেলে। তার উপর নির্ভর করেই ভোপালের মণ্ডিদীপে আদেশের এলাকায় পৌঁছে যান পুলিশ আধিকারিকেরা। জেরার চোটে শেষমেশ সব কথা স্বীকার করে আদেশ। শেষ পর্যন্ত ইতি পড়ে এক সিরিয়াল কিলারের কাহিনিতে।