সোশ্যাল মিডিয়ায় ইমোজির ব্যবহার বর্তমানে খুবই জনপ্রিয়। বিভিন্ন অভিব্যক্তি বোঝাতে আমরা এই সাংকেতিক ছবিগুলি ব্যবহার করে থাকি। তার মধ্যেই অন্যতম তিনটি বাঁদরের মুখ। বিশেষ ভঙ্গিতে থাকা এই তিন বাঁদর আসলে খারাপ জিনিস থেকে দূরে থাকার বার্তা দেয়। তবে ইতিহাস বলছে এদের উৎপত্তি নাকি বহু বছর আগেই হয়েছিল। বিভিন্ন প্রাচীন উপকথাতে সর্বাধিক জ্ঞানী বাঁদর হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে এঁদের। কী সেই ইতিহাস? আসুন, শুনে নেওয়া যাক।
বিবর্তনবাদ অনুসারে মানুষের পূর্বপুরুষ ছিল বানর। তাই বানরের মধ্যেও যথেষ্ট বুদ্ধিমত্তার প্রকাশ দেখা যায়। সেই বানরের হাত ধরেই মানুষ পৌঁছে যেতে পারে গভীর জীবনবোধে। প্রাচীন উপকথায় উল্লেখ রয়েছে, এমনই তিন বাঁদরের, যারা বানর জাতির মধ্যে সর্বাধিক জ্ঞানী বলেই বিবেচ্য। ‘দ্য থ্রি ওয়াইজ মাংকিজ’ বা তিন জ্ঞানী বানর নামে পরিচিত এই তিনটি বানর আসলে একটি জীবনদর্শনেরই বাহ্যিক প্রকাশ। সেই দর্শনটি হল, ‘খারাপ কিছু দেখো না, খারাপ কিছু শুনো না, খারাপ কিছু বোলো না’। বিভিন্ন বইতে বা দেওয়াল চিত্রে এই তিন বাঁদরের ছবি দেখা যায়। যেখানে তারা তিনরকমের ভঙ্গি করে খারাপ জিনিস থেকে দূরে থাকার বার্তা দেয়। কিন্তু এরা এল কোথা থেকে?
আরও শুনুন: চুরির অপরাধে কুকুর গ্রেপ্তার, গালাগালির জন্য বন্দি টিয়া! অদ্ভুত ঘটনায় গ্রেপ্তার হয়েছিল পশুপাখিরাও
শোনা যায়, বৌদ্ধ সন্ন্যাসী কনফুসিয়াসের রচনাবলিতে সর্বপ্রথম উল্লেখ পাওয়া গিয়েছিল এই তিন বানরের। জীবনে পালনীয় বিধির কথা জানাতে গিয়ে কনফুসিয়াসের রচনাবলির একটি অংশে রয়েছে,’যা সঙ্গত বা যথাযথ নয় এমন কিছু শুনো না, দেখো না, বোলোও না। অসঙ্গত এমন কোনও পদক্ষেপ কখনও কোরো না।’ সেই বার্তারই বাস্তব রূপ এই তিন বানর। এদের প্রচলিত ছবি বা মূর্তিগুলিতে দেখা যায় তিনজনেই হাঁটু মুড়ে বসে আছে। একজন দুই হাতে কান ঢাকা দিয়েছে, একজন হাত দিয়ে চেপে রেখেছে মুখ, আরেকজন দুই চোখের উপর দিয়েছে হাত চাপা। সেই অনুযায়ী এই তিন বানরের রয়েছে তিনটি ভিন্ন নামও। যে বানরটি খারাপ কিছু না দেখার বার্তা দেয় তার নাম ‘মিজারু’, যে বানরটি খারাপ কিছু না শোনার কথা বলছে সে হল ‘কিকাজারু’ আর শেষেরটি যে কিনা তার খারাপ কিছু বলবে না, সে হল ‘আইওয়াজারু’। এঁদের আসল উদ্দেশ্য জগতের খারাপ জিনিস, যা নিজেকেও প্রভাবিত করে, তা থেকে দূরে থাকার কথা মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়া।
আরও শুনুন: মেয়ে গেল কলেজে, ফেরার পথে হাপুস নয়নে কান্না বাবার, দেখে আপ্লুত নেটদুনিয়াও
সুপ্রাচীন বৌদ্ধ ধর্মগ্রন্থের পাশাপাশি বিভিন্ন জায়গায় এঁদের উল্লেখ মেলে। এমনকি স্বাধীনতা আন্দোলনের সময় গান্ধীজিও এই তিন বানরের প্রতীকী ছবিটির কথা উল্লেখ করতেন। দর্শন শাস্ত্রেও এই বানরের প্রসঙ্গ উল্লেখ করা হয়। বিভিন্ন দার্শনিকরা এঁদের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে সাধারণ মানুষকে জীবনের পাঠ দিয়েছেন। পরিবর্তনের ধারা মেনেই এই বানরের স্থান এখন মোবাইলের ইমোজিবক্সে। বর্তমানে অনেকেই ভিন্ন অর্থ বোঝাতে এঁদের ইমোজি ব্যবহার করে থাকেন, কিন্তু আসলে ডিজিটাল মাধ্যমেও সেই প্রাচীন দর্শনকেই বয়ে নিয়ে চলেছে এই তিন বানর।