চওড়া রাস্তা, রাস্তার দুপাশে অনেক বাড়িঘর, অফিস, দোকানপাট। সবই রয়েছে, অভাব কেবল একটি জিনিসের। তন্নতন্ন করে খুঁজেও গোটা শহরে দেখা মিলবে না একজন মানুষেরও। এ কি কোনও ভূতুড়ে শহর? আসুন, তাহলে শুনেই নেওয়া যাক।
আর পাঁচটা শহরে যা যা থাকে, সবই রয়েছে এখানে। শহর জুড়ে বিছিয়ে রয়েছে রাজপথ। তার পাশে পাশে চোখে পড়ে ইলেকট্রিক আলোর খুঁটি। বিদ্যুতের তারও চলে গিয়েছে মাথার উপর দিয়ে। এদিকে গোটা শহরে বাড়িঘরেরও অভাব নেই। কোনও কোনও বাড়ি দেখলে এ কথাও বোঝা যায় যে, এগুলি বাস করার জন্য বানানো হয়নি। কোনও দোকান কিংবা অফিস কাছারি হিসেবেই ব্যবহার করা হত এই বাড়িগুলিকে। বিজ্ঞাপন টাঙানোর প্রকাণ্ড সব বিলবোর্ড দেখলেও সে কথা আঁচ করতে অসুবিধা হয় না। তা ছাড়া স্কুল, খেলার মাঠ, কবরখানা, এমন প্রয়োজনীয় পরিকাঠামোর দেখাও মিলবে সেখানে। শুধু দেখা মিলবে না যার, তা হল মানুষ। সবরকম নাগরিক পরিকাঠামো থাকা সত্ত্বেও গোটা শহরে একটিও মানুষ খুঁজে পাওয়া যাবে না। দেখলে মনে হবে যেন পৃথিবীর বাইরে কোনও ভূতুড়ে শহরে এসে পড়েছেন আপনি। যেখানে কাতর প্রার্থনা করলেও শোনা যাবে না প্রাণের স্পন্দন। আর সেই কারণেই মৃত নগরীতে পর্যবসিত হয়েছে আমেরিকার আরিজোনা অঞ্চলের এই শহর। যার নাম সোয়ানসি।
আরও শুনুন: ২০০ বছর আগে রাতারাতি উধাও হয়ে যায় গ্রামবাসীরা! অভিশাপের জেরেই নাকি ভূতুড়ে এই গ্রাম
কিন্তু কেন একটি সাজানো গোছানো শহর এমন মৃত্যুর পথে এগিয়ে গেল? কী রহস্য রয়েছে এর নেপথ্যে?
আসলে জনশূন্য থাকাই বুঝি এ শহরের নিয়তি। গোটা আরিজোনাতেই একসময় মানুষের বসবাস ছিল কম। কিন্তু উনিশ শতকের শেষদিকে একাধিক গবেষণার সূত্রে জানা যায়, এখানেই লুকিয়ে আছে প্রকৃতির গুপ্তধনের ভাণ্ডার। কয়লা থেকে শুরু করে কোবাল্ট, তামা, সোনা-সহ একাধিক খনিজ দ্রব্যের সন্ধান মেলে এখানেই। আর, কোনও দেশের অর্থনীতিতে প্রাকৃতিক সম্পদের যে কী বিশাল ভূমিকা রয়েছে, তা তো বলার অপেক্ষা রাখে না। সেই কারণেই এই অঞ্চলে একাধিক খনি খোঁড়ার কাজ শুরু করে মার্কিন সরকার। খনির কাজে প্রয়োজন হয় বিপুল সংখ্যক শ্রমিকের। গড়ে ওঠে শহর।
আরও শুনুন: ৪০০ বছর ধরে সমুদ্রে ঘুরে চলেছে ভূতুড়ে জাহাজ! কী এই রহস্য?
কিন্তু এখান থেকেই বাধে গণ্ডগোল। প্রাথমিকভাবে শ-পাঁচেক লোক নিয়ে যে শহর গড়ে উঠেছিল, সেখানে কাজের খোঁজে আরও লোক ভিড় বাড়াতে থাকে। একসময় দেখা যায়, শহরে কাজের তুলনায় কর্মীর সংখ্যা বেশি। কাজ না পেয়ে আস্তে আস্তে শহর ছেড়ে অন্যত্র যেতে তাহকেন এই মানুষেরা। আর তার জেরে ফাঁকা হতে থাকে শহরও। ১৯১১ সালেই দেখা গিয়েছিল শহরের জনসংখ্যা প্রায় অর্ধেক কমে গিয়েছে। আর ১৯৪৩ সালে সোয়ানসির শেষ খনিটি বন্ধ হওয়ার পর কফিনে শেষ পেরেক পড়ে। শহর ছেড়ে অন্যত্র পাড়ি জমান বাকি মানুষেরাও। আর এই শহরের সঙ্গে পাকাপাকিভাবে জুড়ে যায় মৃত নগরীর তকমা।