মানুষের উপর বিরক্ত মানুষ। মানুষের অত্যাচারের প্রভাব পড়ছে প্রকৃতিতেও। বদলে যাচ্ছে পৃথিবী। এই অবস্থায় কি মানুষের বিপন্ন হওয়ার সম্ভাবনা আছে? বিজ্ঞানীরা বলছেন, ভবিষ্যতে পুরুষহীন হতে পারে পৃথিবী। তাহলে কি জন্ম নেবে নতুন প্রজাতি, নতুন মানুষ? সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। আসুন, শুনে নেওয়া যাক।
ভবিষ্যৎ দেখতে পান, জ্যোতিষীরা এমন দাবি করেই থাকেন। সুনামি, মহামারি, ভূমিকম্পের আগাম পূর্বাভাস দিয়েছেন, দাবির তালিকায় সবই থাকে। তবে এঁদের কেউই পুরুষশূন্য পৃথিবীর আশঙ্কা করেননি। এমনটা মনে করছেন বিজ্ঞানীরা। স্রেফ কথার কথা নয়, একেবারে যুক্তিপ্রমাণ সহ গবেষকরা জানাচ্ছেন, আগামী পৃথিবী পুরুষশূন্য হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল।
গর্ভে কন্যাসন্তান রয়েছে। আইনের চোখকে ফাঁকি দিয়ে আগেভাগেই তা জেনে ফেলেছেন পরিবারের সদস্যরা। জানা মাত্র শুরু হয়ে গিয়েছে হত্যার চক্রান্ত। যে শিশু পৃথিবীর আলো অবধি দেখেনি, সেই তাকেই মেরে ফেলার চক্রান্ত। শুধু তাই নয়, গর্ভে কন্যাসন্তান ধারণের অপরাধে অকথ্য অত্যাচার চলেছে মায়ের উপরও। কখনও সহ্য করতে না পেরে আত্মহত্যা করেছেন মা। চিরতরে শেষ হয়ে গিয়েছে দুটি প্রাণ। এক নয়, এমন ঘটনার সংখ্যা একাধিক। আইনের চোখে অপরাধ ঠিকই, ধরা পড়লে শাস্তি-জরিমানাও হয়, তাতেও অপরাধ কমে না। অথচ বিজ্ঞান বলছে, সন্তান পুত্র হবে না কন্যা তা নির্ভর করে পিতার উপর। পুরুষের ওয়াই ক্রোমোজোম-ই ঠিক করে সন্তানের লিঙ্গ। যদিও কন্যাভ্রূণ হত্যার মতো ভয়ঙ্কর অপরাধ যারা করেন, তারা বিজ্ঞানের এই ব্যাখ্যা জানেন না। জানলেও কতটা মানেন সে নিয়ে সন্দেহ আছে। কন্যাভ্রূণ হত্যার এই বাড়বাড়ন্ত দেখে অনেকেই আশঙ্কা করেন, সমাজে নারীর সংখ্যা কমবে। বাস্তবে তা হয় না বললেও ভুল হবে। বিবাহযোগ্যা কন্যার অভাবে আন্দোলনে নেমেছেন পুরুষরা, এই ঘটনাও এ দেশে দেখা যায়। তবে সাম্প্রতিক এক গবেষণা সম্পূর্ণ উলটো আশঙ্কার কথা শোনাচ্ছে। অর্থাৎ নারী নয়, সংখ্যা কমবে পুরুষদের। এমনকি একটা সময়ের পর একেবারে পুরুষশূন্য হয়ে যাবে পৃথিবী।
কিন্তু কীভাবে?
নেপথ্যে সেই বিজ্ঞানের ব্যাখ্যা। মানুষের দেহে প্রতি কোশে একজোড়া সেক্স ক্রোমোজম থাকে। নারী শরীরে দুটিই এক্স ক্রোমোজোম। পুরুষের শরীরে একটি এক্স অন্যটি ওয়াই। নারীর এক্স এর সঙ্গে পুরুষের ওয়াই জুড়লে পুত্র সন্তান। দুটি এক্স জুড়লে কন্যা। সুতরাং সন্তানের লিঙ্গ কী হবে, তা নির্ধারিত হয় ক্রোমোজোমের মাধ্যমেই। আর এখানেই অশনিসংকেত দেখছেন বিজ্ঞানীরা। প্রসিডিংস অফ দ্য ন্যাশনাল অ্যাকাডেমি অব সায়েন্স জার্নালে এই ওয়াই ক্রোমোজোমের সংকোচন নিয়ে একটি গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়। সেখানেই স্পষ্ট উল্লেখ রয়েছে, ধীরে ধীরে সংকুচিত হচ্ছে পুরুষের ওয়াই ক্রোমোজোম। আসলে এই ক্রোমোজোমের অন্দরে একাধিক জিন থাকে। ওয়াই ক্রোমোজোমের ক্ষেত্রে যে এই জিনের সংখ্যা কমছে। ধীরে ধীরে হলেও একসময় এই সংখ্যা সম্পূর্ণভাবে শেষ হওয়ার আশঙ্কা করছেন বিজ্ঞানীরা। গবেষকদের দাবি প্রতি ১০ লক্ষ বা ১ মিলিয়ন বছরে ৫ টি করে জিন নষ্ট হচ্ছে। বর্তমানে জিনের সংখ্যা ৫৫। যা আগামী ১১ মিলিয়ন বছরে শেষ হবে। সেইসময় পৃথিবীতে ওয়াই ক্রোমোজোমের অস্তিত্ব থাকবে না বলেই মনে করছেন বিজ্ঞানীরা। ফলত পুরুষের জন্ম নিয়েও বড় আশঙ্কা তৈরি হচ্ছে। যদিও বিজ্ঞানীরা মনে করছেন, প্রকৃতি এই বদলের সঙ্গে মানিয়ে নেবে। নতুন কোনও লিঙ্গ নির্ধারক ক্রোমোজোম তৈরি হতে পারে বলেও মনে করছেন বিজ্ঞানীরা। যা ওয়াই ক্রোমোজোমের রিপ্লেসমেন্ট হিসেবে কাজ করবে। হয়তো ভিন্ন প্রজাতির ‘মানুষ’ জন্ম নিতে পারে, এই সম্ভাবনার কথাও শোনাচ্ছেন বিজ্ঞানীরা। তবে সবটাই নির্ভর করছে সময়ের উপর। এর আগেও একাধিক প্রজাতি সম্পূর্ণ বিলুপ্ত হয়েছে। আগামী দিনেও হয়তো হবে। সেই তালিকায় পুরুষরাও জুড়তে পারেন, এমনটাই মনে করছে বিজ্ঞান মহল।